করোনা কর্ণার

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শিশুরা কি নিরাপদ


এখনো পর্যন্ত পাওয়া বিভিন্ন গবেষণা ও সমীক্ষা বলছে, প্রাণঘাতী কভিড-১৯ (করোনাভাইরাসে) যে সকল বয়সের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে শিশুরা। নতুন এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ও মৃতদের মধ্যে দুই দিক থেকেই নিরাপদ শিশুরা। 


সম্প্রতি প্রযুক্তি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের করা এক টুইটে বলা হয়, নতুন এই করোনাভাইরাসে সংক্রমণের দিক থেকে শিশুরা ‘অপরিহার্যভাবে নিরাপদ’। অবশ্য তার এই টুইট নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে তার এই বিবৃতিতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বয়স্ক ও বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় থাকা মানুষের জন্য যে, আক্রমণাত্মক ও বিপদজ্জনক তা আবারো নিশ্চিত হয়। 

তাসত্ত্বেও এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয় কিছু শিশু বা তরুণ। আর এই কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয় স্কুল, কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাদেরকেও মানতে হচ্ছে সামাজিক দুরত্বের মতো নির্দেশিকা। শিশুদের ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ও তাদের সুরক্ষা নিয়ে অভিভাবকরা চিন্তিত হচ্ছে। 

শিশুরা কি সত্যি সত্যি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে?          

হা। শিশুরাও প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। এবং তা যে কোন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মতো সমান হারেই হচ্ছে। নতুন এই ভাইরাসটিতে শিশুদের সংক্রমণের সাম্প্রতিক তথ্য/উপাত্ত অন্তত তাই বলে। শুরুতে শিশুদের ভাইরাসটিতে আক্রান্তের খুব একটা ঝুঁকি ছিল না। কিন্তু এখন এই সংক্রমণ অনেকটাই খারাপের দিকে যাচ্ছে। সেইসাথে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ভাইরাসটিতে শিশুদের সংক্রমণ প্রাপ্ত বয়স্কদের সমান। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে এমন তথ্য জানান, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পেডিয়াট্রিক ইনফেকশন এন্ড ইমিউনিটি’র অধ্যাপক এনড্রিউ পোলার্ড। তিনি বলেন, “এখানে বিষয়টি হল যখন শিশুরা আক্রান্ত হয়, তখন তাদের মধ্যে খুব মৃদু লক্ষণ/উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়। 

ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ৭২ হাজার ৩১৪ জন আক্রান্তের উপাত্ত নিয়ে গবেষণা করে চীন। ‘চাইনিজ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন’ এর করা এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয় গত ফেরুয়ারি মাসের ২০ তারিখ। দেশটি তাদের নিজেদের জন্য এই বিশাল গবেষণা করেন। সেখানে ১৯ বৎসরের নিচে আক্রান্তের হারের কথা ২ শতাংশের নিচে। আর ৫০৮ জন 
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী নিয়ে গবেষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের গবেষণা ফলাফলে, ভাইরাসটিতে শিশুদের আক্রান্তের হার ধরা হয় শূন্য। 

এই বিষয়ে সাউদাম্পটন শিশু হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনফেকশন ডিজিজ কনসাল্টেন্ট সঞ্জয় প্যাটেল বলেন, শুরুতে ভাইরাসটির সংক্রমণ বিস্তৃত হয় প্রাপ্ত বয়স্কদের। এর কারণ হিসেবে প্রাপ্তবয়স্কদের কর্মক্ষেত্র ও বাইরে যাতায়াতের বিষয়টি উল্লেখ করেন এই সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ। সেইসাথে যোগ করে বলেন, এ সমস্ত প্রাপ্ত বয়স্করা এখন পরিবারে সবচেয়ে বেশি সময় কাটাচ্ছে। ফলে এভাবে শিশুরা এখন সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হচ্ছে। যেমনটা হচ্ছে না প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে। 

প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে শিশুদের করোনাভাইরাস সংক্রমণ কেন ভিন্ন?      

প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে শিশুদের প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সংক্রমণ কেন ভিন্ন এই বিষয়ে অক্সফোর্ড ভ্যাক্সিন গ্রুপের হেড পোলার্ড জানান, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ভাইরাসটিতে সংক্রমণের বিভিন্ন উপসর্গ/লক্ষণ দেখা যায়। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত এই সংক্রমণের কোন লক্ষণ ধরা যায় না। খুবই মৃদু কিছু উপসর্গ পরিলক্ষিত হয় তাদের মধ্যে। 

এই বিষয়ে তিনি বেলজিয়াম, লন্ডনের ১২ ও ১৩ বৎসর বয়স্ক দুটি শিশু মৃত্যুর উল্লেখ করেন। যা ইউরোপের জন্য সবচেয়ে বেদনাদায়ক। সেইসাথে ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়ে ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সীর মৃত্যু। অবশ্য ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনেও ১৪ বৎসরের একজন শিশু মারা যায়।     

এখন শিশুদের সংক্রমণ হার প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে বেশি কেন? 

যুক্তরাজ্যের নিউপোর্টে ডেভিড হাইড অ্যাজমা ও অ্যালার্জি গবেষণা কেন্দ্রেরও পরিচালক রবার্টস জানান, ভাইরাসটি এতোটাই নতুন আমরা এই বিষয়ে এখনো খুব ভালো করে কিছু জানি না।

তিনি বলেন, এর অনেকগুলো কারণের একটি হতে পারে প্রোটিন সেল। কারণ ভাইরাসটি সংক্রমিত বা কোন পোষক দেহে প্রবেশের জন্য এই প্রোটিন সেল দরকার হয়। তাছাড়া, ভাইরাসটি রিসেপ্টর হিসেবে খুব সম্ভবত অ্যাঞ্জিওটেনসিন রূপান্তর কারী এনজাইম ২ (এসিই-২) ব্যবহার করে থাকে। হয়তো শিশুদের ক্ষেত্রে এই এনজাইম ২ (এসিই-২) এর পরিমাণ কম। যে কারণে সংক্রমণের হার বেশি। 

/এলএ বাংলা টাইমস/