বেঁচে আছেন পপ সম্রাট মাইকেল জ্যাকসন। বেঁচে বলতে আবেগী ভাষায় দর্শক হৃদয়ের মণিকোঠায় কিংবা মাদাম তুশোর জাদুঘরের মোমের পুতুলের জড় কাঠামোতে নয়, পুরোদস্তুর মানুষ হিসেবেই বেঁচে আছেন কিংবদন্তি পপতারকা মাইকেল জ্যাকসন। বরং আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় সুস্থ ও নির্ভেজাল একটা জীবনযাপন করছেন। এমন কিছু খবর মাইকেলের মৃত্যুর পর থেকেই নিয়মিত সময় ব্যবধানে বোমা ফাটিয়ে আসছে পশ্চিমা ইন্টারনেট সংস্কৃতিগুলো। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ কিংবা মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় তোলা ঝাপসা ছবির নানা প্রমাণ তুলে ধরার চেষ্টাটা দেখা গেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। মাইকেলের পুরো জীবনটাই যেমন গেছে হাজারও কানাঘুষা আর গুঞ্জনকে ঘিরে। মরার পরও সেই গুঞ্জনের হাত থেকে নিষ্কৃতি মেলেনি তার।তবে এসব গুঞ্জনের মিলিত রূপ এবার দেখা দিল আরও বড় আকারে। হালে মাইকেলের মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যালবামের বিক্রয়ের শীর্ষ থাকা আর বছরজুড়ে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের লাভের অংকে চোখ কপালে উঠেছে সবারই। মৃত্যুর পরও বাজার থেকে মাইকেল জ্বর থেকে সেরে ওঠার নাম নেই। আর এসব তথ্য-উপাত্ত মিলিয়ে আকাশে-বাতাসে উঠেছে নতুন শহুরে উপকথা মাইকেল নাকি মরেইনি। দিব্যি নাকি বেঁচে বর্তে আছেন। সেই গুজবের প্রবলতা এতটাই বিশাল যে যুক্তরাজ্যের মিরর ম্যাগাজিনের বিষয় হয়ে উঠেছে। শহুরে মানুষের সৃষ্টি করা অদ্ভুতুড়ে সব বিতর্কিত বিষয়ের গল্পে ফেদে আজগুবি বাস্তবতা প্রণয়নের যে ধারা তার হাত ধরেই তুলে আনা হয়েছে মাইকেলের সাম্প্রতিক গুজবের বিষয়টিও। আজ থেকে ৮০ বছর আগে অবাস্তব এক জলজ প্রাণীর গল্প ফেদে স্কটল্যান্ডের পাতা বিতর্কিত অভিযোগে ফাঁদ বিতর্কিত করে তোলে খোদ স্কটিশ সরকারকেই। সেই ঘটনা আজ অতীত হলেও মুহুর্মুহু তেমন সব অদ্ভুতুড়ে আর অবিশ্বাস্য গল্পের জন্ম হয় আজও।মিররের প্রতিবেদনে মাইকেলের বেঁচে থাকার গুঞ্জনটিকে অনেকটা দাবি করা হয় সাদ্দামের অমরত্বের রহস্যের সঙ্গে। আমেরিকান বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার পরও নাগরিক গুঞ্জনের দাবি, সাদ্দাম নাকি দিব্যি বেঁচে বর্তে আছেন পরিচয় আর চেহারা লুকিয়ে। একই ধরনের গুজব উঠেছে মধ্যপ্রাচীয় আরেক পরাশক্তি ওসামা বিন লাদেনকে নিয়েও। শুধু রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়েই যে এসব গুঞ্জন তৈরি হয় তা না। ১৯৭৭ সালে পরলোকগমনকারী পপ কিংবদন্তি এলভিস প্রিসলীও একই ধাঁচের গুঞ্জনের শিকার। বিশ্বাসীরা জোর গলায় এখনও দাবি করেন ১৯৭৭ সালে এলভিস প্রিসলীর মৃত্যুটা নাকি সে ফ ধাপ্পাবাজি। এলভিস এখনও বেঁচে আছেন। গ্রেসল্যান্ডে তার বাড়ির নিচে গুপ্ত বাংকার তৈরি করে নাকি ওখানেই বাস করছেন প্রিসলী। এমনকি পার্শ্ববর্তী একটা দোকানে নাকি ছদ্মবেশ নিয়ে চাকরিও করছেন নিয়মিত। সত্যিই হতবাক করার মতোই বিষয়। আর তার চেয়ে বেশি অবাক হতে হয়, এসব বিষয় অনলাইন সংস্কৃতির জোরে যখন বিশ্বাস করে চোখ বড় বড় করে অজস মানুষ।বলা হয় মৃত্যুর ঘটনাটি সাজিয়ে নাকি আত্মগোপনকারীদের এ মিছিলে নাম লিখিয়েছেন পপসম্রাট মাইকেল জ্যাকসন। শুধু তাই নয়, প্রিসলীর বাড়িতেই নাকি থাকছেন জ্যাকসন। বেঁচে থাকা অবস্থায় ভক্ত, পাপারাজ্জি আর খ্যাতির তাড়নে অতিষ্ঠ হয়েই নাকি এ স্বেচ্ছামরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মাইকেল কিংবা প্রিসলীরা। উল্টো দিকে মারা যাওয়ার পর আরও বেশি অ্যালবাম বিক্রি বেড়ে গিয়ে আয়ের স্কেলটা মুহুর্মুহু বেড়ে যাওয়ায় এ মৃত্যুর এ বাণিজ্যিক দিকটাকেও ফেলে দিতে চান না কেউ। সত্য কিংবা মিথ্য সেই তর্কে না যাওয়াই ভালো। প্রয়াত একজন শিল্পীকে একজন ভক্ত যখন ভালোবাসার আদর্শ মনের ঘরে মূর্ত করে তোলেন তখন সেটা গ্রহণযোগ্য। কিন্তু সবক্ষেত্রেই সন্দেহের গন্ধ খুঁজে সব কিছুতেই ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া আর তার ডানায় ভর করে কিংবদন্তি তারকাদের মৃত্যুর মতো ঘটনাকেও তুচ্ছ করে তোলার পেছনে কতটুকু মানসিক সুস্থতা সেটা আসলেও প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়।