কলাম

যেভাবে করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখবেন

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকরী লকডাউন প্রত্যাহার করা হচ্ছে । ইতিহাসের পাতায় একদিন লিখা থাকবে যে বিশ্ব নেতাদের কাছে সামান্য কাগজের টাকার সামনে মানুষের অমূল্য জীবন মূল্যহীন বস্তুতে রূপান্তরিত হয়েছিলো । তবে আপনি যদি সমাজতন্ত্রের আদর্শে বিশ্বাসী দেশগুলার দিকে একবার তাকান তাহলে তারা কিন্তু অধিকাংশই ভাইরাসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে শতভাগ সফলতা অর্জন করে আবার অনান্য দেশকেও তাদের দেশের মেডিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছে । যেমন তাইওয়ান হংকং কিউবা ভিয়েতনাম সহ আরো অনেকেই আছে । এদিক থেকে ক্যাপিটালিজমে বিশ্বাসী দক্ষিণ কোরিয়া কিংবা স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলের স্বর্গরাজ্য নিউজল্যান্ড কিন্তু সফলতা অর্জন করে সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছে কারণ তারা মানুষের জীবনের মূল্যায়ন করতে জানে ।

এইটা একটা ফ্যাক্ট যে আপনি আপনার দেশের নাগরিকদের কিভাবে দেখছেন বা তাদের সুরক্ষা ব্যবস্থা কিভাবে নিশ্চিত করতে পারছেন । তাই যেহেতু আমরা এখন এতটা সৌভাগ্যবান না সেহেতু আমাদের নিজ নিজ জীবন এবং পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নিজেদেরই দায়িত্ব নিতে হবে । কারণ মনে রাখবেন আপনি মারা গেলে সেটা সরকারি হিসাবে একটা সংখ্যা মাত্র কিন্তু নিজ পরিবার এবং প্রিয়জনের কাছে একটা পৃথিবীর সমান । এদিকে বাংলাদেশের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিনের ভাইরোলজিস্ট ডা. জামালউদ্দিন জানিয়েছেন যে করোনা ভাইরাস তার জিনগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে শক্তি বাড়াচ্ছে ।

এখানে উল্লেখ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জন হপকিন্স ভার্সিটির গবেষণা মোতাবেক ভাইরাসটিতে এই পর্যন্ত 5 টা জিনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে যেখানে আগের চেয়ে ওআরএফ 1 এবি জিনের আধিক্য লক্ষণীয় বলে তিনি জানিয়েছেন যেটা হচ্ছে সবচেয়ে ভয়াবহ । তাই আমাদের এখন থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে । কিন্তু আমরা অধিকাংশ সবাই একটা বিশেষ ভুল বারবার করে যাচ্ছি । আর সেটা হচ্ছে আমরা মাস্ক তো পড়ছি নাক এবং মুখ সুরক্ষিত রাখতে কিন্তু আপনার চোখ ? আপনারা কি জানেন না যে বিশ্বের সব গবেষকরা বারবার বলে যাচ্ছেন যে প্রতিনিয়ত ক্ষার জাতীয় সাবান দিয়ে হাত ধৌত করার পাশাপাশি আপনার নাক মুখ আর চোখ কে সুরক্ষিত রাখতে হবে ? কারণ করোনা ভাইরাস মানব দেহে শুধুমাত্র নাক মুখ ও চোখ দিয়েই প্রবেশ করার ক্ষমতা রাখে । তাই বাইরে বের হলে আপনার চোখ কে সর্বোচ্চ সুরক্ষা দিতে ছবি সংবলিত গগলস কিংবা ফেস শিল্ড ব্যবহার করুন । যারা চোখের সমস্যার জন্য পাওয়ার গ্লাস ব্যবহার করেন তারা গগলস না নিয়ে ফেস শিল্ড ব্যবহার করবেন । আর বাকিরা ফেস মাস্কের সাথে গগলস ব্যবহার করবেন । এইসব গগলস কিংবা ফেস শিল্ড বাইরে থেকে এসে ক্ষার জাতীয় ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করে নিবেন না হয় বাসার বারান্দায় রোদ্রে ঘন্টাখানেক রেখে দিলে সূর্য রশ্মিতে অটোমেটিক জীবাণু মুক্ত হয়ে যাবে । এইসব ফেস শিল্ড ও গগলস আপনারা অনলাইনে অর্ডার করে সংগ্রহ করতে পারেন অথবা বিভিন্ন মেডিক্যাল বা সার্জিক্যাল স্টোরে খোজ করলেই পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ । তবে যারা আর্থিক সমস্যার কারণে কিনতে পারবেন না তারা চোখের সাথে টাইট ভাবে ফিট থাকে ধূলাবালি ময়লা প্রবেশ করতে পারে না এমন সানগ্লাস ব্যবহার করতে পারেন । তাছাড়া আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখবেন যে আপনি যদি সাধারণ কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করেন তাহলে কিন্তু করোনা ভাইরাসের জীবাণু প্রতিহত করা সম্ভব না । এর জন্য আপনাকে একমাত্র সার্জিক্যাল মাস্ক বা এন95 ব্যবহার করতে হবে ।

যাইহোক ফেস শিল্ড গগলস মাস্ক এইসব পড়ে বাইরে চলাফেরা করলে আপনাকে অদ্ভুত দেখাবে হয়তো মানুষ আপনাকে নিয়ে হাসাহাসিও করতে পারে কারণ আমাদের সমাজের একটাই কাজ যে মানুষ নিয়ে তামাশা করা । কিন্তু আপনারা এসব মানুষদের কেয়ার করবেন না । আপনার অসাবধানতার কারণে যদি আপনার বা আপনার পরিবারের সদস্যদের কিছু হয়ে যায় মনে রাখবেন এদের একজন মানুষকেও আপনার পাশে পাবেন না । এবার আপনাদের সবার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জন হপকিন্স ভার্সিটির বিশ্ব সেরা গবেষকদের সমস্ত দিক নির্দেশনার লিস্ট করে দিচ্ছি যেটা অনুসরণ করলে ইনশাআল্লাহ আপনারা পরিবার পরিজন নিয়ে ভাইরাস হতে সুরক্ষিত থাকতে পারবেন।
# মাস্ক গ্লাভস এবং গগলস বা ফেস শিল্ড দিয়ে চোখ পরিপূর্ণ কাভার করে এমন চশমা বা সানগ্লাস পড়ে বাজার করতে যান ৷ মহিলারা মাথায় ওড়না বা স্কার্ফ ব্যবহার করবেন আর পুরুষরা পারলে মাথায় টুপি পড়তে পারেন ৷ কারণ চুল থেকেও ভাইরাস সংক্রমিত হয় । যেমন ধরুন মেয়েদের চুল তো স্বাভাবিক ভাবেই বড় লম্বা হয়ে থাকে আর অনেক ছেলে আছে যারা চুল বড় রাখতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন । এখন বাইরে বের হলে আপনাদের খোলা চুলের উপর বাতাসে ভেসে থাকা ভাইরাস এসে যদি পড়ে যায় এবং সেই চুল খোলা থাকলে নিশ্চয়ই আপনার চোখে মুখে নাকের সংস্পর্শে আসবেই আসবে । তখনই ভাইরাস আপনার নাক মুখ চোখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে । তাই চুল বেধে বা ঢেকে বাইরে চলাফেরা করতে হবে সবাইকে

# আপনার ব্যবহৃত জুতা বা স্যান্ডেল অবশ্যই দরজার বাইরে খুলে বাসায় ঢুকবেন ।।

# বাসায় এসে বাজারের ব্যাগ বা প্যাকেট অন্য কাউকে ধরতে দেবেন না ৷ যিনি আনবেন তিনিই সাবধানে সব কিছু ঠিকঠাক সংরক্ষণের কাজ করবেন ৷।

# ডিম এবং ফলমূল ক্ষার জাতীয় সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুতে হবে ৷ যেসব ফল বা শাক সবজি সাবান দিয়ে ধোয়া সম্ভব না সেগুলো হালকা গরম পানিতে ভিনেগার অথবা লবন দিয়ে আধা ঘন্টা ডুবিয়ে রাখতে হবে ৷।

# যেসব প্যাকেটের ভেতর ফয়েল প্যাকেট থাকে যেমন গুড়াদুধ চা কফি বা বিস্কুট ইত্যাদির বাইরের কাগজ প্লাস্টিকের প্যাকেট ফেলে দেবেন ৷।

# কিছু শাকসব্জি যেসব সাবান দিয়ে ধোয়া সম্ভব না সেসব বারান্দা বা অন্য কোন জায়গায় ২৪ ঘন্টা রেখে দেবেন ৷ রোদে রাখতে পারলে আরো বেশি ভালো কারণ সূর্য রশ্মি জীবাণু ধবংস করে । আর যেসব জিনিস সাথে সাথে ব্যবহার করতে হবে সেসব ভিনেগার বা লবন মিশ্রিত কুসুম গরম পানিতে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে তারপর ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে ৷।

# মাছ মাংশ উপরোক্ত একই নিয়মে ভালো মতন ধুয়ে ডিপ ফ্রিজে রেখে দেবেন ৷।

# এসব ধোয়ার সময়ও গ্লাভস পরাই থাকবে ৷ সেসময় যদি চোখ চুলকায় বা মাথা চুলকায় তাহলে অন্য কারো সাহায্য নেবেন কিন্তু নিজের হাত বা কনুই ব্যবহার করবেন না ৷ সাহায্যকারীও এরপর হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন ।।

# খাবার-দাবার ছাড়া অন্যান্য সকল প্রয়োজনীয় জিনিষ যেমন সাবান শ্যাম্পু রেজর ওয়াশিং পাউডার ইত্যাদি এক থেকে দুইদিন আলাদা জায়গায় প্যাকেট সহই রেখে দিন ।৷

# সবকিছু হয়ে গেলে পরিহিত Dress বা জামা কাপড় খুলে তারপর গ্লাভস খুলে সেসব খুলে ফেলা ড্রেস সাবান বা খার জাতীয় ডিটারজেন্ট পানিতে চুবিয়ে তারপর হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিবেন ৷ কিন্তু বেটার অপশন হচ্ছে সাথে সাথে ভালো ভাবে গোসল করে নিতে হবে ৷ তারপর নতুন পোশাক পরবেন ৷ এর জন্য বাইরে যাওয়ার পূর্বে আগে থেকেই বাথরুমে এইসব কিছু রেডি করে রাখবেন ।।

# সমস্ত রকম রান্নাই যেন বেশী সময় ধরে উচ্চ তাপে ভালোভাবে রান্না করা হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন ৷ কারণ উচ্চ তাপে জীবাণু মরতে সাহায্য করে ।।

# হাতের নখ ছোট রাখবেন Specially মেয়েরা । কারণ ভাইরাস নখের ভেতর থেকে যায় যা সাবানে যায়না ।।

# মানিব্যাগ চশমা মোবাইল বাইরে থেকে এসে Antiseptic Solution বা Sanitizer দিয়ে ভালো ভাবে মুছে নিবেন ৷ কারণ বাজারের পাশাপাশি টাকা এবং মোবাইলে সবচাইতে বেশি ভাইরাস সংক্রমণ ঘটাচ্ছে তাই সাবধান সবাই । আর মাস্ক সংকট থাকলে ব্যবহার করা মাস্ক রোদে রেখে দিন যাতে জীবাণু মরতে পারে ।।

