যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেসাই বিসওয়ালের সাম্প্রতিক সফর নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তির বিরোধিতার পরও মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ যদি স্বাধীন হতে পারে, তাহলে এখন কোনো একটি দেশকে পাশে না পেলেও বাংলাদেশের সমস্যা হবে না। আর কোনো বিষয়ে মতবিরোধ হলেই একটি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে বলেও তিনি মনে করেন না। গতকাল শুক্রবার অষ্টাদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ও মালয়েশিয়া সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে প্রধানমন্ত্রী এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘দুই আনার মন্ত্রী’ বলায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে বলে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এক সাংবাদিক। শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছেন, তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। কেউ যদি কোনো মতামত দিয়ে থাকেন তাহলে সে দায়িত্ব তার। তাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিলেন, আর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নির্দেশেই তা করা হয়েছিল বলে শোনা গেছে। আমাদের বিরম্নদ্ধে অপবাদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সারা বিশ্ব তন্ন তন্ন করে খুঁজেও প্রমাণ পায়নি। কোনো সমস্যা হলেই কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে বলে মনে করেন না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর একটা দেশ পাশে না থাকলে আমরা একেবারে শেষ হয়ে যাব? ... একাত্তরেও যুক্তরাষ্ট্র বিরম্নদ্ধে ছিল, বাংলাদেশ শেষ হয়ে যায়নি। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যাতে না হয় সেজন্য ‘সব রকম চেষ্টা’ যুক্তরাষ্ট্র করেছিল বলেও তিনি মমত্মব্য করেন। শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রেও বাংলাদেশের বন্ধু রয়েছে। তাদের সহযোগিতা বাংলাদেশ সব সময় পেয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যদি আমরা লড়াই করে টিকে থাকতে পারি তাহলে স্বাধীন দেশ হিসাবে এখনো পারব। প্রত্যেকটা নাগরিককে বলব, এটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। সে মর্যাদা নিয়ে চলতে হবে। কেউ পাশে থাকলে বাঁচব, না থাকলে মরে যাব, এটা ঠিক না। ভাল থাকলে বন্ধুর অভাব হবে না বলেও মমত্মব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যমত্ম স্বচ্ছ। এটা পূর্ব না পশ্চিম, উত্তর না দÿÿণ- তা আমি বিবেচনায় নিতে চাই না।... বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে কারো সাথে সম্পর্ক আরো গভীর করতে হয়, তা করব। কাউকে ছাড়া বাংলাদেশ চলতে পারবে না- এমন চিমত্মা ‘না থাকাই ভাল’ বলে মমত্মব্য করেন তিনি। ‘পাকিসত্মানের কাছে চাওয়ার কিছু নেই’ সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরে পরাজিত পাকিসত্মানের কাছে চাওয়ার কিছু নেই। এরপরও কোনো দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করা সমীচীন নয় বলেই তিনি মনে করেন। সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের সময় গত ২৬ নভেম্বর পাকিসত্মানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে এক সাংবাদিক জানতে চান, একাত্তরের ভূমিকার জন্য ÿমা না চাওয়া, আটকে পড়া, ÿতিপূরণ না দেওয়া, পাকিসত্মানিদের ফিরিয়ে না নেওয়া এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বিরূপ মমত্মব্যের কারণে ইসলামাবাদের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন করা হবে কি-না। উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালেই তাদের আমরা পরাজিত করেছি। তারা একটি পরাজিত শক্তি। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তারাই এখন জানতে চাইছে আমরা কীভাবে উন্নতি করছি। কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের প্রশ্ন নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারো সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করা সমীচীন নয়। সমস্যা থাকতে পারে, দ্বন্দ্ব চলতে পারে, পাশাপাশি আলোচনাও চলতে পারে। সেটাই নিয়ম। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর ওআইসি সম্মেলনে অংশগ্রহণের সময় বাংলাদেশকে পাকিসত্মানের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মধ্য দিয়ে পাকিসত্মান তাদের পরাজয় মেনে নিয়েছে, তেমনি বাংলাদেশের বিজয়কেও মেনে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব সময় আমি মনে রাখি আমরা বিজয়ী জাতি। সার্কে সে অনুযায়ীই আমি আচরণ করেছি। তাছাড়া সার্ক চার্টার অনুযায়ী এ ধরনের দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে কথা বলার সুযোগ নেই বলেও তিনি উলেস্নখ করেন।