আন্তর্জাতিক

যেভাবে একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া যেভাবে মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কটের কারণ হয়েছিল

১০৭ বছর আগে তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার বেলফোর ব্রিটিশ ইহুদি সম্প্রদায়ের জায়নবাদী নেতা ওয়াল্টার রথসচাইল্ডকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বরের এই চিঠি, যার কোনো আইনি ভিত্তি ছিল না, বর্তমানে 'বেলফোর ঘোষণা' নামে পরিচিত।
বেলফোর চিঠিতে বলেন, ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য জাতীয় আবাসন প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করবে ব্রিটিশ সরকার। তবে জাতীয় আবাসকে ইহুদিবাদীরা রাষ্ট্র হিসেবে ব্যাখ্যা ও উপলব্ধি করেতে থাকলে অচিরেই ফিলিস্তিনিদের জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়।
উগান্ডা স্কিম এর আগে ১৯০৩ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সচিব জোসেফ চেম্বারলাইন ব্রিটিশ শাসনের অধীনে পূর্ব আফ্রিকার একটি অংশে ইহুদি আবাসভূমি তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পূর্ব আফ্রিকার গুয়াস এনগিশু মালভূমিতে জায়নবাদীদের আবাসের এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।
'উগান্ডা স্কিম' নামে পরিচিত এই বিষয়টি রাশিয়ায় অ্যান্টি-সেমিটিক পোগ্রোমগুলোতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছিল। ১৯০৫ সালের একটি সম্মেলনে জায়নবাদী নেতৃত্ব অবশ্য এই ধারণাটি প্রত্যাখ্যান করে। তারা ফিলিস্তিনেই একটি আবাসভূমির পক্ষে সমর্থন অব্যাহত রাখে, যা তখন অটোমান সাম্রাজ্যের একটি অংশ ছিল। ১৯১৪ সালে উসমানীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার পরে ব্রিটেন। তখন জায়নবাদীরা একটি সুযোগ অনুভব করে এবং ফিলিস্তিনে একটি স্বদেশের জন্য আরও জোরালোভাবে তদবির শুরু করে। ব্রিটিশদের সেই যুগের রাজনৈতিক কূটকৌশল থেকে স্পষ্ট, অটোমান সাম্রাজ্যকে ভেঙে দিতে এবং এর কিছু অংশকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিল তারা। এই ধারনাই পরবর্তী 'কুখ্যাত বেলফোর ঘোষণা'কে প্রভাবিত করেছিল। বেলফোর ঘোষণার ফলে হাজার হাজার ইউরোপীয় ইহুদি ফিলিস্তিনে চলে যায়। ১৯৩০-এর দশকে ইহুদিরা সশস্ত্র দল গঠন করে এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরু করে। তাদের বাস্তুচ্যুত করতে থাকে। রসায়ন সংযোগ আর্থার বেলফোর ছিলেন একজন ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ, যিনি জায়নবাদের দৃঢ় সমর্থনের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত হয়ে আছেন। বেলফোর ১৯০৫ সাল পর্যন্ত তিন বছর প্রধানমন্ত্রী এবং ১৯১৬ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯০৬ সালে বেলফোর রুশ-ইহুদি রসায়নবিদ চেইম উইজম্যানের সঙ্গে দেখা করেন এবং 'মুগ্ধ হন', যিনি ইংল্যান্ডে জায়নবাদী লবিস্ট ছিলেন। ১৯০৪ সালে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের চাকরি গ্রহণের পর চেইম উইজম্যান ইংল্যান্ডে আবাস গড়েন। ভুট্টা থেকে 'অ্যাসিটোন' দ্রাবক আহরণের একটি পদ্ধতি তৈরি করে তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ যুদ্ধ-উপকরণ শিল্পকে সহায়তা করেছিলেন। আর্টিলারি ব্যারেলের সনাক্তকরণ এবং অবস্থান এড়াতে আর্টিলারি ফায়ারের ধোঁয়া ছাঁকতে 'অ্যাসিটোন' ব্যবহার করা হতো। বেলফোর ঘোষণাটি ছিল চেইম উইজম্যানের 'রাসায়নিক সহায়তার পুরস্কার'। পরবর্তীতে এই উইজম্যান ইসরায়েলের প্রথম প্রেসিডেন্ট হন। তবে সেই অ্যাসিটোনের সংশ্লেষণ আজও ফিলিস্তিনিদের তাড়া করে চলেছে। কারণ গাজায় বর্তমান ইসরায়েলের যুদ্ধ ৩৯৩ তম দিন পর্যন্ত ৪৩,২৫৯ জনকে হত্যা করেছে। ১০১,৮২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে। আরও ১০ হাজার মানুষ ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে। টিআরটি ওয়ার্ল্ড এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস