কলাম

ছাত্রের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় প্রথম বর্ষটি

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অন্তিম সময়ে এসে আমার অভিজ্ঞতা আমাকে বলছে যে একজন ছাত্রের জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো প্রথম বর্ষটি। গ্রাম-গ্রামান্তর থেকে একটি ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে তার মেধার সাক্ষর রেখে। 

বিশেষ কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে ক্লাসের সেরা মেধাবীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় আবাস গড়ার সুযোগ পায়। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাদের অধিকাংশই আসে মধ্যবিত্ত কিংবা নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আসার প্রথম দিনটি থেকে প্রত্যেকটি ছেলের নতুন আশা আর বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে শুরু হয় এক নতুন পথ চলার। 

প্রথম বর্ষের প্রতিটি ছাত্র কাঁদা মাটির মতো নরম। এদের যেভাবে গড়া হবে এরা ঠিক সেভাবেই গড়ে উঠবে। কিছুদিন আগে ডাসের সামনে কয়েকজন প্রথম বর্ষের জুনিয়রদের কফি খেতে দেখলাম। কফি খাওয়ার পরে টাকা না দিয়েই চলে যাচ্ছিল দেখে ডাক দিয়ে পরিচয় জিজ্ঞেস করলাম। ওরা পরিচয় দিল। বললাম টাকা না দিয়ে কেন যাচ্ছো। উত্তরে বললো ওদের নাকি কে বলেছে যে ডাসে ফ্রী কফি খেলে সমস্যা নেই। আমি ওদের বুঝিয়ে বলে ভুলটা ভাঙিয়ে দিলাম। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছেলেটে এসেছে তার নিজস্ব বিচার বিবেচনা নিশ্চয়ই রয়েছে। ওদেরকে বুঝিয়ে বললে ওরা অবশ্যই বুঝবে। সিনিয়র হিসেবে দায়িত্বটা আমাদেরই বেশি। ওদের বোঝানো উচিৎ যে ক্যাম্পাসে কি কিরা উচিৎ আর কি করা উচিৎ নয়। 

আমরা ওদের যা শিখাবো ওদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ভিত্তি কিন্তু ঠিক সে ভাবেই গড়ে উঠবে। পারিবারিক বদ্ধ পরিবেশ থেকে মুক্ত পরিবেশে এসে প্রথম বর্ষের অনেক ছেলে নিজেদের ধরে রাখতে পারে না। সাময়িক উত্তেজনায় অনেক সময় বিচার বিবেচনা ওদের লোপ পায়। বিপত্তিটা ঠিক তখনই ঘটে। 

ওদের খামখেয়ালী এবং উদাসীন চলাফেরা যদি সিনিয়র হিসেবে আপনি আমি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি তাহলে একদিন এই খামখেয়ালী কাজ গুলোই নিজের অজান্তেই প্রত্যহ অপরাধে পরিণত হবে। তখন এই দায় কে নিবে ???? প্রথম বর্ষের ছেলেটি যা শিখে দ্বিতীয় বর্ষে উঠবে তখন তার প্রথম বর্ষের ছোট ভাইটি সে যা শিখেছে তাই ই শিখবে। 

এরপর দেখবেন আস্তে আস্তে প্রথম বর্ষ থেকে শেষ বর্ষ পর্যন্ত সবাই ই নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করবে। অন্যায় এবং অপরাধ যদি নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তাহলে তার মূলে হাত না দিয়ে যতোই উপরে ঠিক করার চেষ্টা করুন না কেন আপনার চেষ্টা ফলপ্রসূ হবে না। 

আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম থেকে ব্যক্তিগত রূম, হলের ক্যান্টিন থেকে ক্যাম্পাস ক্যান্টিন প্রত্যেকটি যায়গা থেকে শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যেটি প্রয়োজন তা হলো আমরা যারা সিনিয়র তাদের আন্তরিকতা এবং যারা জুনিয়র তাদের আগ্রহ।
আসিফ তালুকদারসাধারণ সম্পাদক, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।