আন্তর্জাতিক

খেলাচ্ছলে পশ্চিমাদের ‘অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ’ বুঝাচ্ছে পাকিস্তানি মেয়ে নশরা

পারিবারিভাবে বিয়ের (অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ) আয়োজন করা মানেই জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়া, পশ্চিমাদেশসহ বিভিন্ন জায়গার মানুষের মনে এমন একটা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। এই ভুল ভাঙতে একটি বোর্ড গেম তৈরি করে আলোচনায় এসেছেন পাকিস্তানি ডিজাইনার নশরা বালাগমওয়ালা।

একজন মহিলা ঘটক বোর্ড গেম ‘অ্যারেঞ্জড!’-এর প্রধান চরিত্র। খেলায় তিনজন মেয়ের বিয়ের আয়োজনের চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু ওই তিন মেয়ে ঘটক-আন্টির চোখে ধুলো দিয়ে নিজেদের বিয়ে আরও পিছিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে থাকে। এটাই খেলার মূল বিষয়।

পশ্চিমের বাসিন্দাদের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে আরও পরিষ্কার ধারণা তৈরি করাই ছিল নশরার মূল উদ্দেশ্য।

মূলত বিয়ের আগে মেয়েদের উপর চাপিয়ে দেয়া বিধিনিষেধ নিয়ে আরও খোলাখুলি আলোচনা করতে চেয়েছিলেন নশরা। যেমন- অনেক সময় ধরেই নেয়া হয় ‘ভাল মেয়ে’ মানেই সে চা বানাতে জানবে এবং তার কোনো ছেলে বন্ধু থাকবে না।

আমেরিকার ‘রোড আইল্যান্ড স্কুল অব ডিজাইন’-এ পড়ার সময় গেম তৈরির ভাবনাটা প্রথম নশরার মাথায় আসে। বছরের শেষে নিজের দেশে ফেরার কথা ছিল তার। নশরাকে আগেই বাড়ি থেকে জানানো হয়েছিল, তার জন্য বেশ কিছু সম্বন্ধ এসেছে।

সেই সময় বিয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য, সম্ভাব্য পাত্রদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঢুঁ মেরে তাঁদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর কিছু বের করার চেষ্টা করেন তিনি। এভাবে একাধিকবার নিজের বিয়ে পিছিয়েও দেন নশরা।

তখনই তার মাথায় আসে, এই নিয়ে একটা মজার গেম বানালে মন্দ হয় না। প্রথমে আমেরিকায় বসবাসরত দক্ষিণ এশিয় বংশোদ্ভূত বন্ধুবান্ধবদের গেমটি খেলতে দেন তিনি। এক মার্কিন বন্ধু গেমটি খেলে তাকে জানান, প্রথমে তার কাছে ব্যাপারটা খানিক হাস্যকর ঠেকলেও পরে তিনি নশরার ভাবনাটা উপলব্ধি করতে পারেন।

তবে বিয়ের জন্য মেয়েদের যে জোর করা হয়ে থাকে, সে বিষয়টিও একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না নশরা। অনেকের সঙ্গেই এ রকম হয়ে থাকে। কিন্তু, সম্বন্ধ করে বিয়ের সঙ্গে জোর করার বিষয়টাকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন নশরা।

নশরার দাবি, প্রচলিত ধারার বিরুদ্ধে তিনি কথা বলছেন না। তার মতে, ‘পারিবারিক সূত্রে কোনো পুরুষ এবং নারীর আলাপ করিয়ে দেয়ার মধ্যে মন্দ কিছু নেই। পাকিস্তানের মতো রক্ষণশীল সমাজের ক্ষেত্রে, ছেলেমেয়েদের মধ্যে বন্ধুত্বকে খুব একটা ভালো চোখে দেখা হয় না।’

তবে এমন ক্ষেত্রে যেন মেয়েদের কোনো রকম আপসের পথে হাঁটতে বাধ্য না করা হয়, এইটুকুই নশরার দাবি। মেয়েরা যেন বিয়ে তখনই করতে পারে, যখন সে তার জন্য পুরোপুরি তৈরি। এটুকু স্বাধীনতা যেন থাকে তাদের।

নশরার গেম জনপ্রিয় হওয়ার পর সংবাদমাধ্যমে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। পরিবার মেয়ের কর্মকাণ্ডে খুশি হলেও আশপাশের লোকজন বাঁকা নজরেই দেখেছেন বিষয়টিকে।

নশরা মজা করে বলছেন, ‘বিবাহযোগ্য মেয়েদের ঠিক যা-যা গুণ থাকা উচিত, তার প্রায় কোনোটাই আমার নেই। আর এই গেমটি তৈরি করার পর তো ঘটক-আন্টিদের আরও বিরাগভাজন হলাম!’

সে যাই হোক না কেন, এই প্রজন্মের অনেকের কাছ থেকেই ভালো প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন নশরা। বিয়ে নিয়ে মেয়েদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার জন্য অনেক পুরুষও তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এমনকি অনেকের থেকে বিয়ের প্রস্তাবও পেয়েছেন নশরা।


এলএবাংলাটাইমস/আই/এলআরটি