আন্তর্জাতিক

গাজায় নিহত ১৬ জনের মধ্যে ১৫ জন বেসামরিক নাগরিক

এক দশক ধরে ফিলিস্তিনি ব্যাংককর্মী শাদি সালামা আল-রায়েস গাজা সিটির অন্যতম প্রধান পাড়ায় একটি উঁচু আধুনিক ব্লকে তাঁর ফ্ল্যাট বন্ধক নেন। ইসরায়েলি ধ্বংসাত্মক হামলায় এখন ফ্ল্যাটটি কালো ধোঁয়া ও ধুলার মেঘে ঢেকে গেছে। কারণ, ভবনটি ধসে পড়েছে। পরিবার এখন নিঃস্ব হয়ে গেছে। গাজা শহরে অবিরাম আক্রমণ চালাচ্ছে দখলদার বাহিনী। এতে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। আল-রায়েস বলেন, ‘আমি আশঙ্কা করছি, গাজা শহর থেকে জনসংখ্যাকে স্থায়ীভাবে নির্মূল করার লক্ষ্যে এই ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। কখনও ভাবিনি গাজা শহর ছেড়ে যাব, কিন্তু বিস্ফোরণ অবিরাম চলছে। এই অবস্থায় আমার সন্তানদের নিরাপত্তার ঝুঁকি নিতে পারি না। তাই আমি জিনিসপত্র গুছিয়ে দক্ষিণে চলে যাব।’
গার্ডিয়ান জানায়, গাজা শহরের জেইতুন, তুফা, শেজাইয়া, শেখ আল-রাদওয়ান এলাকাসহ অন্যান্য এলাকার বড় বড় ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। স্বাধীন সহিংসতা-ট্র্যাকিং সংস্থা অ্যাক্লেডের জরিপে দেখা গেছে, গত মার্চ মাসে গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে প্রতি ১৬ ফিলিস্তিনির ১৫ জনই বেসামরিক নাগরিক। ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই বছরের মে মাসের মধ্যে বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যা ৮৩ শতাংশ। ফিলিস্তিনের স্থানীয় এনজিও নেটওয়ার্কের মতে, গাজা শহরের ৬৫ শতাংশের বেশি ভবন এবং বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের মুখপাত্র থামিন আল-খেতান এক বিবৃতিতে বলেছেন, জনসংখ্যা স্থানান্তরের এই ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা জাতিগত নির্মূলের সমতুল্য। গাজা সিটিতে ব্যাপক হামলা, নিহত আরও ৫৩
গাজা শহরকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ইসরায়েল রোবট, বিস্ফোরক যানবাহন এবং প্যারাট্রুপার ব্যবহার করছে। গত মার্চের শেষ থেকে গাজা শহরের প্রায় আট লাখ বেসামরিক লোক বোমাবর্ষণ, অনাহার এবং চিকিৎসা বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫৩ জনের প্রাণ গেছে। গত ২৩ মাসে অন্তত ৬৫ হাজার ২০৮ জন নিহত এবং এক লাখ ৬৬ হাজার ২৭১ আহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, আগস্টে ইসরায়েল তাদের বড় অভিযান শুরু করার পর থেকে গাজা শহরের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা, অর্থাৎ প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। রয়টার্স জানায়, ইসরায়েলের অবরোধের ফলে শত শত আহত শিশু চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছে। জাতিসংঘ বলছে, আধুনিক ইতিহাসে গাজায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিশু অঙ্গহীন হয়ে পড়েছে। চিকিৎসার জন্য ইসরায়েল মাত্র ১৭৫ শিশুকে দেশত্যাগের অনুমতি দিয়েছে। গাজা শহরকে সম্পূর্ণ দখল করার জন্য ইসরায়েল যখন অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, তখন দক্ষিণ গাজার তথাকথিত ‘মানবিক অঞ্চল’-এর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে পর্তুগাল
এবার ইউরোপের দেশ পর্তুগাল ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। আজ রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা আসবে বলে শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, জাতিসংঘের আসন্ন উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনের আগেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। এর আগে গত বছরের মে মাসে প্রতিবেশী স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ সদস্য দেশের মধ্যে এখনও অল্প কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আরও ৬৪০ কোটি ডলারের অস্ত্র দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
গাজা দখল পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দখলদার রাষ্ট্রটিকে আরও ৬৪০ কোটি ডলারের অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। নতুন এই চালানের মধ্যে নিয়মিত অস্ত্র ও গোলাবারুদের পাশাপাশি হেলিকপ্টার ও ট্যাঙ্ক থাকছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদরদপ্তর পেন্টাগনের একাধিক কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে রয়টার্স। প্রস্তাবিত নতুন এই চালানে ৩০টি এএইচ-৬৪ অ্যাপাচি অ্যাটাক হেলিকপ্টার এবং তিন হাজার ২৫০টি ইনফ্যান্ট্রি অ্যাসল্ট ভেহিক্যাল বা ট্যাঙ্ক রয়েছে।