ফিচার

অণুগল্প: কলার খোসা

রাস্তায় মুখোমুখি দেখা হতেই ব্যাঙ্কের লোকটা আকাশকে বললেন, শুনেছেন নির্মল চ্যাটার্জি মারা গেছেন?
--- না তো, কবে?‌
--- গতকাল।
--- কী হয়েছিল?
--- রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। কলার খোসায় পা পিছলে সোজা লরির তলায়...

আকাশ থ'। নির্মল তার ছোটবেলার বন্ধু। ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর জন্য এডুকেশন লোন নিয়েছিল।

ভেবেছিল, ছেলের চাকরি হলে দেবে। ছেলের চাকরি তো দূরের কথা, লকডাউনে তারই চাকরি চলে গেছে। ফলে কোনও কিস্তিই দিতে পারেনি। ব্যাঙ্ক থেকে বহু বার ফোন করেছে। শেষে উকিলের চিঠি। লিখেছে, সাত দিনের মধ্যে দেখা করতে।

একা যাওয়ার সাহস পায়নি। আকাশকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল। ব্যাঙ্কের এই লোকটা টাকা শোধ করার জন্য এমন ভাবে চাপ দিচ্ছিল যে, কোনও উপায় না দেখে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিচু গলায় নির্মল তাঁকে বলেছিল--- লোনের সময় যে অ্যাকাউন্টটা খুলেছিলাম, তার সঙ্গে আমার একটা জীবন বীমা করা ছিল। প্রতি বছর একশো টাকা করে কাটে। আচ্ছা, আমি যদি এর মধ্যে মারা যাই, তা হলে কি ওই দু'লক্ষ টাকা এই টাকা থেকে মাইনাস হয়ে যাবে?

ইনি বলেছিলেন, স্বাভাবিক মৃত্যু হলে হবে না। একমাত্র অ্যাক্সিডেন্টাল কেসের ক্ষেত্রেই ওই টাকা পাওয়া যায়।

ফেরার সময় আকাশের পাশে হাঁটতে হাঁটতে স্বগতোক্তির মতো বিড়বিড় করে নির্মল বলেছিল, তার মানে গলায় দড়ি দিয়ে কিংবা বিষ খেয়ে অথবা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মরলে টাকা পাওয়া যাবে না, না!

তার পরে লকডাউন উঠতেই এই ঘটনা! তা হলে কি... ওখানে সত্যিই কলার খোসা পড়ে ছিল, নাকি ও পকেটে করে নিয়ে গিয়েছিল!