বাংলাদেশ

হাতের শিকড়মুক্ত বৃক্ষমানব আবুল

সেই আবুল বাজনদারের হাতে-পায়ে আর শিকড়ের মতো মাংসপিণ্ড নেই।

শনিবার দুপুরে চিকিৎসকরা তার দুই হাতের ব্যান্ডেজ খুলেছেন। হাতে মলম লাগিয়ে দিয়েছেন। তার ওপরে একটি সাদা কাপড় পেঁচিয়ে রাখা। কাপড় সরালে তার আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিক দেখা যায়। নখেরও অস্তিত্ব রয়েছে। রয়েছে শিকড়ের মতো মাংসপিণ্ড কেটে ফেলার চিহ্ন। তিনি আঙ্গুলগুলো নাড়াতে পারলেও ভাঁজ করতে পারছেন না।

শনিবার বিকেল ৫টা ৫০ মিনিট। একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোন রিসিভ করতেই অপরপ্রান্ত থেকে একজন বলছিলেন, ‘ভাই, আমি ঢাকা মেডিক্যাল থেকে আবুল বাজনদার। চিনতি পারছেন? আজ আমার হাতের ব্যান্ডেজ খুলেছে।’ খুবই উৎফুল্ল আর পুলকিতভাবে কথাগুলো বলছিলেন ‘ট্রি-ম্যান’ খ্যাত আবুল বাজনদার।

এরপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় আবুল বাজনদারের সঙ্গে। তিনি জানান, দুপুর ২টার দিকে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। ব্যান্ডেজ খুলে মলম লাগাতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লাগে। এরপর আবার তাকে বেডে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তার শুভাকাঙ্ক্ষী কাজী বাহারও ছিলেন। হাসপাতালে আসার পর থেকেই কাজী বাহার তার দেখভাল করছেন। নিজের আঙ্গুল দেখতে পেরে আবুল খুবই খুশি হয়েছেন। তাকে বার বার তার হাতের আঙ্গুলগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে দেখা যায়।

তিনি আরো জানান, চিকিৎসকরা যে মলম লাগিয়ে দিয়েছে, ওই মলম কিছুদিন লাগাতে হবে। তাহলে হাতের অবস্থা আরো ভাল হবে। এখন যে কালো কালো দেখা যাচ্ছে, এগুলোও থাকবে না।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন জানান, তার বাম হাতে আরো একবার অস্ত্রোপচার করতে হবে। ডান হাতটা ভালো আছে। দুই মাসের মধ্যে আবুলের হাত পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে বলে আশাবাদী ডা. সামন্তলাল সেন।

আবুলের হাতের ব্যান্ডেজ খুললেও পায়ের ব্যান্ডেজ খোলা হয়নি। হাতে অস্ত্রোপচারের অনেক পরে পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল।

 আবুলের স্ত্রী হালিমাও অনেক খুশি। তিনি বলেন, আজ এতো খুশি যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। বিয়ের পর এই প্রথম স্বামীর স্বাভাবিক হাত ও হাতের আঙ্গুল দেখলাম।

১০ বছর ধরে বিরল রোগে ভোগা আবুল বাজনদারকে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি ঢামেক হাসপাোলে ভর্তি করা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি তার ডান হাতে প্রথম দফায় অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে বাম হাত ও পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, আবুলকে আরো কয়েক মাস হাসপাতালে থাকতে হবে।



 এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি