ইউরোপ

আক্রান্ত ফ্রান্সের প্যারিস, নিহত ১২৮

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের অন্তত ছয়টি স্থানে
সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ১২৮
জন নিহত হয়েছেন। ভয়াবহ এসব হামলায়
আরো কয়েকশ আহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার
সন্ধ্যায় এসব সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এ
হামলার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া
ওলাঁদ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। একই
সঙ্গে দেশটির সব সীমান্ত বন্ধের নির্দেশ
দেন তিনি। আর নাগরিকদের ঘরে অবস্থান
করতে বলা হয়েছে।
শনিবার সিএনএন ও বিবিসিসহ বিভিন্ন
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি
১৫০০ সেনাও মোতায়েন করা হয়েছে। এই
হামলার ঘটনায় শহরের কেন্দ্রস্থলে বাটাক্লঁ
কনসার্ট হলেই অন্তত ১২০ জন নিহত এবং বেশ
কয়েকজন আহত হন।
কনসার্ট দেখতে ওই হলে জড়ো হয়েছিলেন
কয়েক হাজার মানুষ। এরই মধ্যে অন্তত তিন
হামলাকারী হলে ঢুকে কালাশনিকভের মতো
দেখতে রাইফেল নিয়ে নির্বিচারে গুলি
চালাতে শুরু করে বলে এক প্রত্যক্ষদর্শী
জানান। পরে হামলাকারীরা ওই হলে
অনেককে জিম্মি করলে পুলিশ ভারী অস্ত্রসহ
সেখানে অভিযান চালায়। এতে আট
হামলাকারী নিহত হয়েছে বলে আল
জাজিরার খবরে জানানো হয়েছে।
একজন সাংবাদিকের উদ্ধৃতি দিয়ে
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
'তারা অন্ধের মতো গুলি চালাচ্ছিল। যে
যেদিকে পারে দৌড়ে বাঁচার চেষ্টা
করছিল। তিনি বহু মানুষকে গুলি খেয়ে পড়ে
যেতে দেখেছেন।'
অন্য হামলাগুলো হয়েছে কয়েকটি বার ও
রেস্তোরাঁয়। এর মধ্যে স্টেডিয়ামের কাছের
ঘটনাটি আত্মঘাতী হামলা বলে ধারণা করা
হচ্ছে। এসব হামলায় কম্বোডিয়ান একটি
রেস্তোরাঁয় ১৪ জন, একটি পানশালার বাইরে
১৯ জন, একটি অ্যাভিনিউতে চারজন এবং
নগরের বাইরে এক স্থানে চারজন নিহত
হয়েছেন।
শনিবার বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা পর্যন্ত
বিবিসি এ সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ১২৮
জন এবং সিএনএন ১৫৩ জন নিহত হওয়ার খবর
দিয়েছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এই হামলার
নিন্দা জানিয়ে হোতাদের বিচারের
মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছে।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফ্রান্সের পাশে
থাকার কথা বলেছে ন্যাটো। যুক্তরাষ্ট্র
ফ্রান্সকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে
প্রস্তুত জানিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছেন
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
প্যারিসে এই সন্ত্রাসী হামলার ভয়াবহতায়
ক্ষুব্ধ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড
ক্যামেরন এক টুইটে বলেছেন সম্ভাব্য সব
ধরনের সহায়তা নিয়ে তারা ফ্রান্সের
মানুষের পাশে থাকবেন। জার্মান চ্যান্সেলর
অ্যাঙ্গেলা মার্কেল বলেছেন, প্যারিসে এই
সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তিনি বিস্মিত,
হতবাক। রাশিয়াও এই সন্ত্রাসী হামলার
নিন্দা জানিয়ে ফ্রান্সের সরকার ও জনগণের
প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।
যেখানে যেখানে হামলা
শহরের মাঝামাঝি বাটাক্লঁ কনসার্ট হলে
মার্কিন ব্যান্ড দল ইগলস অব ডেথ মেটালের
কনসার্ট দেখতে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক
হাজার মানুষ। এরই মধ্যে অন্তত তিন
হামলাকারী হলে ঢুকে কালাশনিকভের মতো
দেখতে রাইফেল নিয়ে নির্বিচারে গুলি
চালাতে শুরু করে বলে এক প্রত্যক্ষদর্শী
জানান।
ইউরোপ ওয়ান রেডিওর সাংবাদিক জুলিয়ঁ
পিয়ার্সকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ানের
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'তারা অন্ধের মতো
গুলি চালাচ্ছিল। যে যেদিকে পারে দৌড়ে
বাঁচার চেষ্টা করছিল। আমি বহু মানুষকে গুলি
খেয়ে পড়ে যেতে দেখেছি।'
জুলিয়ঁ পিয়ার্স বলেন, হামলাকারীরা সবাই
ছিল বয়সে তরুণ। কারো মুখে মুখোশ ছিল না।
অন্তত তিনবার তারা রাইফেলের ম্যাগাজিন
বদলেছে। তারা পরিষ্কার জানত- তারা কী
করছে।'
কনসার্ট হলের বাইরে থাকা এক যুবক
রয়টার্সকে বলেন, বন্দুকধারী তিন তরুণ ছিল
কালো পোশাকধারী। তাদের হাতে ছিল
মেশিনগান।
এই ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞের পর হামলাকারীরা
সেখানে শতাধিক মানুষকে জিম্মি করে।
পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে জিম্মি
সংকটের রক্তাক্ত অবসান ঘটায়। ওই
অভিযানে অন্তত আট হামলাকারী নিহত হয়।
এই কনসার্ট হলের কয়েকশ মিটারের মধ্যে
বিদ্রূপ সাময়িকী শার্লি এবদুর কার্যালয়। ১০
মাস আগে সেখানে বন্দুকধারীরা হামলা
চালিয়ে ২০ জনকে হত্যা করেছিল।
স্টেডিয়ামের বাইরে ম্যাকডোনাল্ডেসর
দোকানের সামনে দুটি বিস্ফোরণ ঘটে।
সেখানে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয় বলে
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। সেখানে
তিনজন নিহত হয়েছে বলে বিবিসি
জানিয়েছে। নিহতরা আত্মঘাতী
বোমাহামলাকারী বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাইরে বোমা হামলার পর খেলা চালিয়ে
গেলেও স্টেডিয়ামের ভেতরে আতঙ্ককর
পরিস্থিতি তৈরি হয়। ওই সময় গ্যালারিতে
ওলাঁদের সঙ্গে বসে খেলা দেখছিলেন
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্যাঙ্ক ভালটার।
বিস্ফোরণের পরপরই পুলিশের
হেলিকপ্টারকে স্টেডিয়ামের ওপর চক্কর
দিতে দেখা যায়। প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ দ্রুত
চলে যান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, সেখানে
বসে সব পরিস্থিতি দেখে জরুরি অবস্থার
ঘোষণা দেন তিনি।
প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে শ্যারোনে একটি
এশীয় রেস্তোরাঁর সামনে আধা স্বয়ংক্রিয়
অস্ত্র দিয়ে একজন বন্দুকধারী এলোপাতাড়ি
গুলি চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ
দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে।
রেস্তোরাঁর বাইরের অংশে তখন অনেকেই
ডিনার খেতে বসেছিলেন। আকস্মিক এই
হামলায় ১৮ জন নিহত হয়েছেন বলে রয়টার্স
জানিয়েছে।
'সন্ত্রাসীদের চিনি'
হামলার সময় সিটি হলের কনসার্টে থাকা
একজন রয়টার্সকে বলেছেন, বন্দুকধারীরা
'ইসলামী সস্নোগান' দিচ্ছিল এবং সিরিয়ায়
অভিযানে ফ্রাঁন্সের ভূমিকার প্রতিবাদ
জানাচ্ছিল।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ এই ঘটনাকে
বর্ণনা করেছেন 'নজিরবিহীন সন্ত্রাসী
হামলা' হিসেবে। রাতেই মন্ত্রিসভার জরুরি
বৈঠক করে তিনি টেলিভিশনে জাতির
উদ্দেশে দেয়া ভাষণে জরুরি অবস্থা জারির
ঘোষণা দেন।
হামলাকারীদের কাউকে 'দয়া দেখানো হবে
না' জানিয়ে ওলাঁদ বলেন, 'আবারও আমাদের
ওপর ভয়াবহ হামলা হলো আমরা জানি, এরা
কোথা থেকে এসেছে; আমরা জানি, কারা
এই অপরাধী, আমরা জানি, কারা এই
সন্ত্রাসী।'
'তারা আমাদের ভয় দেখাতে চায়... কিন্তু
আমরা সেই জাতি, যারা নিজেদের রক্ষা
করতে জানে; যারা জানে, কীভাবে
নিজেদের শক্তি কাজে লাগাতে হয়।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আবারও আমাদের জয়
হবে।'
দেশের এই পরিস্থিতিতে জি টোয়েন্টি
সম্মেলনে যোগ দিতে তুরস্কে যাওয়ার
পরিকল্পনা বাদ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট
ওলাঁদ।