কলাম

চন্দ্র সূর্য বিজয়ে এত আগ্রহী কেন মদিজী, চলুন একটু খতিয়ে দেখি

বিজেপির শাসনামলে সারা ভারত জুড়ে ধর্মীয় জাতিগত সহিংসতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে! কাশ্মীর থেকে কেরালা, মনিপুর থেকে জয়পুর, কোথাও বাদ যাচ্ছেনা ধর্মীয় বিভাজনের হিংস্র ছোবল থেকে! শুধু মুসলমানরাই নয়, ধর্মীয় সহিংসতা থেকে রেহাই পাচ্ছেনা শিখ, খৃষ্টান ও অসংখ্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সম্প্রদায়ও! গত কয়েকমাস ধরে জাতিগত সহিংসতায় মনিপুরে শতশত মানুষ নিহত হচ্ছে! জ্বলেপুড়ে ছারখার হচ্ছে মনিপুর, অথচ মোদিজী মুখে টু-শব্দটিও করছেন না! উল্টো অভ্যন্তরীণ নানান ইস্যুতে জাতিগত বিভাজনকে আরো উসকে দিচ্ছেন বিজেপির কট্টর নেতারা!   মোদির ভারতের জাতিগত সহিংসতার বহু সংবাদ বহুবার আন্তর্জাতিক সংবাদের শিরোনাম হয়েছে৷ নিন্দার তুফান উঠেছে অনেকবার৷ ইউরোপ আমেরিকার মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে মোদির শাসনে মানবাধিকারের এই দুরবস্থার দিকে৷ মোদ্দাকথা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভারতের অসাম্প্রদায়িকতার মুখোশ মুখথুবড়ে পরেছে!   জাতিগত সহিংসতার পরে নরেন্দ্র মোদি সরকারকে সবচেয়ে বড় চুবানিটা দিচ্ছে চায়না৷ সম্প্রতি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং নিজেই স্বীকার করেছেন- চিন লাদাখে ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখলে নিয়েছে। পূর্ব লাদাখের প্যাংগং লেকের ওপর চীন যে সেতুটি নির্মাণ করছে, সেটাও দখলকৃত ভারতের জায়গার ওপর। মোদি সরকার দীর্ঘদিন থেকে ইহা অস্বীকার করে আসলেও সম্প্রতি রাহুল গান্ধী লাদাখের প্যাংগং লেক সফরে গেলে এই দখলদারিত্ব স্পষ্ট হয়ে যায়৷   এছাড়াও গেল সপ্তাহে চিন তাদের নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে যেখানে ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটারের  মনিপুরকে চিনা ভূখণ্ডের অংশ দেখানো হয়েছে৷   যাকগে! ইন্ডিয়া এখন চন্দ্র বিজয়ের গর্বিত সদস্য৷ সূর্য বিজয়ের'ও গর্বিত সদস্য হতে যাচ্ছে! এই বিজয়ে তাদের বেনিফিট কি? এখনো তাদের গড় ইনকাম 2079 মার্কিন ডলার, যা মুদ্রাস্ফীতির হিসেবে মোটেই বাড়েনি৷   ইন্ডিয়ার গড় আয়ু আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়েও দুই বছর নীচে! যেখানে বাংলাদেশের গড় আয়ু ৭৪.২৯ , মালদ্বীপের গড় আয়ু ৭৭, সেখানে ইন্ডিয়ার গড় আয়ু ৬৯.৭! ইন্ডিয়াতে আন্তর্জাতিক মানের একটা হস্পিটাল নেই! যদিও ভেলোর কিম্বা মাদ্রাজে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা থেকে কিছু মানুষ চিকিৎসা নিতে যায়৷ এমনকি স্বাস্থ্যসেবায় তারা নেপাল ভূটান শ্রীলঙ্কার চেয়েও পিছিয়ে! স্বাস্থ্যসেবায় পর্যাপ্ত গবেষণা ফান্ড নেই, কিন্তু তাহারা চন্দ্র সূর্য বিজয়ে ভীষণ আগ্রহী!   বিশ্বের টপ ১০০ ইউনিভার্সিটির ভেতরে ইন্ডিয়ার একটা ইউনিভার্সিটি নেই! আন্তর্জাতিক মানের একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই! স্বাস্থ খাতের মত শিক্ষাখাতের গবেষণাতেও নেই পর্যাপ্ত বাজেট!   সর্বোপরি, বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে (গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স বা জিএইচআই)  বিশ্বের ১২১টি দেশের মধ্যে ভারত রয়েছে ১০৭তম স্থানে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান তো বটেই, এমনকি দারিদ্রপীড়িত মিয়ানমারেরও নীচে। অথচ তারাই কিনা চন্দ্রসূর্য গ্রহ নক্ষত্র বিজয়ে ভীষণ আগ্রহী! মোদিজী একজন ত্যাগী মানুষ, তাই সূর্যের কক্ষপথে স্যাটেলাইট পাঠিয়ে তিনি বোধহয় দেখতে চাচ্ছেন খোলা আকাশের নিচে মলমূত্রত্যাগের স্যাটেলাইট ভিউজ কত সুন্দর দেখায়!   সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বেশ কিছু রাজ্যসভার নির্বাচনের ফলাফলে এটাই প্রতীয়মাণ হচ্ছে, বিজেপির জনপ্রিয়তার পারদ নিম্নমুখী! আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো বিজেপির বিরুদ্ধে একাট্টা হয়ে মাঠে নামার দিকে এগুচ্ছে৷ ক্ষমতা হারানোর প্রবল শঙ্কা বিজেপিকে তাড়িত করছে৷   ইমেইজ সংকটে পরা নেতারা হারানো ইমেইজ পুনরুদ্ধারে কিছু চমকপ্রদ পদক্ষেপ গ্রহণ করে৷ নরেন্দ্র মোদির চন্দ্রসূর্য বিজয় এই ইমেইজ পুনরুদ্ধারের অংশমাত্র৷ এর মাধ্যমে ভারতীয়দের মনে এই ধারণা দেয়া যে, মোদির বিজেপি ভারতকে ইতিহাসের এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে৷ পাশাপাশি অনেকদিন পরে একটা পজিটিভ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার আনুকূল্য লাভ করলো, ভারত আজ মহাকাশ বিজয়ের গর্বিত সদস্য৷   অরুন্ধতী রায়ের মত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কোনো মানবাধিকার কর্মী একসময় হয়ত আওয়াজ তুলবে, ‘ইয়ে আজাদী ঝুটা হে, লাখো ইনসান ভুখা হে।'