বাংলাদেশ

সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য বিপন্ন !


​অয়েল ট্যাংকার দুর্ঘটনায় সুন্দরবনের বিশাল অঞ্চলজুড়ে পানিতে ছড়িয়ে পড়েছে জ্বালানি তেল। ইতোমধ্যে সুন্দরবন সংলগ্ন নদী, খাল এবং সমতল অংশে অর্থাৎ মাটিতে জ্বালানি ঢুকে পড়েছে। এতে করে ম্যানগ্রোভের শাঁসমূলসহ বিভিন্ন ধরনের জলজপ্রাণী দমবন্ধ হয়ে মারা পড়বে। কারণ জ্বালানি তেলের কারণে নদী-খালসহ সুন্দরবনের সমতল অংশে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে। এসব জলজপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে ডলফিনসহ মিঠা পানির কুমির, শুশুক, হাঙ্গর, কাঁকড়া, কচ্ছপ। এ ছাড়া এই পানি পান করে গোটা সুন্দরবনের প্রাণীকুলের জীবনও বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গত মঙ্গলবার ভোরে পূর্ব সুন্দরবনের মৃগমারী এলাকার শেলা নদীতে অয়েল ট্যাংকার দুর্ঘটনার কারণে জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞরা এ আশঙ্কার কথা জানান। দুর্ঘটনাকবলিত ট্যাংকারে তিন লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস তেল ছিল। আর পুরো দুর্ঘটনাস্থলটি ইরাবতী ডলফিনের অভয়াশ্রম।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: আবুল বাশার বলেন, কাছিম ও কাউঠা, সাপ, কুমির এবং টুয়াটারা সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীরা সুন্দরবনের সমতল অংশে ডিম পাড়ে, বংশ বিস্তার করে। এসব সরীসৃপ প্রাণীর ত্বকের বহির্ভাগ বহিস্থত্বকীয় আঁশে ঢাকা, যা ত্বককে আঘাত ও শুষ্কতা থেকে রা করে। এই জ্বালানি তেলের প্রলেপ এসব সরীসৃপের শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় আঘাত হানবে। ডিম নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে বংশ বিস্তার হবে না। ম্যানগ্রোভসহ গাছে শাঁসমূলগুলো অক্সিজেন নিতে পারবে না। মারা যাবে এসব ম্যানগ্রোভ, যার প্রতিক্রিয়া পুরো বনে দেখা দেবে।
এ দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক দীলিপ কুমার দত্ত বলেন, কোনোভাবেই এই জ্বালানি তেল প্রাকৃতিক উপায়ে সরবে না। অর্থাৎ জোয়ারভাটার কারণে যে জ্বালানি তেল সাগরে চলে যাবেÑ এমনটি এ ক্ষেত্রে হবে না। কারণ তেল সরে যাওয়ার কোনো পথ সুন্দরবনে নেই। আর তা ছাড়া ইতোমধ্যে এই তেল তো সুন্দরবনের খাল বিল সমতল অংশে ঢুকে গেছে। তিনি বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত এলাকাটি সুন্দরবনের বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতী ডলফিনসহ ছয় প্রজাতির ডলফিনের অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত। এতে এরা কী কী ধরনের ক্ষতির শিকার হচ্ছে তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করাই জরুরি এখন।

এ ব্যাপারে ড. আইনুন নিশাত বলেন, পানির ওপরে তেল দীর্ঘক্ষণ থাকলে তা একসময়ে ম্যানগ্রোভের শাঁসমূলে আঘাত হানবে। কারণ ম্যানগ্রোভের শাঁসমূল ুদ্র ুদ্র ছিদ্র দিয়ে বাতাস থেকে অক্সিজেন নেয়। ভাসমান তেল ম্যানগ্রোভের থাকা ছোট ছোট ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দেবে। তাই দীর্ঘক্ষণ তেলের আচ্ছাদন থাকলে ম্যানগ্রোভ দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে। একই সাথে এখন সেখানে অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে। ভাসমান তেলে অতিথি পাখি বিপর্যয়ের মুখে পড়বে, অসুস্থ হয়ে যাবে, বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে। তিনি বলেন, তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে স্থানটি এ বছরই ডলফিনের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আর ঠিক সেখানেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তাই ইরাবতীসহ তিন ধরনের ডলফিনের জন্য বিপর্যয় দেখা দেবে। ড. আইনুন নিশাত বিস্ময় প্রকাশ করে জানতে চান কী করে একটি অভয়ারণ্য এমনভাবে অরক্ষিত থাকে। কী করে এই স্থান দিয়ে এসব জাহাজ চলাচল করে। তিনি বলেন, এই বন রক্ষায় কোটি কোটি টাকা খরচ করার কথা শোনা গেছে। এমন দুর্ঘটনা যে ঘটবে তা কি তারা ধারণা করতে পারেনি। তিনি বলেন, অবশ্যই এই দুর্ঘটনা ইরাবতী ডলফিনের অভয়াশ্রমে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো ‘বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান’ হিসেবে এই বনকে চিহ্নিত করেছে।