আন্তর্জাতিক

শুকিয়ে গেছে টেমস নদীর উৎসমুখ

তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহর ঘেঁষা টেমস নদীর উৎস অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ মাত্রায় শুকিয়ে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, খরার কবলে পড়তে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। এদিকে বিশেষজ্ঞদের এক বৈঠকের পর ইংল্যান্ডের বিস্তৃত এলাকা জুড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে খরা ঘোষণা করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যে শুষ্ক অবস্হা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। দেশটির কয়েকটি অংশে এই বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃষ্টিপাতই হয়নি। এরপরই ন্যাশনাল ডÌাউট গ্রুপ আনুষ্ঠানিকভাবে খরা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিবেশ সংস্হা যে আটটি এলাকায় খরা ঘোষণা করেছে সেগুলো হচ্ছে: ডেভন অ্যান্ড কর্নওয়াল, সোলেন্ট অ্যান্ড সাউথ ডাউনস, কেন্ট অ্যান্ড সাউথ লন্ডন, হার্টস অ্যান্ড নর্থ লন্ডন, ইস্ট অ্যাঙ্গিলা, টেমস, লিঙ্কোনশায়ার অ্যান্ড নর্দাম্পটনশায়ার, এবং ইস্ট মিডল্যান্ডস। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার থেকে ‘তীব্র তাপপ্রবাহের’ পূর্বাভাস থাকায় চার দিনের জন্য ‘চরম তাপমাত্রার’ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অফিস বলছে, ১৯৩৫ সালের পর সবচেয়ে বেশি শুষ্ক ছিল গত জুলাই মাস। এ সময়ে ২৩ দশমিক ১ মিলিমিটার গড় বৃষ্টি রেকর্ড হয় অর্থাত্ ৩৫ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়েছে দেশটিতে। ব্রিটেনের কিছু অংশে এটি ছিল এযাবত্কালের সবচেয়ে শুষ্ক মাস।

ইংল্যান্ডের দক্ষিণে অবস্হিত টেমস নদী ২১৫ মাইল (৩৫৬ কিলোমিটার) পর্যন্ত প্রশস্ত। প্রাকৃতিক জলপ্রবাহে লন্ডনের বড় উত্স এ নদী। সাধারণত গ্রীষ্মকালে এটি উত্স শুষ্ক থাকে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর আগের তুলনায় নদীর পানি অনেক কমে গেছে। নদী সংরক্ষণবিষয়ক সংস্হা রিভার্স ট্রাস্টের কর্মকর্তা এলিসডেয়ার নাউল বলেছেন, এটি খুব অগভীর হয়ে পড়েছে। টেমসের শুকনো জায়গায় গিয়ে দাঁড়াতে আপনাদের খুব বেশি দূরে যেতে হবে না। সত্যিকার অর্থে এ সময়ে ঐ শুষ্ক জায়গা ভেজা থাকার কথা ছিল। শুধু তাই নয়, সব সময়ই তা ভেজা থাকা উচিত।’ তিনি আরো বলেন, তীব্র গরম এবং কম বৃষ্টির কারণে যুক্তরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলের দুটি পানি সরবরাহ কোম্পানি হোসপাইপ ও স্পি্রংকলার সিস্টেম ব্যবহারের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। টেমস ওয়াটার নামের আরো একটি কোম্পানি একই রকম ব্যবস্হা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। নাউল আরো বলেন, অগভীর, উষ্ণ পানিতে কম অক্সিজেন থাকে, যা মাছ এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণীর জন্য অতীব প্রয়োজন।

ইউরোপের অধিকাংশ দেশের মতো ব্রিটেনেও গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে এবার। গত ১৯ জুলাই তাপমাত্রা পরিমাপ স্কেলে পারদ ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রিতে পৌঁছে। এটি ২০১৯ সালের সর্বোচ্চ রেকর্ড ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসকেও ছাড়িয়ে গেছে। ব্রিটেনের আবহাওয়া অফিস চার দিনে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে। রেডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু ও পানিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ হান্না ক্লোক বলেন, কম বৃষ্টির কারণে নদী ও জলাধারগুলোতে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। সেখান থেকেই ফসলের আবাদ ও খাওয়ার পানি এবং শিল্পকারখানায় ব্যবহারের পানি সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আগস্টে যদি বৃষ্টি না হয়, অর্থাত্ তখন যদি শুষ্ক শীতের মৌসুম থাকে, তাহলে বসন্তকাল ও পরবর্তী গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড বিপদে পড়ে যাব আমরা। তখন সত্যিই আমাদের আর কোনো পানির উত্স থাকবে না। তিনি মনে করেন, হোসপাইপ ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানুষের মনে সচেতনতা তৈরি হবে ঠিকই। তবে এর চেয়ে বেশি জরুরি হলো, জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে অবকাঠামো ও নীতিমালা তৈরিতে বিনিয়োগ বাড়ানো।

এদিকে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে অতিরিক্ত মৃতু্য, আগের সব রেকর্ডের তুলনায় অনেক বেশি। ২৯ জুলাই শেষ হওয়া দুই সপ্তাহের হিসাবে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি মানুষের মৃতু্য হয়েছে। সেই সময়ের মধ্যে ৩ হাজার ৫৮ অতিরিক্ত মৃতের সংখ্যা নিবন্ধন করা হয়েছে সেখানে। সম্পÌতি ইউরোপের অন্যান্য অংশেও অতিরিক্ত মানুষের মৃতু্যর খবর পাওয়া গেছে। জলবায়ু উষ্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ এটির সঙ্গে বাড়িঘর উপযোগী করে খাপ খাইয়ে না নিলে তাপেও মৃতু্য স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ব্রিটিশ সরকারের জলবায়ু নীতি যাচাই-বাছাই করা একটি স্বাধীন সংস্হা, ক্লাইমেট চেঞ্জ কমিটি ধারণা করছে যে, বার্ষিক গরম আবহাওয়া মৃতু্য এখন প্রায় ২ হাজার থেকে ২০৫০-এর দশকে ৭ হাজার বৃদ্ধি পেতে পারে।   এলএবাংলাটাইমস/এলআরটি/আই

[এলএ বাংলাটাইমসের সব নিউজ আরও সহজভাবে পেতে ‘প্লে-স্টোর’ অথবা ‘আই স্টোর’ থেকে ডাউনলোড করুন আমাদের মোবাইল এপ।]