পরিবেশ

সুন্দরবনে বাঘের ছয় খাদ্যের তিনটি বাড়ছে

বাংলাদেশে সুন্দরবনের বাঘ মূলত ছয় ধরনের খাদ্য খায়। এর মধ্যে এক ধরনের খাদ্য হলো মায়া হরিণ। প্রাণীটি সুন্দরবনে দ্রুত কমে আসছে। তবে গত প্রায় ৩০ বছরে বাঘের অন্য পাঁচটি খাদ্যের মধ্যে তিনটি বাড়ছে। চিত্রা হরিণ ও বন্য শূকর বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বেড়েছে বানরের সংখ্যাও। গবেষকেরা বলছেন, বাঘের খাদ্য হিসেবে পরিচিত এই প্রাণীরাও সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের অংশ। ফলে সুন্দরবন রক্ষায় এই প্রাণীদেরও সংরক্ষণ করতে হবে।
তিন বছর ধরে সুন্দরবনের বাঘের প্রধান খাবারগুলোর ওপরে করা এক গবেষণা জরিপে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বন বিভাগ, জার্মান কো–অপারেশন এবং প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএন সুইজারল্যান্ড শাখার সহযোগিতায় গবেষণাটি করা হয়েছে। এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আজিজ। আজ ২৯ জুলাই আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস উপলক্ষে প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য—বাঘ করো সংরক্ষণ, সমৃদ্ধ হবে সুন্দরবন। জানতে চাইলে অধ্যাপক আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবারই প্রথম আমরা একক একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে সুন্দরবনের বাঘের প্রধান খাদ্যগুলোর ওপর জরিপটি করেছি। এই জরিপের ফলাফল থেকে আমরা এখন বাঘের খাদ্য সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারব। এ ছাড়া ভবিষ্যতে এই খাদ্যগুলোর সংখ্যা বাড়ল কি না, তা তুলনা করে বুঝতে পারব।’ জরিপটিতে সুন্দরবনে বাঘের প্রধান খাদ্য চিত্রা হরিণের সংখ্যা বেরিয়ে এসেছে। এর আগে গত শতকের আশির দশকে জরিপ চালিয়ে দেখা গিয়েছিল, সুন্দরবনে এই প্রাণীর সংখ্যা ৮০ থেকে ৮৫ হাজার। এবার জরিপে এই সংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৫৭টি পাওয়া গেছে। সুন্দরবনের হরিণের আরেক প্রজাতি মায়া হরিণের সংখ্যা বেশ কমতির দিকে। ভারতীয় সুন্দরবন অংশে এরই মধ্যে এই প্রজাতিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশের আশির দশকের জরিপে এই প্রাণীর সংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল ২ হাজার ২৬৫। আর এবারের জরিপে সর্বসাকল্যে মায়া হরিণ পাওয়া গেছে ৬৮৭টি।
চিত্রা হরিণের পর সুন্দরবনে বাঘের সবচেয়ে প্রিয় খাদ্য বন শূকর। এবারের জরিপে বন শূকর পাওয়া গেছে ৪৫ হাজার ১১০টি। এর আগের জরিপে প্রাণীটির সংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল ২৮ হাজার। সুন্দরবনের বাঘের খাদ্যতালিকায় চিত্রা হরিণের সংখ্যা ৭৯ শতাংশ ও বন শূকরের অবদান ১১ শতাংশ। গবেষণা জরিপটিতে সুন্দরবনের বাঘের অন্য যে তিনটি খাদ্যের খোঁজ পাওয়া গেছে, তার মধ্যে গুইসাপ, শজারু ও বানর অন্যতম। জরিপে গুইসাপের সংখ্যা ২৫ হাজার ১২৪টি, শজারু ১২ হাজার ২৪১টি ও বানর ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৪টি পাওয়া গেছে। এর আগে গুইসাপ ও শজারুর সংখ্যা জরিপ করা হয়নি। তবে আশির দশকে বানরের সংখ্যা জরিপ করে পাওয়া গিয়েছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ২২০টি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এককভাবে শুধু বাঘ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়ে সুন্দরবনকে টেকানো যাবে না। বাঘের খাবারসহ সামগ্রিকভাবে সুন্দরবনের পুরো প্রতিবেশব্যবস্থাকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। আশা করি বাঘ রক্ষায় এই জরিপ কাজে লাগানো হবে।

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস