কলাম

হাজারো আবেগ, মহিমা, আক্ষেপের অবসান, আমারও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন

দিনটি ৯ ফেব্রুয়ারি, রবিবার। বাঙালি জাতির জন্য এই মাসটি এমনিতেই আবেগের। সেই আবেগের মাসে অন্যরকম এক ইতিহাস গড়ার মন্ত্র নিয়ে বিশ্বকাপের মত বড় কোন আসরের এই ফাইনালের প্রথমবার আকবর বাহিনী। দেশ এবং প্রবাসে ক্রিকেটপ্রেমী কোটি মানুষের উৎকণ্ঠা মাঠে এবং টিভি সেটের সামনে। পারবে কি বাংলাদেশ? কারণ একটাই অনেকবার এই ক্রিকেট মাঠে ভারতের সাথে ফাইনালে ইতিহাস রচিত হয়নি তবে ঝরেছে চোখের জল। তবে এবার এসেছে বিশ্ব জয়ের আনন্দ অশ্রু।

হ্যাঁ শেষ পর্যন্ত নিরাশ করেনি বাংলাদেশ। রুদ্ধশ্বাস, শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে সেই ভারতকে হারিয়ে রূপকথার গল্প বানিয়ে ইতিহাস গড়েছে আকবর-শরীফুলরা। বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতেছে, করেছে বিশ্বজয়। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতে নিল বাংলাদেশের যুবারা। যেকোনো ধরনের ক্রিকেটে এবারই প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলো টাইগাররা।

টাইগারের গর্জনে কম্পিত পুরো বিশ্ব। সিনিয়রা যখন একের পর এক ব্যর্থতার গল্প রচিত করছে সেখানে জুনিয়রা অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করেছে। এই প্রাপ্তি যে কত আবেগের, কত মহিমার, কত আক্ষেপের অবসান তা শুধু আমারই জানি। আজ আমরাও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।

বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে এমন টিম স্পিরিট, টেম্পার, ম্যাচের লাগাম শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা, ক্যাপ্টন নক এর আগে কখনই দেখেনি।

এর জন্য বিসিবি একটি বড় ধন্যবাদও পেতে পারে। কারণ গত দুই বছর ধরে দেশ এবং দেশের বাইরে প্রায় ৩০ টি ম্যাচ খেলিয়েছে জুনিয়রদের। আর এই সব গল্পের পেছনে যারা কাজ করেন তারা হলো কোচিং স্টাফ। তবে এবার একজনের নাম না বললেই নয়।

আকবরদের সাফল্যের পেছনে এই মানুষটির অবদান অনিস্বীকার্য। এমন কোচ, একজন শিক্ষক, একজন বন্ধু থাকলে পরিশ্রম বিফলে যাবে না। বিশ্বকাপ ট্রফি অর্জনের কারিগর এই রিচার্ড স্টোনিয়ার(কন্ডিশনিং কোচ)। এই বিশ্বকাপে যুবারা যতগুলো ম্যাচ খেলেছে তার পেছনে ইতিহাস গড়ার মূল উজ্জীবিত মানুষটি সত্যি অসাধরণ। প্র্যাকটিস, ম্যাচের আগে টিম স্পিরিট, প্রতিপক্ষকে হারানোর সব মন্ত্র এমনকি মাঠে সর্বদা মানসিক চাপ দূরে রাখার সব কাজটি উনি করেছেন।

রিচার্ডকে হতাশ করেনি আকবররা। দিনশেষে এই অর্জনের ভাগিদার আপনিও। রিচার্ড আপনাকে অসংখ্য শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।

বিশ্বকাপ জিতে গেছে যুবারা। তবে এই বিশ্বজয়ের উল্টো চিত্রও ঘটছে পাকিস্তানে। যুবারা যা করেছে সেই জায়গায় অনেক ঘাটতি আছে সিনিয়রদের তা আজ স্পষ্ট। হয়তো আকবররা বয়সে তরুণ কিন্তু কাজটি করেছে সিনিয়রদের মেজাজে। যেটি তামিম-মুমিনুলরা করতে ব্যর্থ। জুনিয়ররা দেখিয়ে দিল কিভাবে বিশ্ব জয় করতে হয়। আকবর বুঝিয়ে দিল কিভাবে ক্যাপ্টন নক খেলতে হয়। শরীফুল-রকিবুলরা দেখিয়ে দিল কিভাবে একজন বোলার বোলিং, ফিল্ডিং, ব্যাটিং করতে হয়।

শেখার শেষ নেই, সে ছোট অথবা বড় হোক। যাদের হাত ধরে আজ ইতিহাস রচিত হয়েছে তাদের বিশ্বজয়ের অনুপ্রেরণায় এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।

"আবারো অভিনন্দন আকবর-শরীফুল তোমাদের"


লেখক: সাংবাদিক, সম্পাদক