ইউরোপ

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের শেষ কোথায়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উন্মাদ নন। তিনি বিপদের মুখে আছেন এ কথা ঠিক, কিন্তু তাই বলে হুটহাট করে তিনি পারমাণবিক বোমা ছুড়বেন—এ কথা মোটেই ঠিক নয়। বাইডেনের কাছে গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদন রয়েছে, তিনি সেসব দেখেই আমাদের এ আশ্বাস বাণী দিয়েছেন। তবে পুতিন উন্মাদ হোন বা না হোন, তিনি বোকা—এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। অন্ততপক্ষে ইউক্রেনে যেসব রুশ সৈন্যকে পাঠানো হয়েছে, তাঁদের সে রকমই ধারণা। এসব সৈন্য স্ত্রী অথবা মায়ের সঙ্গে সেলুলার ফোনে কথা বলার সময় তেমন দাবিই করেছেন। নিউইয়র্ক টাইমস–এর সৌজন্যে মূল রুশ ভাষায় তাঁদের এ কথোপকথন এখন জানা যাচ্ছে: ‘পুতিন একটা আস্ত গর্দভ। উনি চান আমরা কিয়েভ দখল করি, কিন্তু কীভাবে সে ব্যাপারে তাঁর বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। যুদ্ধ শুরুর আগে কেউ আমাদের বলেনি কী হচ্ছে, আমরা কোথায় যাচ্ছি। এখন চারদিকে শুধু রক্ত, মানুষের লাশ। আমাদের বোকা বানানো হয়েছে। এখানে আমরা একটা ফ্যাসিস্টেরও দেখা পাইনি, যে কথা আমাদের যুদ্ধের আগে বলা হচ্ছিল। গর্দভ।’ আমার নিজের ধারণা, পুতিন একই সঙ্গে উন্মাদ ও নির্বোধ। যে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হিসেবে বর্ণনা করেছেন, তুড়ি মেরে তা ফের জোড়া লাগানো সম্ভব বলে যে অঙ্ক তিনি কষেছেন, তা দেখেই এ কথা বলছি। ইতিহাস পেছন পথে হাঁটে না, সে সামনে এগোয়। ইতিমধ্যে এ যুদ্ধ ৮ মাস পেরিয়ে ৯ মাসে পড়েছে। প্রথম কয়েক মাসে রুশ সৈন্যরা ইউক্রেনের যে সীমানা দখল করেছিল, তার ৫৫ শতাংশ তাদের হাতছাড়া হয়েছে। এক লাখের মতো সৈন্য হতাহত হয়েছে। দেদার ব্যবহার করায় গোলাবারুদ, বিশেষত গাইডেড মিসাইল ফুরিয়ে এসেছে। আশা ছিল চীন বা ভারত তাকে সাহায্য করবে, বাস্তবে কথার ‘পপকর্ন’ ছিটানো ছাড়া আর কিছুই তারা করেনি। অর্থনীতির অবস্থাও চিড়েচ্যাপটা হয়ে এসেছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, গত ৯ মাসে রাশিয়ার জাতীয় উৎপাদন প্রায় ৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। খুচরা যন্ত্রাংশের অভাবে আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন কমিয়ে আনতে হয়েছে। যুদ্ধের ময়দানে রাশিয়ার জয়লাভ অসম্ভব জেনে পুতিন এখন ইউক্রেন লক্ষ্য করে বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছেন, উদ্দেশ্য দেশটির বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অবকাঠামো ধ্বংস। শুধু অবকাঠামো নয়, মানুষের বসতবাড়িও ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন। তিন দিন আগে জাপোরিঝঝিয়ার একটি হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের ওপর মিসাইল ছুড়ে দুই দিনের এক শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ স্বীকার করেছেন, তাঁরা পরিকল্পিতভাবেই ইউক্রেনের অবকাঠামোর ওপর হামলা করছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ইউক্রেনকে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করা।’