আন্তর্জাতিক

রাশিয়া-ইউক্রেন বন্দী বিনিময়

প্রায় পাঁচ মাস পর রাশিয়া ও ইউক্রেন আবার যুদ্ধবন্দী বিনিময় করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত আরও মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। রাশিয়ার হামলার মোকাবিলা করতে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে আরও সহায়তা চাইছে ইউক্রেন।   প্রায় দুই বছর আগে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়ার তেমন উদাহরণ দেখা যায়নি। তুরস্কের মধ্যস্থতায় কিছু সময়ের জন্য কৃষ্ণ সাগরের মাধ্যমে খাদ্যশস্য রপ্তানি এবং মাঝেমধ্যে ছোট আকারে যুদ্ধবন্দী বিনিময় ঘটেছে। এবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় বুধবার ইউক্রেন ও রাশিয়া আবার বন্দী বিনিময়ের ঘোষণা করেছে। গত প্রায় পাঁচ মাসের বিরতির পর দুই পক্ষই দুইশর বেশি বন্দী বিনিময় করেছে। তবে কোনো পক্ষই এখনো আটক যুদ্ধবন্দিদের মোট সংখ্যা প্রকাশ করেনি। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেন রুশ সামরিক বাহিনীর ২৪৮ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে। অন্যদিকে ইউক্রেন ২৩০ জনকে ফেরত পেয়েছে, যাদের মধ্যে ২২৪ জন সৈন্য ও চার জন বেসামরিক মানুষ আছেন। যুদ্ধের সূচনার পর থেকে এক ধাক্কায় এত বেশি সংখ্যক বন্দী বিনিময় ঘটেনি বলে এখনো পর্যন্ত জানা গেছে। কিয়েভ ও মস্কো আলাদা ভিডিওতে বন্দীদের প্রত্যাবর্তনের দৃশ্য প্রকাশ করেছে। আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মস্কো ও কিয়েভের সঙ্গে শক্তিশালী বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্যই সে দেশ বন্দী বিনিময়ের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করতে পেরেছে। আমিরাত দুই পক্ষের উদ্দেশ্যে আরও মানবিক উদ্যোগ ও যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানসূত্রের প্রস্তাব দিয়েছে। ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এইচইউআর-এর প্রধান কুরিলো বুদানভ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরাসরি ভূমিকা স্বীকার করে বলেন, অনেককাল পর কঠিন বন্দী বিনিময় সম্ভব হলো। প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি দিনটিকে ইউক্রেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করে বন্দী বিনিময়ের আরও উদ্যোগের অঙ্গীকার করেন। রাতের ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, যত বেশি সংখ্যক রুশ নাগরিককে আটক করা যাবে, বন্দী বিনিময় সংক্রান্ত আলোচনা ততই কার্যকর হবে। যুদ্ধবন্দী বিনিময় সত্ত্বেও দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। ইউক্রেনের পূর্বে আভদিভকা শহরে রাশিয়া গত কয়েক মাস ধরে লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। বুধবার সেখানে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঘটেছে বলে স্থানীয় এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। রাশিয়ার বেড়ে চলা হামলার মুখে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি পশ্চিমা বিশ্বের উদ্দেশ্যে সহায়তা চালু রাখার আবেদন জানিয়েছেন। তবে মার্কিন কংগ্রেসে রাজনৈতিক বিবাদের কারণে ইউক্রেনের জন্য প্রস্তাবিত বিশাল সহায়তা আটকে থাকায় তিনি অসহায় বোধ করছেন। নিজে ওয়াশিংটন সফর করেও জেলেনস্কি সেই বিবাদের জট ছাড়াতে পারেননি। মার্কিন সামরিক সহায়তা দ্রুত চালু না হলে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। বিশেষ করে আকাশপথে রাশিয়ার হামলা মোকাবিলা করতে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের গোলাবারুদ কমে আসায় ভবিষ্যতে প্রতিরক্ষার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এক সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজধানী কিয়েভ শহরে আরও কয়েকটি শক্তিশালী হামলা প্রতিহত করার জন্য যথেষ্ট গোলাবারুদ অবশিষ্ট রয়েছে। সের্গেই নাইয়েভ নামের ওই কমান্ডারের মতে, পশ্চিমা বিশ্ব থেকে নতুন করে সরবরাহ শুরু না হলে সেই রক্ষাকবচ অচল হয়ে পড়বে। রাশিয়া ইউক্রেনের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম অকেজো করার জন্য জোরালো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস