ভারত-শাসিত কাশ্মিরে হিজবুল মুজাহিদিনের নেতা বুরহান ওয়ানি এনকাউন্টারে নিহত হওয়ার তিন দিন পরেও গোটা উপত্যকা জুড়ে চরম উত্তেজনা অব্যাহত আছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা আজ তিরিশে পৌঁছেছে।
পুরো কাশ্মিরে স্তব্ধ হয়ে আছে স্বাভাবিক জনজীবন।
রোববার ক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের একটি গাড়ি ঝিলম নদীতে ঠেলে ফেলে দেয়ার পর পুলিশ কর্মীরা ডুবে মারা গেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
পরিস্থিতি সামলাতে দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বিরোধী দলগুলোর সঙ্গেও কথা বলছেন।
শ্রীনগরে রাজ্য সরকার উপত্যকায় শান্তি আনতে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদেরও সাহায্য চেয়েছেন।
মাত্র ২২ বছরের যুবক বুরহান মুজফফর ওয়ানি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মারা যাওয়ার পর কাশ্মিরে যেভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, সাম্প্রতিককালে তার কোনো নজির নেই।
ওয়ানির জানাজায় উপত্যকা জুড়ে মানুষের ঢল নেমেছে, শত শত যুবক পুলিশ ও সেনাদের উদ্দেশে পাথর ছুঁড়েছে।
স্থানীয় মসজিদগুলো থেকে ভারত-বিরোধী স্লোগান তোলা হচ্ছে। চলছে লাগাতার কারফিউ, এবং এই অচলাবস্থা থামার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।
দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং জানিয়েছেন, “ভারত সরকারের ওপর সবার আস্থা রাখা উচিত – স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পাথর ছোঁড়াও এখন থেমেছে, আমরা সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করছি। অমরনাথ তীর্থযাত্রীদের সুরক্ষারও ব্যবস্থা করছি।”
কিন্তু মৃত বুরহান ওয়ানি যেভাবে পুরো কাশ্মিরের ক্ষুব্ধ যুবসমাজকে আবার পথে টেনে এনেছেন, উপত্যকায় বহুকাল সেরকম কিছু ঘটেনি।
ওয়ানি কখনো কোনো জঙ্গি হামলায় অংশ নেননি – কিন্তু ফেসবুক-টুইটারের মাধ্যমে কাশ্মিরের নতুন প্রজন্মকে যেভাবে তিনি আবার ‘উগ্রপন্থায়’ টেনে আনতে পেরেছিলেন তাতে তার পরিচিতি ছিল ‘সোশ্যাল মিডিয়া মিলিট্যান্ট’ নামে।
কাশ্মিরের যুব আন্দোলনের অন্যতম নেতা, যিনি নিজে কয়েক বছর আগেও পাথর ছোঁড়ার অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই তৌসিফ গিলানি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন কাশ্মিরি যুবাদের ক্ষোভটাই এখন বেরিয়ে আসছে মি. ওয়ানির মৃত্যুকে উপলক্ষ করে।
তিনি বলেন, “দেখুন, বুরহান ওয়ানি উগ্রপন্থার নতুন চেহারা হিসেবে ভীষণ বিখ্যাত হয়েছিলেন সন্দেহ নেই, তার মৃত্যুতে যুবকরা তো পথে নামবেই। কিন্তু সেই সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, না-পাওয়া এবং তাদের দাবিদাওয়ার প্রতি দিল্লির লাগাতার উপেক্ষার প্রতিবাদও তারা করছেন এই পথেই। এই বিক্ষোভ তো অকারণে হতে পারে না – সেই কারণটার নিষ্পত্তি না-হলে আমাদের যুবকরা এভাবেই প্রাণ হারাতে থাকবেন।”
এই ক্ষুব্ধ যুবকরাই রোববার পুলিশসুদ্ধু একটি গাড়িকে নদীতে ঠেলে ফেলে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
যদিও অন্যরা কেউ কেউ বলছেন, জনতার ছোঁড়া পাথর থেকে বাঁচতে গাড়ি ঘোরাতে গিয়ে চালকই গাড়িটি নদীতে নিয়ে ফেলেন।
যাই ঘটে থাকুক, নিরাপত্তা বাহিনী ও জনতার মধ্যে সংঘর্ষ এখনও চরমে – শ্রীনগর থেকে বিবিসির রিয়াজ মসরুর বলছেন, মানুষ কারফিউ ভেঙে আজও রাস্তায় নামছেন।
অন্য দিকে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো দাবি করছে, বুরহান ওয়ানিকে মারা তাদের লক্ষ্য ছিল না।
কাশ্মীরে সিআইডি-র মহানির্দেশক সি এম সহায় যুক্তি দিচ্ছেন শুধু বুরহান ওয়ানির কারণে এই প্রতিবাদ সেটা বিশ্বাস্য নয়।
তিনি বলেন, “সারা দুনিয়াতেই যুবকরা নানা কারণে বঞ্চিত, ক্ষুব্ধ – কাশ্মীরও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে তাদের সেই সঙ্গে তাদের বুঝতে হবে বুরহান ওয়ানিকে আমরা মারতে চাইনি, তারা আত্মসমর্পণ করুক বা জীবিত গ্রেফতার হোক সেটাই আমরা চাই। কিন্তু সব সময় তা তো সম্ভব হয় না।”
উত্তপ্ত কাকাশ্মির অবশ্য এখন এই সব কথায় আদৌ কর্ণপাত করছে বলে মনে হচ্ছে না।
পরিস্থিতি শান্ত করতে শ্রীনগরে মেহবুবা মুফতির সরকার হুরিয়ত কনফারেন্সের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদেরও সাহায্য চেয়েছেন – কিন্তু এখনো কোনো সাড়া মেলেনি তাদের কাছ থেকেও।
এলএবাংলাটাইমস/আই/এলআরটি
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা আজ তিরিশে পৌঁছেছে।
পুরো কাশ্মিরে স্তব্ধ হয়ে আছে স্বাভাবিক জনজীবন।
রোববার ক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের একটি গাড়ি ঝিলম নদীতে ঠেলে ফেলে দেয়ার পর পুলিশ কর্মীরা ডুবে মারা গেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
পরিস্থিতি সামলাতে দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বিরোধী দলগুলোর সঙ্গেও কথা বলছেন।
শ্রীনগরে রাজ্য সরকার উপত্যকায় শান্তি আনতে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদেরও সাহায্য চেয়েছেন।
মাত্র ২২ বছরের যুবক বুরহান মুজফফর ওয়ানি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মারা যাওয়ার পর কাশ্মিরে যেভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, সাম্প্রতিককালে তার কোনো নজির নেই।
ওয়ানির জানাজায় উপত্যকা জুড়ে মানুষের ঢল নেমেছে, শত শত যুবক পুলিশ ও সেনাদের উদ্দেশে পাথর ছুঁড়েছে।
স্থানীয় মসজিদগুলো থেকে ভারত-বিরোধী স্লোগান তোলা হচ্ছে। চলছে লাগাতার কারফিউ, এবং এই অচলাবস্থা থামার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।
দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং জানিয়েছেন, “ভারত সরকারের ওপর সবার আস্থা রাখা উচিত – স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পাথর ছোঁড়াও এখন থেমেছে, আমরা সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করছি। অমরনাথ তীর্থযাত্রীদের সুরক্ষারও ব্যবস্থা করছি।”
কিন্তু মৃত বুরহান ওয়ানি যেভাবে পুরো কাশ্মিরের ক্ষুব্ধ যুবসমাজকে আবার পথে টেনে এনেছেন, উপত্যকায় বহুকাল সেরকম কিছু ঘটেনি।
ওয়ানি কখনো কোনো জঙ্গি হামলায় অংশ নেননি – কিন্তু ফেসবুক-টুইটারের মাধ্যমে কাশ্মিরের নতুন প্রজন্মকে যেভাবে তিনি আবার ‘উগ্রপন্থায়’ টেনে আনতে পেরেছিলেন তাতে তার পরিচিতি ছিল ‘সোশ্যাল মিডিয়া মিলিট্যান্ট’ নামে।
কাশ্মিরের যুব আন্দোলনের অন্যতম নেতা, যিনি নিজে কয়েক বছর আগেও পাথর ছোঁড়ার অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই তৌসিফ গিলানি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন কাশ্মিরি যুবাদের ক্ষোভটাই এখন বেরিয়ে আসছে মি. ওয়ানির মৃত্যুকে উপলক্ষ করে।
তিনি বলেন, “দেখুন, বুরহান ওয়ানি উগ্রপন্থার নতুন চেহারা হিসেবে ভীষণ বিখ্যাত হয়েছিলেন সন্দেহ নেই, তার মৃত্যুতে যুবকরা তো পথে নামবেই। কিন্তু সেই সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, না-পাওয়া এবং তাদের দাবিদাওয়ার প্রতি দিল্লির লাগাতার উপেক্ষার প্রতিবাদও তারা করছেন এই পথেই। এই বিক্ষোভ তো অকারণে হতে পারে না – সেই কারণটার নিষ্পত্তি না-হলে আমাদের যুবকরা এভাবেই প্রাণ হারাতে থাকবেন।”
এই ক্ষুব্ধ যুবকরাই রোববার পুলিশসুদ্ধু একটি গাড়িকে নদীতে ঠেলে ফেলে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
যদিও অন্যরা কেউ কেউ বলছেন, জনতার ছোঁড়া পাথর থেকে বাঁচতে গাড়ি ঘোরাতে গিয়ে চালকই গাড়িটি নদীতে নিয়ে ফেলেন।
যাই ঘটে থাকুক, নিরাপত্তা বাহিনী ও জনতার মধ্যে সংঘর্ষ এখনও চরমে – শ্রীনগর থেকে বিবিসির রিয়াজ মসরুর বলছেন, মানুষ কারফিউ ভেঙে আজও রাস্তায় নামছেন।
অন্য দিকে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো দাবি করছে, বুরহান ওয়ানিকে মারা তাদের লক্ষ্য ছিল না।
কাশ্মীরে সিআইডি-র মহানির্দেশক সি এম সহায় যুক্তি দিচ্ছেন শুধু বুরহান ওয়ানির কারণে এই প্রতিবাদ সেটা বিশ্বাস্য নয়।
তিনি বলেন, “সারা দুনিয়াতেই যুবকরা নানা কারণে বঞ্চিত, ক্ষুব্ধ – কাশ্মীরও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে তাদের সেই সঙ্গে তাদের বুঝতে হবে বুরহান ওয়ানিকে আমরা মারতে চাইনি, তারা আত্মসমর্পণ করুক বা জীবিত গ্রেফতার হোক সেটাই আমরা চাই। কিন্তু সব সময় তা তো সম্ভব হয় না।”
উত্তপ্ত কাকাশ্মির অবশ্য এখন এই সব কথায় আদৌ কর্ণপাত করছে বলে মনে হচ্ছে না।
পরিস্থিতি শান্ত করতে শ্রীনগরে মেহবুবা মুফতির সরকার হুরিয়ত কনফারেন্সের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদেরও সাহায্য চেয়েছেন – কিন্তু এখনো কোনো সাড়া মেলেনি তাদের কাছ থেকেও।
এলএবাংলাটাইমস/আই/এলআরটি