ফিচার

কবিতা

  এই অভিশপ্ত-উপত্যকা আমার দেশ না''
কর্ণধর মণ্ডল

এমন দেশ আমি কখনো চাই-না!
যেখানে ভালোবাসা অসহায়,
মানবতা লজ্জায় মুখ লুকায়।
যেখানে জীবনের মূল্য অর্থহীন,
প্রতি-হিংসায় অকালে হারায় দুর্লভ প্রাণ।
''এই অভিশপ্ত-উপত্যকা আমার দেশ না''!
এমন মানবতাহীন উদ্ধ্বত বর্বরে ভরা পৃথিবী,
আমার দেশ হতে পারে না, পারে না! না না  কখনও হতে পারে না।

এমন দেশ আমি কখনো চাই-না!
যেখানে এক জীবনের পরিবর্তে কেড়ে নিতে হয় অন্য প্রাণ,  
বুলেটের গুলিতে ক্ষত-বিক্ষত হয় দেহ।
শ-য়ে শ-য়ে রাজপথে শায়িত থাকে লাশ,
''রক্ত'ক্ষরণে রক্তাক্ত হয় সভ্যতার ইতিহাস''।
''এই অভিশপ্ত-উপত্যকা আমার দেশ না''!
এমন হিংস্র-উদ্ধ্বত বর্বরে ভরা পৃথিবী,
আমার দেশ হতে পারে না, পারে না! না না কখনও হতে পারে না।

এমন দেশ আমি কখনো চাই-না!
যেখানে ফুলের শিশু হয় হিংস্র-জানোয়ারের লালসার শিকার।
পবিত্র দেহটা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় শকুনেরা,
অকালে হতে হয় বৃন্ত-চ্যুত।
বোবা চিৎকারে হারায়....ধরণী ধুলায়!
নীরবে ঘুমায় সুন্দর পৃথিবীর মায়া ভুলে।
''প্রতিবাদে রঞ্জিত হয় স্বদেশ মায়ের সুভ্র-আঁচল''।
"এই অভিশপ্ত-উপত্যকা আমার দেশ না"!
এমন উদ্ধ্বত বর্বরে ভরা পৃথিবী,
আমার দেশ হতে পারে না, পারে না! না না কখনও হতে পারে না।

এমন দেশ আমি কখনো চাই-না!
যেখানে নারী অসহায়, পারে না নির্ভয়ে পথ চলতে।
নির্জনে একাকী সুযোগ পেলে,
পুরুষেরা জাগিয়ে তুলে পশুত্ববোধ; করে লুঠ নারীর ইজ্জত।
ভুলে মমত্ববোধ, হয়ে অসভ্য, নির্বোধ।
--দেখায় কাপুরুষতা!
আমি এমন মেরুদণ্ডহীন দেশ কখনও চাই না।
এমন পৌরষত্বহীন, উদ্ধ্বত বর্বরে ভরা পৃথিবী!
আমার দেশ হতে পারে না, পারে না! না না কখনও হতে পারে না।

এমন দেশ আমি কখনো চাই-না!  
যেখানে প্রতি পদে পদে লাঞ্ছিত হতে হয় স্বদেশ মায়ের।
নিপীড়িত হতে হয় প্রতিক্ষণে!
শত্রুর পা চাটা বেইমান মীরজাফরের দালালীতে।
অকালে হারায় জোয়ান কোলের সন্তান।
নীরবে সইতে হয় বুক ফাটা হাহাকার,
রাশি রাশি যন্ত্রণা আর আর্ত-চিৎকার।
সলাজ নয়নে ঝরাতে হয় বেদনাময় বিষাদের বারি ধারা।
"এমন অভিশপ্ত-উপত্যকা আমার দেশ না"।
এমন উদ্ধ্বত বর্বরে ভরা পৃথিবী,
আমার দেশ হতে পারে না পারে না! না না কখনও হতে পারে না।
"এই অভিশপ্ত মৃত্যু-উপত্যকা আমার দেশ না!''

এমন দেশ আমি কখনো চাই-না!
যেখানে ভালোবাসার পরিবর্তে,
হাতে তুলে দেয় গোলা-বারুদ।
গণতন্ত্র'কে হত্যা করা হয় গলা টিপে,
প্রতি-হিংসায় দিকে দিকে জ্বলে ওঠে বিদ্রোহের লেলিহান!
পুড়িয়ে করে ছারখার; মানুষের মানুষত্ব-বন্ধুত্ব-সৌভাতৃত্বকে।
আপনজনেরা উপহার পায়, সবচেয়ে প্রিয় জনের মৃত লাশ!
যেখানে মানুষ বই-খাতা ছুড়ে ফেলে,
নির্দ্বিধায় হাতে তুলে নেয় স্টেনগান, গোলা-বারুদ!
ধর্মের নামে চলে শাসকের শোষণ-উৎপীড়ণ। বৈষম্য ভেদাভেদ, যত বজ্জাতি-কুসংস্কার।
চলে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম।
একই রক্ত'ধারায় রঞ্জিত হয় নিথর ধরণীর তল!
নির্মম-হিংস্রতায় হারিয়ে যায় শত শত ভাই।
তাই........
"এই অভিশপ্ত-উপত্যকা আমার দেশ না"।

এমন দেশ আমি কখনো চাইনা!
যেখানে মানুষের স্বার্থে সবুজ প্রকৃতি হয় ধ্বংস।
বিকৃত চেতনায় বিনাশ হয় জীবকুল।
মানুষের আদিম ভাবনায় সবুজ অরন্য পুড়ে-ঝলসে হয় বিদগ্ধ-ছাই।
নিরীহ পশু-পাখির বোবা-কান্না, আর মৃত্যু-যন্ত্রণা!
যেখানে প্রকৃতির আকাশ-বাতাস বেদনার বিষে ভার।
মানুষের অত্যাচারে বিষাদ-ব্যথায় করে হাহাকার,
তবুও এই মানব সভ্যতা থাকে বোধির পাষাণ।
এই প্রকৃতি হারিয়ে ফেলে তার ভারসাম্য,
বাতাসে কমে যা অক্সিজেন।
একমুঠো তৃপ্তির শ্বাস ফেলতে প্রাণ করে হাসফাস!
ফুসফুস কুরে কুরে খায়, অজ্ঞাত নামহীন অজানা বিষাক্ত পোকায়।
--অবশেষে আমরা হই নির্বিকার।
তাই........
''এই অভিশপ্ত-উপত্যকা আমার দেশ না''।
এমন বিবেক-দায়িত্ববোধহীন উদ্ধ্বত বর্বরে ভরা পৃথিবী।
আমার দেশ হতে পারে না পারে না! না না কখনও হতে পারে না।   
"এই অভিশপ্ত মৃত্যু-উপত্যকা আমার দেশ না''।