স্বাস্থ্য

এশিয়ার মহাদেশের গোপন প্রাণঘাতী জনপ্রিয় মাদক 'সুপারী'

এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে পান-সুপারি সংস্কৃতির অংশ
হিসেবে বিবেচনা করা হয়বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠির প্রায় এক-দশমাংশ এইবাদামটি ব্যবহার করেন। এর কার্যক্ষমতা প্রায় ছয়কাপ কফির সমান এবং কোথাও কোথাও এটিকে দেখা হয়ভালোবাসার প্রতীক এবং বদহজম ও বন্ধাত্যের মতোসমস্যার প্রতিকার হিসেবে।তবে এই বাদামটি প্রতিবছর হাজার-হাজার মানুষেরমৃত্যুরও কারণ।যে বাদামটির কথা বলা হচ্ছে সেটি বাংলাদেশে পরিচিত‘সুপারি’ নামে।পুরো এশিয়াজুড়েই এই সুপারি পাওয়া যায়। আরেকা পামনামক গাছ থেকে এটি সংগ্রহ করা হয় এবং এর উদ্দীপকউপাদানের কারণে অনেকেই নিয়মিত এটি চর্বণ করেন।এটির কার্যক্ষমতা এতটাই বেশি যে নিকোটিন,অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইনের পাশাপাশি সুপারিকেওবিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মানসিক বিভ্রমকারী মাদকহিসেবে বিবেচনা করা হয়।যদিও নারী এবং শিশুসহ অনেকেই এটি ব্যবহার করেন,তবে কর্মক্ষম পুরুষদের মাঝেই সুপারির ব্যবহার বেশি।গাড়ি চালানো, মাছ ধরা কিংবা নির্মাণকাজের মতোকর্মকাণ্ডে দীর্ঘসময় জেগে থাকার জন্য এটি তারাসুপারি চিবান।তবে স্বল্প সময়ের এই সুবিধাটি আসে চড়া মূল্যেরবিনিময়ে।সুপারি ব্যবহারকারীদের মধ্যে উচ্চমাত্রায় মুখেরক্যান্সারের কারণে অনেকের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।এমনকি প্রথমবার সুপারি ব্যবহার করার কয়েক দশকপরেও মানুষজন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন।এশিয়ার যে কয়টি এলাকায় সুপারি খুব বেশি জনপ্রিয়তার একটি তাইওয়ান। সেখানে সুপারিকে বলা হয়‘তাইওয়ানের চুইং গাম’।তাইওয়ানের সরকার এখন কয়েক শতকের পুরনো এইঅভ্যাসটি কমিয়ে আনা এবং প্রতিবছর হাজার-হাজারজীবন ঝরে পড়া থেকে রক্ষার জন্য জন্য নানা পদক্ষেপনিয়েছে।তাইওয়ানে এভাবেই বিক্রি হয় সুপারিএশিয়ার অনেক অঞ্চলে সুপারি স্থানীয় সংস্কৃতিরএকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটিকে তাজা,শুকিয়ে কিংবা পানপাতা দিয়ে মুড়িয়ে খিলি বানিয়েব্যবহার করা হয়।যদিও পানের খিলি বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবেবানানো হয়, তবে সাধারণত: চুন, পানপাতা, এলাচি বাদারচিনির মতো মশলা এবং তামাকের সাথে মিশিয়ে এইখিলি তৈরি করা হয়।আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা এসব উপাদানেরমধ্যে এলাচি এবং দারচিনি ছাড়া বাকি সকল উপাদানকে‘কার্সিনোজেন’ বা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান হিসেবেতালিকাভুক্ত করেছে।চুনকে বিশেষ একটি সমস্যা হিসেবে দেখা হয়, কারণএটি ব্যবহারের ফলে মুখের ভেতর ছোট-ছোট অনেক ক্ষততৈরি হতে পারে। ক্যান্সার সৃষ্টিকারী অনেক উপাদানএসব ক্ষতের মাধ্যমে চামড়ার ভেতরে প্রবেশ করতে পারে।“প্রায় অর্ধেক মানুষ এখনো জানেই না যে সুপারি মুখেরক্যান্সারের কারণ হতে পারে।” বলেন তাইওয়ানেরন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হসপিটালের ক্যান্সারবিশেষজ্ঞ হান লিয়াং-জুন।উচ্চমাত্রায় সুপারি ব্যবহারের কারণে মুখের ক্যান্সারেমৃত্যুহারের মধ্যে প্রথম তিনটি অবস্থানের মধ্যে রয়েছেতাইওয়ান।তবে সরকারী উদ্যোগের কারণে তাইওয়ানে সুপারিব্যবহারের সংখ্যা এখন বেশ খানিকটা কমে এসেছে।ভারত এবং থাইল্যান্ডও সম্প্রতি সুপারির ব্যবহারকমানোর জন্য প্রচারণা শুরু করেছে।