বাংলাদেশ

দুদককে শক্তিশালী করতে টিআইবির ১১ সুপারিশ

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাতিষ্ঠানিক দূর্বলতা ও কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা দূর্বলতা কাটিয়ে উঠতে ১১ সুপারিশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

‘দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ উদ্যোগ: বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে ওই সুপারিশ করে সংস্থাটি। রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

১১ দফা সুপারিশ হলো- দুদকের কাজের পরিধি বৃদ্ধি করতে বাজেট বৃদ্ধি, দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বাড়ানো; অভিযোগ দাখিল ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন ও তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো; সাংগঠনিক কাঠামো ও জনবল বৃদ্ধির বিষয়ে পুনর্বিবেচনা;  দুর্নীতির মামলায় শাস্তির হার বাড়াতে ব্যবস্থা গ্রহণ (যেমন- তদন্ত ও মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে ঝুঁকি চিহ্নিত করা, মামলা দায়েরের পূর্বে প্রয়োজনবোধে আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করা, প্যানেলভুক্ত আইনজীবীদের সাথে নিয়মিতভাবে যোগাযোগ রক্ষা ও তদারকি করা); দুর্নীতিবাজদের সম্পদ পুনরুদ্ধারের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ; দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন, উন্নত ওয়েবসাইট চালু করা, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় ও সহযোগিতা বাড়ানো; জনগনের প্রতিনিধিত্বকারী স্বাধীন তদারকি ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ এবং বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করা।

২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়কালে টিআইবি এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করে। গবেষণা ফলাফলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আইনি স্বাধীনতা ও প্রতিরোধমূলক উদ্যোগসহ ২১টি নির্দেশকে দুদক-এর স্কোর উচ্চ পর্যায়ের হলেও ৪৯টির মধ্যে ১৯টিতে মধ্যম ও ৯টিতে নিম্ন পর্যায়ের।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গবেষণায় আইনি স্বাধীনতা ও অবস্থান; অর্থ ও মানবসম্পদ; অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম; প্রতিরোধ, শিক্ষামূলক ও আউটরিচ কার্যক্রম; অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা; জবাবদিহিতা ও তদারকি; দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে জনমত/জনগণের ধারণা- এই পৃথক ৭টি ক্ষেত্রের অধীনে ৫০টি নির্দেশকের ভিত্তিতে এই গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণায় স্কোর ৬৭ থেকে ১০০ শতাংশ হলে ‘উচ্চ’, ৩৪ শতাংশ থেকে ৬৬ হলে ‘মধ্যম’ এবং ৩৩ শতাংশের নিচে হলে ‘নিম্ন’।

গবেষণার পর্যালোচনা অনুযায়ী দুদকের স্কোর ৬১ দশমিক ২২ শতাংশ। যা ‘মধ্যম’ পর্যায়ের স্কোর। তবে গবেষণায় ‘দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণের ধারণা’ এই ক্ষেত্রটি সবচেয়ে কম স্কোর ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ পেয়েছে।

 গবেষণায় দেখা যায়, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের সদিচ্ছা, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে তদন্তের সদিচ্ছা ও সক্ষমতা; তদন্ত ও মামলায় আইনজীবী নিয়োগের ক্ষেত্রে বাজেটের অপ্রতুলতা; প্রতিরোধ কার্যক্রমে উন্নয়ন সহযোগীদের ওপর নির্ভরশীলতা; অভিযোগ দায়েরের ক্ষেত্রে অভিগম্যতা সহজ না হওয়া; তদন্ত ও প্রতিরোধ কার্যক্রমে অপ্রতুল/সীমিত দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব; দুর্নীতির মামলায় শাস্তির নিম্ন হার; জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী স্বাধীন তদারকি ব্যবস্থার অনুপস্থিতি; অন্যান্য শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের ঘাটতিসহ সার্বিক কার্যকারিতা নিয়ে জনগণের নেতিবাচক ধারণা ও অনাস্থার মত দুর্বলতা তুলে ধরে সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির চেয়ারপার্সন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘অনেক সফলতার পরও মানুষের মাঝে দুদকের আস্থা তৈরি করতে না পারাটা দুঃখজনক। মানুষের মাঝে এই আস্থা তৈরি করতে হবে যে, দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হবে।’

 ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গবেষণায় প্রতিফলিত ফলাফল অনুযায়ী দুদকের কার্যক্রম আশাব্যঞ্জক হলেও দুদকের বিদ্যমান দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে আরো কাজ করতে হবে। এমন কোন আইন প্রণয়ন করা যাবে না যাতে দুদকের বিদ্যমান স্বাধীনতা খর্ব হয়। পাশাপাশি দুদকের স্বাধীনতা সীমিত এমন ক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন করে অধিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। দুদক কতটুকু কার্যকর হতে পারছে তা নির্ভর করবে দেশের বিচারিক ব্যবস্থা কতটুকু স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তার ওপর।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র উপ-নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের ও গবেষক দলের প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. সালাহউদ্দিন এম. আমিনুজ্জামান।


 এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি