আন্তর্জাতিক

বিপাকে ওবামা

বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর আশা করা হয়েছিল দেশের বিপজ্জনক জাতিগত বিভেদ নিরসনে সেতুবন্ধন হিসেবে আবির্ভূত হবেন তিনি। কিন্তু ফার্গুসনে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে তার সতর্ক প্রতিক্রিয়া ওই আশাকে সন্দেহে পরিণত করেছে।
গত আগস্টে মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের সেন্ট লুইস কাউন্টির ফার্গুসনে নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর মাইকেল ব্রাউনকে (১৮) গুলি করে হত্যা করেন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ সদস্য ডেরেক উইলসন। গত সোমবার গ্র্যান্ড জুরি জানান, ডেরেক আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হবে না। ওই রায়ে ফার্গুসনসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ ক'টি শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। গতকাল বৃহস্পতিবারও সে বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। গোটা বিষয়ই মার্কিন সমাজের জন্য এক কঠিন পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গরা কর্তৃপক্ষকে অবিশ্বাস করছে, অন্যদিকে শ্বেতাঙ্গরা শহরে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন। ওই রায়ের পর প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, 'আমাদের স্বীকার করতে হবে এটি শুধু ফার্গুসনের ইস্যু নয়, এটি গোটা আমেরিকারই ইস্যু'। তিনি লুটপাট ও অগি্নসংযোগের নিন্দা জানান। একই সঙ্গে বিক্ষুব্ধদের মনোবেদনা বুঝতে পারছেন বলেও জানান তিনি। বিক্ষুব্ধরা মনে করেন, আইনপ্রয়োগকারীরা কৃষ্ণাঙ্গ সন্দেহভাজনদের সঙ্গে খুব বাজে আচরণ করে। ওবামা বলেন, 'এটি হয়তো সব জায়গার ক্ষেত্রে সত্য নয়। আইন প্রয়োগকারী বেশিরভাগ কর্মকর্তার জন্যও প্রযোজ্য নয়। কিন্তু জনসাধারণের মধ্যে এমন ধারণা রয়েছে। এ ধারণা ইচ্ছাকৃত নয়। এ ধারণা বাস্তবতার মধ্যেই নিহিত। যে বাস্তবতা এ দেশে দীর্ঘ সময় ধরে বিরাজ করছে।' মার্কিন শ্বেতাঙ্গ ভোটাররা ওবামার প্রতি যে অবিশ্বাস পোষণ করেন, সে জন্য তার প্রেসিডেন্ট হওয়াটাই কঠিন হতো। কিন্তু তা হয়নি এই কালো ও বাদামি চামড়ার সংখ্যালঘু লোকজনের জন্যই। তারাই তাকে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করিয়েছেন। জাতিগত ইস্যুতে আজকে ওবামার এই সতর্ক অবস্থানে ওই সমর্থকদের অনেকেই তার ওপর হতাশ। তাদের অনেকেই দাবি করছেন, ওবামা যেন ফার্গুসন সফর করে সেখানকার সমস্যাগুলো নিজ কানে শুনে যান। হোয়াইট হাউসও তেমন সফরের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এরিক হোল্ডার ফার্গুসন সফর করেছেন। এরিকও কৃষ্ণাঙ্গ। ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব কালার্ড পিপলের প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস জুলিয়ান বন্ডের মতে, ওবামা খুব চাতুর্যের সঙ্গে এমন অবস্থান নিয়েছেন। বন্ড বলেন, 'কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট' আখ্যায়িত হতে ওবামার ঘোর অপছন্দ রয়েছে। তিনি সব আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট হতে চান। ফার্গুসনের এই ঘটনা ওবামার ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের জন্য দ্বিতীয় বড় চ্যালেঞ্জ। এর আগে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরেক নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর ট্রেভন মার্টিনকে (১৭) গুলি করে হত্যা করে এক নিরাপত্তারক্ষী। তখন ওবামা নিজেকে ওই কিশোরের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তাতে দেশজুড়ে বিতর্ক দেখা দেয়।