# ঘর মুছতে 20 লিটার পানিতে 1 টেবিল চামচ ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করুন । তবে বাসায় যদি মুরব্বী মানুষ ছোটো বাচ্চা বা এজমা সহ এলার্জির রোগী থাকে তাহলে এই ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত উপাদান ব্যবহার করবেন না । কারণ এই পাউডার এমন কিছু ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে যা Respiratory Syndrome সরাসরি ইফেক্ট করে মানুষের জীবন হুমকির সম্মুখীন করতে পারে । এইজন্য বেটার অপশন হিসাবে বাজারে যেসব ক্লিনার রয়েছে সেসব ব্যবহার করলেই হবে ।।

# প্রতিদিন আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা জিম বা ইয়োগা করবেন নিয়মিত । কারণ বাসায় বসে থাকলে আপনার শরীরের সমস্ত অর্গানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হয়ে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করতে পারে । তাই জিম ইয়োগা করে শরীরের অর্গান স্বাভাবিক রাখুন সুস্থতার জন্য ।।

# প্রতিদিন কমপক্ষে আট ঘন্টা ঘুমাবেন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্রেশ ওয়াটার খাবেন । বেটার দেশে ভাইরাস অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাসায় পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে ছাকনী দিয়ে ছেকে জল পান করুন । ডাক্তার এবং গবেষকদের মতে এইটা এখন সর্বোচ্চ নিরাপদ পন্থা জল পান করার । কারণ এই মুহূর্তে বাইরের যেকোনো পানিই নিরাপদ না মানুষের জন্য । তবে মিনারেল ওয়াটারে সমস্যা নাই ।।

# আপাতত ভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মার্কেট থেকে নতুন জামা কাপড় কসমেটিকস কেনা হতে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন । এবং বিয়ে শাদি জন্মদিন পার্টি করা সহ যেকোনো জনসমাগম অনুষ্ঠান বর্জন করুন ।।

# অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন সবসময় । কারন আপনি জানেন না যে আপনার পাশের মানুষটা ভাইরাসের আক্রান্ত কিনা সো বোকার মতন রিস্ক নিবেন না । বাইরে একে অন্যের থেকে কমপক্ষে ছয় ফিট দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করবেন । এইসব ভুল করেও অবহেলা করবেন না । আপনার সামান্য অবহেলা সারাজীবনের কান্নার কারণ হতে পারে এই মূহুর্তে।
পরিশেষে কিছু কথা বলে শেষ করতে চাই । বিশ্বখ্যাত শীর্ষ ধনীদের মাঝে অন্যতম আলীবাবা'র প্রতিষ্ঠান জ্যাক মা বলেছেন যে " আপনি যদি বানরের সামনে একটি কলা এবং কিছু টাকা রাখেন তাহলে বানর নি:সন্দেহে কলাটাই বেছে নেবে কারণ বানর জানেনা যে টাকা দিয়ে অনেক কলা কেনা সম্ভব । বাস্তবিক অর্থে আপনি যদি টাকা এবং স্বাস্থ্য এ দুইটা'কে মানুষের সামনে রাখেন তাহলে মানুষ টাকা'কেই বেচে নেবে কারণ মানুষ জানেনা যে স্বাস্থ্য অনেক টাকা এবং সুখ বয়ে নিয়ে আসতে পারে ।। " তাই সিদ্ধান্তটা আপনাদের । জীবিত থাকলে বহু অর্থ সম্পদ উপার্জন করতে পারবেন । কিন্তু জীবনের ঝুকি নিয়ে অর্থ উপার্জন করতে যেয়ে জান হারালে পৃথিবী থেকে শূন্য হাতে প্রস্থান করতে হবে । আমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিশেষ একটা অনুরোধ রাখতে চাই । দয়াকরে আপনারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল কলেজ ভার্সিটি মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষার্থীদের জীবন হুমকির মুখে ফেলে অপেন করে দিবেন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত । কারণ সম্প্রতি ফ্রান্স এই বোকামি করতে যেয়ে একদিনে 70 জন শিশু আক্রান্ত হওয়ার পর আবার সাথে সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব বন্ধ করে দিয়েছে । এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে সর্বোচ্চ শিক্ষার্থীদের পড়ালেখাতে ব্রেক হবে সেসন লস হবে যেটা পরিবর্তিতে রিকভার করা সম্ভব কিন্তু একবার কারোর জীবন চলে গেলে সেটা আর রিকভার করা সম্ভব না । আজ যে চীন বিশ্ব অর্থনীতিতে রাজ করছে তারা আশির দশকের পূর্বে বাংলাদেশের চাইতে ভঙ্গুর অবস্থার মাঝে ছিলো । আশির দশকের পর সে দেশের সমাজতান্ত্রীক সরকার অর্থনৈতিক বিস্ফোরণ সৃষ্টি করলেন । কিভাবে জানেন ? একটা দেশের জনসংখ্যা সে দেশের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তির চাবিকাঠি যদি আপনি সঠিক ভাবে তার ব্যবহার করতে জানেন । চীন সরকার আশির দশক থেকে দীর্ঘ বারো বছর সে দেশের সকল অনার্স মাস্টার্স মানে স্নাতক স্তরের পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছিলো । কারণ চীন সরকার তার জনগনকে বলেছিলো যে তারা এত ডিগ্রি অর্জন করে কি করবে ? দেশে তো কর্মসংস্থান নাই যে তারা এই পড়ালেখাতে তাদের শ্রম মেধা সময় আর অর্থ ইনভেস্ট করে অর্থ উপার্জন করতে পারবে তাই না ? এইজন্য তিনি শিক্ষার্থীদের সমস্ত শ্রম মেধা সময় এবং অর্থ ইনভেস্ট করে পারিবারিক ভাবে নিজ নিজ বাসায় যে যার মেধা অনুযায়ী শিল্প অথবা প্রডাক্ট উৎপাদন করতে বললেন যেটা চীন সরকার নিজ দায়িত্বে বিশ্ব বাজারে বিক্রি করার ব্যবস্থা করবেন । তারপর বাকিটা এখন ইতিহাস । চীনের অর্থনীতি এবং উদ্ভাবনী সক্ষমতার দিকে সারা বিশ্বের সব রাষ্ট্ররা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে । মাত্র এক যুগ তারা স্নাতক পড়াশোনা বন্ধ রেখে নিজের দেশের চেহারা পাল্টে দিয়েছিলো । সেখানে আমাদের বর্তমান অবস্থা নিশ্চয়ই তাদের আশির দশকের চাইতে কম না । আমরাও অর্থনৈতিক ভাবে ব্যাপক একটা বিস্ফোরণ ঘটানোর পজিশনে আছি এখন । কিছুদিন কেনো বছর খানেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখলেও তেমন কিছুই যায় আসবে না বর্তমান পরিস্থিতিতে । এমনিতেই কয়েক কোটি বেকার জনগোষ্ঠী রয়েছে আমাদের দেশে এবং করোনা মহামারীতে আরো 23 শতাংশ মানুষ তাদের কর্ম হারিয়েছে ।

এমন অবস্থায় কেউ তাদের জীবন হুমকির সম্মুখীন করে ডিগ্রি অর্জন করে দেশের কোথায় কি করতে পারবে ? আমার কথা হচ্ছে এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে দেশের অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না । কিন্তু দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের এসব মেধাবী শিক্ষার্থীদের কিছু হয়ে গেলে সেটা নিশ্চিত ভবিষ্যত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে । এদিকে বিশ্ব অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে করোনা মহামারীর কারণে সারা পৃথিবীতে প্রায় 200 কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে যাবে । তাই এখন থেকেই সব দেশের উচিত তাদের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে কিভাবে ভবিষ্যত অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগানো যায় তার বিশেষ ভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা । করোনা পরিবর্তি পৃথিবীতে আপনাদের টিকে থাকতে হলে কাজ নিয়ে লজ্জা করা যাবে না । আর অভিভাবকদের বলবো যে আপনার সন্তানের জীবন হুমকির সম্মুখীন করে এই মূহুর্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে কি অর্জন করতে পারবেন ? একটা সার্টিফিকেট ? কি কাজে আসবে এই সার্টিফিকেট বর্তমান পরিস্থিতিতে ? কিছুই না নিশ্চয়ই । তবে আপনার সন্তান সুরক্ষিত থাকলে বেচে থাকলে কিন্তু কিছুদিন পরে এই একই সার্টিফিকেট অর্জন করে অনেক কিছুই করতে পারবে ইনশাআল্লাহ । জীবন বিপন্ন করে শিক্ষা অর্জন করতে যাবেন না । জীবনের মূল্যায়ন করতে শিখুন সবাই । আর করোনা ভাইরাসকে ভয় করে সতর্কতা অবলম্বন করুন সবাই । কারণ যার চিকিৎসা নাই সেটাকে ভয় করাই বুদ্ধিমানের কাজ । চিকিৎসা আজ অথবা কাল অবশ্যই আবিষ্কার হবে । কারণ পবিত্র আল কোরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন যে তিনি পৃথিবীতে এমন কোনো রোগ দেন নাই যার চিকিৎসা দেন নাই । তাই আপনারা সবাই যার যার বিশ্বাসের স্থান হতে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করুন সমাধানের জন্য । এবং প্রকৃতিকে সময় দিন নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে । কারণ প্রকৃতি না বাচলে মানুষ বাচবে না । পরিবেশ বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে এই করোনা ভাইরাসই পৃথিবীর জন্য শেষ বিপর্যয় নয় । এখনই যদি বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন না করা যায় তাহলে পরিবেশ আরো অনেক জীবাণু উগলানো শুরু করবে পৃথিবীর জন্য যেটার পরিনতি আরো ভয়াবহ হতে পারে । পরিবেশ প্রকৃতি গাছপালার কাজ হচ্ছে পৃথিবীর সব জীবাণু শোষন করে মানুষের বেচে থাকার জন্য ফ্রেশ অক্সিজেন সরবরাহ করা । অথচ আমরা এই মানবজাতি আজ এতটাই বোকা এবং নির্বোধ অধম হয়ে গেছি যে সামান্য কিছু টাকার লোভে গাছপালা বন জঙ্গল উজার করে কেটে বিক্রি করে নিজেদের জীবন নিজেরাই ধবংস করে দিচ্ছি । যার কারণে ফ্রেশ অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাচ্ছে আর প্রকৃতি বিষাক্ত জীবাণু শোষন করতে পারছে না এবং আমরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে নিজেদের চিকিৎসার পেছনে লাখ লাখ টাকা খরচ করে দিচ্ছি বাচার জন্য আশ্চর্য্য ফিলোসফি আমাদের তাই না ? আমার পক্ষে সম্ভব হলে বাংলাদেশ সহ সারা পৃথিবীতে গাছ কাটার জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধান করতাম । কারণ শুধুমাত্র প্রকৃতি ধবংস করার জন্য কোটি কোটি মানুষের জীবন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত । আপনি কিউবা'তে যান সেখানে সরকারি পারমিশন ছাড়া গাছ কাটলে জেল জরিমানা সহ উভয়  শাস্তির বিধান রয়েছে । যার কারণে তাদের দেশের মানুষের অসুস্থতা কম ও দীর্ঘজীবী হয় সবাই । শুধু ল্যাটিন আমেরিকার কিউবা না বিশ্বের বহু দেশেই গাছ কাটার জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে । আমি চাই বিশ্বের সব দেশেই পৃথিবী রক্ষার জন্য গাছ কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার আইন প্রণয়ন করা হোক কঠোর শাস্তির বিধান বাস্তবায়ন করে । সবাই “গাছ লাগান - মানুষ বাচান”।