বর্তমানে চালের বাজার পুরোটাই প্রতারণামূলক বলে মনে করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। তিনি বলেছেন, যে চালের নাম বস্তা বা ব্যাগের গায়ে লেখা থাকে, ভেতরে সে চাল থাকে না। মোটা চাল স্বর্ণাকে চার দফায় কেটে চিকন এবং চকচকে করে পুষ্পমতি নামে বিক্রি করা হয়। চিকন করার এ প্রক্রিয়ায় যে অপচয় হয়, তার মূল্যও ভোক্তার ঘাড়ে চাপানো হয়। পুষ্টিমানও কমে চালের। এতে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। যে জাতের চাল, সে নামেই বিক্রি করতে হবে। এ ধরনের বাজার ব্যবস্থাপনায় ব্যাপকভিত্তিক সংস্কারের প্রয়োজন।
গতকাল মঙ্গলবার ডিজেএফবি উন্নয়ন সংলাপে এসব কথা বলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী। রাজধানীর পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সংলাপের আয়োজন করে উন্নয়নবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি)।
চালের বাজার ছাড়াও অন্যান্য পণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনার সমালোচনা করেন ড. শামসুল আলম। বিভিন্ন প্রসাধনীর দাম এক বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়েছে। সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বিভিন্ন প্রসাধনীর বাজার গোষ্ঠীগত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এসব পণ্যের বাজার পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক নয়। এই বাজার কাঠামোর সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নজরদারি বাড়ানো উচিত।
সংলাপের শুরুতে অর্থনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে নিজস্ব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী। এরপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি গত বছরের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা বড় চ্যালেঞ্জ। আমদানিজনিত এই মূল্যস্ফীতি শিগগিরই আগের অবস্থায় ফিরবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এ জন্য বাজার ব্যবস্থাপনা সংস্কারে হাত দিতে হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াতে আইএমএফের কোনো শর্ত নেই। কিছু পরামর্শ আছে। ভর্তুকি কমাতে আইএমএফের পরামর্শ না থাকলেও গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হতো। কারণ রাজস্ব আহরণ কম থাকার কারণে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিকল্প ছিল না। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ওপর আস্থাশীল হয়েই যা চাওয়া হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে আইএমএফ। অনেক দেশ চেয়েও ঋণ পায়নি। আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ দিতে পেরে খুশি।
বিদেশি ঋণ গ্রহণ এবং কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ড. শামসুল আলম বলেন, উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় এখন ঋণের প্রয়োজন রয়েছে। তবে ঋণ নিতে হবে হিসাব করে এবং ব্যবহার হতে হবে সঠিক। কৃচ্ছ্রতার অংশ হিসেবে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর এখন সীমিত। বিদেশি সহায়তা পাওয়া গেলে বিদেশ সফরের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ভালো অবস্থানে থাকলেও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দুর্বলতা ও সমস্যা রয়ে গেছে। তিনি বলেন, 'সমস্যা আছে বলেই তো সবার দাবি- সুশাসন চাই। সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানই আছে, যেখানে সুশাসনের অভাব রয়েছে। তবে তার অর্থ এই নয়, সব প্রতিষ্ঠানে সুশাসন নেই।'
পাইপলাইনে ৪৮ বিলিয়ন ডলারেরর বিদেশি সহায়তার অর্থ পড়ে থাকা সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ জন্য অর্থ ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা কাটাতে হবে। এ বিষয়ে কাজ করছে সরকার। আয়বৈষম্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে গবেষকদের পক্ষ থেকে অতি আশঙ্কা রয়েছে। এ নিয়ে তাঁরা খুব গলদঘর্ম। তবে বৈষম্য যে কিছুটা বাড়ছে তা সত্য। সরকারও এ নিয়ে চিন্তিত। উন্নয়নের সুফল সবাইকে ভোগ করতে দিতে হবে। শোষণমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সরকার চায় না। বৈষম্য কমাতে কাজ করছে সরকার। এ সময় সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর বিভিন্ন কর্মসূচির বরাদ্দ তুলে ধরেন তিনি।
প্রশ্নোত্তরের আগে দেওয়া বক্তৃতায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধকল কাটিয়ে অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কম করে হলেও মূল্যস্ফীতি কমছে। প্রবাসী আয় বাড়ছে। রপ্তানি বাড়ছে। ফলে গত মাস থেকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ইতিবাচক। অর্থনীতির এসব সূচকের হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, সার্বিকভাবে অর্থনীতি স্বস্তিকর অবস্থায় রয়েছে। ডিজেএফবির সাধারণ সম্পাদক সাইদ শাহীনের সঞ্চালনায় সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি হামিদ-উদ-জামান। সংগঠনের অন্য নেতারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস