কিশোরগঞ্জের ইটনায় বিনা পারিশ্রমিকে তিন হাজারের বেশি কবর খোঁড়া সেই মনু মিয়া মারা গেছেন। জীবনের প্রায় অর্ধশত বছর তিনি ব্যয় করেন কবর খননের কাজে, বিনিময়ে কখনো কিছু চাননি।
বহুবছর হল তার চলার সঙ্গী ছিল একটি ঘোড়া। মৃত্যুর আগে অর্থাৎ গেল মাসে মনু মিয়া চিকিৎসার জন্য যখন হাসপাতালে ভর্তি হন তখন কে বা কারা তার সেই ঘোড়াটি মেরে ফেলে, যা নিয়ে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়। এরপর অভিনেতা খায়রুল বাসার তাকে ঘোড়া উপহার দিতে চান। যদিও মনু মিয়া তার থেকে ঘোড়াটি নেননি। চেয়েছেন শুধু দোয়া।
গত তিন দিন আগে মনু মিয়ার সঙ্গে কথাও হয়ে বাসারের। তিনদিন পর তার মৃত্যুর খবরে আহত হয়েছেন বাসার। মৃত্যুর খবর শুনে সকল ব্যস্ততা ফেলে বাসার ছুটে গেছেন কিশোরগঞ্জে।
আজ সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ থেকে খায়রুল বাসার সমকালকে বলেন, ‘আত্মীয় না হলেও খুব অল্পদিন মনু কাকার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। আমি তার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। তার জীবনবোধ আমাকে মুগ্ধ করেছে। আজ তার মৃত্যুর খবরে ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। খবর শুনে একটুও দেরি না করে কিশোরগঞ্জে চলে এসেছি। আজ একটি অ্যাওয়ার্ড শোতে অংশ নিয়ে পুরস্কার গ্রহন করার কথা ছিল। আমার মনে হয়েছে অ্যাওয়ার্ড শোতে গিয়ে পুরস্কার নেওয়ার চেয়ে এখানে আসা জরুরি। অ্যাওয়ার্ড জীবনে অনেক পাওয়া যাবে কিন্তু শেষবার এই নায়ককে না দেখার আফসোস সারাজীবন থেকে যেতো।’
হাসপাতালে থাকা অবস্থায় মনুর থেকে তার জীবনের গল্প শোনার চেষ্টা করেছেন বাসার। এছাড়া বাসারকে বহুবার তার বাড়িতে যেতে বলেছেন তিনি। সময় করে কিশোরগঞ্জে যাবেন বলেও কথা গিয়েছিলেন অভিনেতা। কিন্তু বাসার কিশোরগঞ্জে গেলেন ঠিকই কিন্তু মনু মিয়াকে জীবিত পেলেন না।মনু মিয়ার গল্পের মত বাড়িতে গিয়ে হুবহু তাই দেখেছেন এই অভিনেতা।
বাসার বলেন, ‘মনু কাকা আমাকে অনেকবার তার বাড়িতে আসতে বলেছিলেন। আমি আসব বলেও তাকে কথা দিয়েছিলাম। আজ আসলাম, কিন্তু তাকে জীবিত পেলাম না। এখানে এসে তার রেখে যাওয়া সরঞ্জামগুলো দেখলাম। খুব যত্ন করে নিজের মত করে তিনি সেগুলো বানিয়েছিলেন। ঘরে সেগুলো সাজায়েও রেখেছেন। তিনি ঠিক যেভাবে বলেছিলেন তেমনই। দেখে আপ্লুত হয়েছি।’
মনু মিয়ার জীবনবোধ খায়রুল বাসারকে আকৃষ্ট করেছে, যা তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন। সেই সঙ্গে মনু মিয়াকে সত্যিকারের নায়ক বলেও উল্লেখ করেন খায়রুল বাসার।
গেলে মাসে হাসপাতালে মনু মিয়ার সঙ্গে দেখা করার পর বাসার লেখেন, ‘আজ এক নায়কের সাথেই দেখা হলো আমার। আমি নিজ চোখে এক নায়ককেই দেখে আসলাম, বুক মেলালাম তার সাথে! আজন্ম এক নায়ক মনু মিয়া। এই নায়কের গল্প বলবো শিগগিরই। এটুকু বলি, মনু মিয়া অসহায় না বরং অসহায়ের সহায় হয়ে ওঠার প্রচণ্ড শক্তি আছে তার। এই দিশাহীন সমাজে এক আদর্শের নাম মনু মিয়া। মনু চাচা দোয়া ছাড়া কিছু চান না আপনাদের কাছে। উনি আপনাদের জন্য দোয়া করেন, আপনারা ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন।’
মনু মিয়া ৩ হাজার ৫৭টি কবর খনন করেছেন। যদিও কোনো ধরনের পারিশ্রমিক কিংবা বকশিস তিনি নেননি। বেঁচে থাকতে তিনি জানান, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে তিনি এ কাজ করেছেন।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস