আন্তর্জাতিক

১০ মিনিটের দেরিতেই রক্ষা, নিউজিল্যান্ড থেকে দেশের পথে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা

দেরি করে গন্তব্যে পৌঁছানো কি সব সময়ই খারাপ? না। বরং কখনো কখনো দেরিটা হতে পারে জীবন রক্ষার উপলক্ষ্যও।

নিউজিল্যান্ড সফররত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ক্ষেত্রে শুক্রবার ঠিক এটাই হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১০ মিনিট দেরি করাতেই বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা রেহাই পেয়েছেন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলা থেকে। রক্ষা পেয়েছে জীবন। অক্ষত শরীর নিয়ে ফিরে আসতে পারছেন দেশে।

ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ আল-নূরে জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার মুখে পড়েন বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। ভাগ্য ভালো, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যাওয়ার আগেই মসজিদের ভেতরে সশস্ত্র হামলা চালায় বন্দুকধারী সন্ত্রাসীরা। আর মিনিট পাঁচেক আগে গেলে হামলার সময় তামিম-মশফিক-রিয়াদরা মসজিদের ভেতরেই থাকতেন। সেক্ষেত্রে কি ঘটতে পারত, একবার কল্পনা করুন!

অনুশীলন মাঠ থেকে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের মসজিদে পৌঁছানোর কথা ছিল নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় সময় বেলা ১টা ৩০ মিনিটে। কিন্তু, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বহনকারী বাস গন্তব্যে পৌঁছে ১টা ৪০ মিনিটে। মানে ১০ মিনিট দেরিতে। এই দেরি করে যাওয়াটাই বাঁচিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের।

জীবন রক্ষা পাওয়া এই দেরিটা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কারণে। আগামীকাল শনিবার থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল ক্রাইস্টচার্চের তৃতীয় টেস্ট। এই টেস্টের ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলন শেষ করতে মিনিট দশেক দেরি করে ফেলেন মাহমুমদউল্লাহ। আর সে কারণেই মসজিদে যেতে দেরি হয়ে যায়।

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বহনকারী বাসটি মসজিদ প্রাঙ্গণে পৌঁছানোর পরই মসজিদের ভেতর থেকে মহিলা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়িমড়ি করে বেরিয়ে আসেন। তখনো বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বুঝে উঠতে পারেননি, মসজিদের ভেতরে কোন তাণ্ডবলীলা চলছে। ওই মহিলার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তারা হয়তো মসজিদের ভেতরে ঢুকেও পড়তেন।

কিন্তু, তখনই তাদের ভেতরে ঢুকতে বারণ করেন অন্য এক ভদ্র মহিলা। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ডেকে তিন বলেন, ‘মসজিদের ভেতরে গোলাগুলি হয়েছে। আমার গাড়িতেও গুলি লেগেছে। তোমরা ভেতরে যেও না।’

ওই মহিলার বারণের পরপরই ঘটনার ভয়াবহতা টের পান বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। মসজিদে না ঢুকে তারা তাই গাড়ির ভেতরেই অবরুদ্ধ অবস্থায় বসে থাকেন।

কারণ, ক্রাইস্টচার্চের পুলিশ ততক্ষণে রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। বাসের ভেতরে বসেই তামিম-মুশফিকরা দেখতে পান অনেকেই রক্তাক্ত অবস্থায় মসজিদের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছেন। রক্তমাখা শরীরে অনেকে পড়ে আছেন মসজিদের সামনে। ভয়ঙ্কর এই দৃশ দেখে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বাসের ভেতরেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এই অবস্থাতেই কাটাতে হয় বেশ খানিকটা সময়।

পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসার পর গাড়ি থেকে নেমে তামিম-মুশফিকরা নিজেরাই মাঠের দিকে হাঁটা ধরেন। এরপর মাঠ থেকে হোটেলে। হোটেল থেকে এরই মধ্যে ব্যাগ গুছিয়ে দেশের পথও ধরেছেন তামিমরা।

হ্যাঁ, সিরিজের শেষ টেস্টটি বাতিল করে এরই মধ্যে দেশের বিমান ধরেছে বাংলাদেশ দল। ফেরার পথে তাদের হয়তো একটা কথাই মনে পড়ছে বারবার, ১০ মিনিটের দেরিই বাঁচিয়ে দিয়েছে জীবন।

এলএবাংলাটাইমস/আই/এলআরটি