লাইফ স্টাইল

সবসময় ঝগড়া বাঁধানোর কারণ

বারবার কলহে জড়িয়ে যাওয়ার কারণ হয়ত আপনি নিজে। ঝগড়া, উচ্চ স্বরে কথা বলা, রাগারাগি করা- নির্দিষ্ট কারণে এই ধরনের আচরণের প্রকাশ হয়ত মেনে নেওয়া যায়। তবে সবসময় যদি দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতিতে পড়তে হয় তাহলে নিজের বাচনভঙ্গিসহ নানান বিষয় নজর দেওয়ার কথা বলছেন মনোবিদরা। সবাইকে খুশি রাখা যেমন যায় না তেমনি সবসময় তর্ক এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না। তবে যারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব এড়ানোর চেষ্টা করেন, তাদের মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কম। কথাগুলো বলেন, নিউ ইয়র্ক’য়ের মানসিক স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞ মিনা বি। ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত তার লেখা একটি প্রতিবেদনে জানান, তাদের মাথায় সবসময় খেলতে থাকে- দ্বন্দ্ব থেকে দূরে থাকতে সবাইকে খুশি রাখতে হবে। সেটা পকেটের পয়সা খরচ করে হলেও। তবে এটা করতে গিয়ে তারা এক প্রকার স্নায়বিক চাপে জর্জরিত থাকেন। যে কারণে সবাইকে খুশি রাখতে গিয়ে মনমালিন্যে জড়িয়ে পড়েন। আরেকটি কারণ হল, যোগাযোগের দুর্বলতা। সেটা হতে পারে কথায়, মুখ ও দেহ ভঙ্গী কিংবা লেখা বা ইশারায়। ফলে অনেকসময় ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। তখন তর্ক লাগলে, এই ধরনের মানুষ চুপ করে যায় বা ঠিক মতো কথা বলতে পারে না। এটা আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাবের কারণেই হয়। ফলে তারা নিজেদের সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিতে পারে না বা নিজের প্রয়োজনটা সহজে বোঝাতে পারে না। সেখান থেকে তৈরি হয় কলহ, তর্ক বা ঝগড়া। একজন থেরাপিস্ট হিসেবে এই মনোবিদ দ্বন্দ্ব এড়ানো ও দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ার বিষয়ে যেসব সমস্যা দেখছেন সেগুলোর একটা তালিকাও তিনি তৈরি করেছেন। যেটা করতে ইচ্ছে হয় না, সেটায় সম্মতি দেওয়া। আর শেষ পর্যায়ে গিয়ে বাতিল করা। নিজের ব্যাপারে সঠিক সীমারেখা অন্যদের মাঝে তৈরি করতে না পারার এই প্রবণতা থেকেই অন্যের মাঝে বিরক্তির কারণ হয়ে যান আপনি। ‘সাইলন্ট ট্রিটমেন্ট’ বা চুপ করে যাওয়া এক ধরনের মানসিক আঘাত থেকে হয়। অতি আবেগ থেকেও মুখের ভাষা হারিয়ে যায়। তবে এভাবে চুপ করে যাওয়ার কারণে অন্যরা আপনার ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণা পায় না, বা আপনি নিজেও অন্যদের বোঝাতে পারেন না। এই আবেগ অবহেলা করা, যে কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাজে প্রভাব ফেলে। সরাসরি কথা না বলে বা জিজ্ঞেস না করে, অন্যের সম্পর্কে নিজে নিজেই ধারণা করে নেওয়া আর সিদ্ধান্ত নেওয়া। নিজেকে ঠিকমতো প্রকাশ না করা বা ঠিক মতো যোগাযোগ না করা। ফলে নিজের প্রয়োজন না মিটলে মন খারাপ করা। আর এসব বিষয়গুলো ঘটতে থাকলে ঝগড়া, দ্বন্দ্ব বা তর্ক লেগেই থাকবে। এই সমস্যা থেকে উদ্ধার পেতে তিনটি পদ্ধতি অবলম্বন করার পরামর্শ দেন মিনা বি। কীভাবে যোগাযোগ করছেন সেটাতে নজর দেওয়া
সব সময় শব্দ উচ্চরণ করে নিজের সম্পর্কে বোঝাতে হবে। অন্যরা আপনার সমস্যা এমনি এমনি বুঝে যাবে সেটা আশা করা বাদ দিন। অন্যরা ভুল আন্দাজ করার আগেই নিজের বিষয় খুলে বলতে হবে। আর রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা জরুরি।বিভ্রান্তি তৈরি হলে কোনো কিছুই সমাধান হয় না। তাই যা বলা প্রয়োজন সেটা বলতে হবে, আর অবশ্যই ভদ্র ও বিনয়ের সঙ্গে। অন্যকে খুশি করার বিষয়ে লক্ষ্য করা
নিজের ভেতরে ভয়, দ্বন্দ্ব বা মানসিক চাপ ছাপিয়ে যেতে পারলে অন্যকে খুশি করার মতো বিষয়গুলো আনন্দদায়ক হয়। তবে সবসময় অন্যকে খুশি করতে গিয়ে নিজের প্রয়োজনটা মেটানো সম্ভব হয় না। এটা অনেকটা নিজেকেই অবহেলা করা। এই অভ্যাস নিয়ন্ত্রণের জন্য যে কোনো কিছুতে সাথে সাথে সিদ্ধান্ত না নিয়ে বরং সময় নিতে হবে। তারপর ভেতর থেকে ‘হ্যাঁ’ বলতে ইচ্ছে হলে তখনই সায় দিতে হবে। নয়তো ভদ্রতার সাথে ‘না’ করে সুন্দর করে বলতে হবে, কেনো আপনি সেটা করতে চাচ্ছেন না। কোনো কিছু প্রকাশের আগে ভাবনা চিন্তাগুলো লেখা
সত্যি কথা বলতে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কৌশল রপ্ত করাটা সহজ বিষয় নয়। ধীরে ধীরে এই বিষয়ে উন্নতি ঘটাতে হয়। তাই কারও সঙ্গে যোগাযোগ করার আগে নিজের ভাবনাগুলো লিখে নিয়ে পড়ে দেখতে হবে ভাব প্রকাশ ঠিক মতো হচ্ছে কি-না। সবচেয়ে ভালো হয় কথাগুলো রেকর্ড করে শোনা। তাহলে নিজেই বুঝতে পারবেন কোনো রুঢ় ভাব ফুটে উঠছে নাকি কোনো অপ্রিতিকর শব্দ ব্যবহার করছেন। অথবা ভাব ঠিক মতো প্রকাশ পাচ্ছে কি-না। দুর্বলতাগুলো নিজেই আবিষ্কারের পর সেগুলো সঠিকভাবে ঠিকঠাক করার চেষ্টা করে যেতে হবে। যে কোনো সম্পর্ক উন্নত করার পাশাপাশি ধরে রাখতে দ্বন্দ্ব এড়ানোর কৌশল রপ্ত করা জরুরি। যখন বুঝবেন সংঘাত এড়ানোর বিষয়গুলোই ঝগড়ার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে তখন সে বিষয়ে নজর দিয়ে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হবে।


এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস