বিনোদন

বাংলা সাহিত্য জগতের চর্তুপাশেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিচরণ করেছেন

বাংলা সাহিত্য জগতের চর্তুপাশেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিচরণ করেছেন। যুগের পর যুগ পেরোলেও আজও এতটুকু কমেনি তার সৃষ্টির আবেদন। তাইতো বইয়ের পাতা থেকে সিনেমার পর্দায় যেন জীবন্ত হয়ে ধরা দিয়েছে রবীন্দ্রসাহিত্য। দুই বাংলাতেই কবিগুরুর গল্প-উপন্যাস নিয়ে নির্মীত হয়েছে বহু সিনেমা।  
১৮৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের ৩৪ বছর পর ১৮৯৫ সালে চলচ্চিত্রের উদ্ভাবন হয়। রবীন্দ্রসাহিত্যের প্রথম চিত্রায়ন হয় ‘মান ভঞ্জন’। ১৯২৩ সালে নরেশচন্দ্র মিত্র ‘মান ভঞ্জন’ পরিচালনা করেন।   
এরপর ১৯২৮ সালে শিশির ভাদুড়ি ‘বিসর্জন’ ও ‘বিচারক’ নামের দুটি সিনেমা নির্মান করেন। ১৯২৯ সালে ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ‘তপতী’ সিনেমার নির্মাণ শুরু করলেও চার রিল পর্যন্ত শুটিং হয়। এতে বিশ্বকবি নিজে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের জন্য রাজি হলেও বিদেশ ভ্রমণের কারণে সিনেমার কাজ অসমাপ্ত থেকে যায়।  
এরপর ১৯৩০ সালে ‘দালিয়া’ ও ‘গিরিবালা’ নামের দুটি রবীন্দ্র সাহিত্যকর্ম সিনেমার পর্দায় দেখা যায়। ১৯৩২ সালে সবাক চলচ্চিত্র ‘নটীর পূজা’ ও ‘চিরকুমার সভা’ মুক্তি পায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরিচালিত একমাত্র সিনেমা হচ্ছে ‘নটীর পূজা’। মাত্র চার দিনে এটির শুটিং শেষ করেছিলেন তিনি।  শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীদের অভিনীত এ সিনেমায় উপালির চরিত্রে অভিনয় করেন রবীন্দ্রনাথ নিজেই। এরপর নরেশ মিত্রের নির্বাক ছবি ‘নৌকাডুবি (১৯৩৮)’, সবাক ছবি ‘গোরা (১৯৩৮)’, সেতু সেনের ‘চোখের বালি (১৯৩৮)’ নির্মিত হয়।  
রবীন্দ্রসাহিত্য নিয়ে সব থেকে বেশি সিনেমা নির্মান করেছেন বাংলা সিনেমার অন্যতম পরিচালক সত্যজিৎ রায়। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের তিনটি ছোটগল্প সমাপ্তি, পোস্টমাস্টার ও মনিহারা নিয়ে নির্মাণ করেন ‘তিনকন্যা’ সিনেমাটি।   
‘তিনকন্যা’ ও ‘সমাপ্তির’ জন্য রাষ্ট্রপতি পদক, ‘পোস্টমাস্টার’ ও ‘সমাপ্তি’ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে মেলবোর্ন ও বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে, ‘নষ্টনীড়’ গল্প অবলম্বনে চারুলতা (১৯৬৪) রাষ্ট্রপতি পদক, বার্লিন ও মেক্সিকো চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ ছবি ও ঘরে বাইরে (১৯৮৪) ছবি ভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও দামাস্কাস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পায়।   
ঋতুপর্ণ ঘোষের পরিচালনায় বাংলা সিনেমা নৌকাডুবি ও চোখের বালি নির্মিত হয়েছে।  
আর বাংলাদেশের সিনেমায় রবীন্দ্রসাহিত্য এসেছে পরিচালক সালাউদ্দিন ও জহির রায়হানের হাত ধরে। ১৯৬৩ সালে সালাউদ্দিন এর ‘ধারাপাত’ সিনেমাতে একটি ও ১৯৭০ সালে জহির রায়হান পরিচালিত ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমায় একটি গান ব্যবহার করা হয় রবীন্দ্রনাথের।  
‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি জহির রায়হান জীবন থেকে নেয়া সিনেমায় ব্যবহার করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের পর এটি আমাদের জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৭২ সালে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত স্বাধীনতাযুদ্ধের ওপর নির্মিত প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ সিনেমাতে রবীন্দ্রনাথের ‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা’ গানটি ব্যবহার করেন।  
এছাড়া আজিজ আজহার পরিচালিত ১৯৭৪ সালে নির্মিত ‘চোখের জলে’ ছবিতে রবীন্দ্রনাথের গান ব্যবহার করা হয়। ১৯৮৪ সালে কাজল আরেফিন পরিচালিত ‘সুরুজ মিয়া’ ছবিতে অজিত রায়ের কণ্ঠে একটি রবীন্দ্রসংগীত, ১৯৮৫ সালে শেখ নিয়ামত আলীর ‘দহন’ ছবিতে কাদেরী কিবরিয়া, ১৯৯৪ সালে হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘আগুনের পরশমণি’ ও ২০০৮ সালে ‘আমার আছে জল’ ছবিতে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত ব্যবহার করা হয়।  
এরপর বাংলাদেশে রবীন্দ্রসাহিত্যের সফল চলচ্চিত্রায়ণ করেছেন পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। তিনি ২০০৫ সালে রবীন্দ্রনাথের গল্প অবলম্বনে নির্মাণ করেন ‘শাস্তি’ ও ‘শুভা’ সিনেমা। দুটি সিনেমাই দর্শকদের প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়। এরপর ২০০৬ সালে কাজী হায়াৎ নির্মাণ করেন ‘কাবুলীওয়ালা’। এই ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন প্রয়াত নায়ক মান্না। ২০১০ সালে নার্গিস আক্তারের পরিচালনায় ‘সমাপ্তি’ গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয় ‘অবুঝ বউ’। এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস