লস এঞ্জেলেস

লস এঞ্জেলেস বাংলাদেশি কমিউনিটিতে করোনার ভয়াবহতা: ১ মাসে আক্রান্ত ৫০০, মৃত্যু ৬

লস এঞ্জেলেসে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার সংক্রমণ। এই সংক্রমণের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার ছয় কাউন্টির প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির মাঝেও। আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এলএ বাংলাটাইমসের পক্ষ থেকে চালানো পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত একমাসে ভেনচুরা কাউন্টি, লস এঞ্জেলেস কাউন্টি, অরেঞ্জ কাউন্টি, রিভারসাইড কাউন্টি, সান বার্নার্ডিনো কাউন্টি, সান ডিয়েগো কাউন্টিতে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৫০০ বাংলাদেশি প্রবাসী। প্রাণঘাতি এই ভাইরাসে মারা গেছেন ৬ জন। এছাড়া বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৫ জন। এর মধ্যে আশংকাজনক অবস্থায় ভেন্টিলেশনে আছেন ৪ জন। পরিসংখ্যানের তথ্যে দেখা যায়, গত ২৫ নভেম্বর থ্যাঙ্কস গিভিং ডে থেকে গতকাল রবিবার (২৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত বাংলাদেশি প্রবাসী কমিউনিটির মধ্যে অন্তত ৫০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসের ছয় কর্মকর্তাও রয়েছেন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন লস এঞ্জেলেস কাউন্টির মাসউদ উন্নবী, লুৎফা বেগম এবং ওয়াহিদ করিম খোকন, অরেঞ্জ কাউন্টির আব্দুস সালাম ও নাজমুল হক চৌধুরী হেলাল, সান বার্নার্ডিনো কাউন্টির নিত্যানন্দ বৈদ্য নামের ছয় প্রবাসী বাংলাদেশি। আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অনেকে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। কেউ এখনো হাসপাতালে রয়েছেন। আক্রান্তদের প্রায় সবাই সর্দি, কাঁশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন উপসর্গে ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নভেম্বর মাস থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণেই সম্প্রতি কমিউনিটিতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকে নিজ নিজ বাসায় থ্যাংকস গিভিং ডে ‍উপলক্ষে পার্টি আয়োজন করেন, অনেকেই ব্যাচেলর বাসায় রুম শেয়ার করে থাকেন, অনেক বিল্ডিংয়ে একাধিক পরিবার থাকায় তারা একত্রে পার্টি আয়োজন করেন। এর মধ্যে কেউ আক্রান্ত হলেও সেই তথ্য গোপন করে বাইরে বের হোন, তাই সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে অধিক আক্রান্ত এলাকার মধ্যে রয়েছে সানফান্ডো ভ্যালি, নর্থ হলিউড, লস এঞ্জেলেস বাঙালি পাড়া, লংবিচ, বয়না পার্ক ও আরবাইন সিটি। এদিকে সংক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়ায় লস এঞ্জেলেসের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। অধিকাংশ হাসপাতালে সিট খালি নেই। জরুরি বিভাগের আসন ও পূর্ণ হয়ে গেছে। হাসপাতাল থেকে অনেক রোগীকে অক্সিজেন দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ভয়াবহতা এড়াতে সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন কমিউনিট নেতৃবৃন্দ। রবিবার পর্যন্ত ভেনচুরা কাউন্টিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫০ জন। লস এঞ্জেলেস কাউন্টিতে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৩৮৭ জন, মারা গেছেন  ৪৪ জন। অরেঞ্জ কাউন্টিতে আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ৮৮ জন, মারা গেছে ১ জন। সান বার্নার্ডিনো কাউন্টিতে আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ২৯৯ জন, মারা গেছে ৮ জন। রিভারসাইড কাউন্টিতে আক্রান্ত হয়েছে ২৬৭০ জন। সান ডিয়েগো কাউন্টিতে আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ১৩২ জন।  কমিউনিটির উদ্দেশ্যে ডাক্তার নাসিমার বিশেষ বার্তা: এই পরিস্থিতিতে প্রবাসী কমিউনিটির জন্য একটি বিশেষ ভিডিও বার্তা দিয়েছেন সংক্রামক রোগব্যাধির অ্যান্টিবায়োটিক স্টুয়ার্ডশিপ প্রোগ্রামের চেয়ারম্যান এবং সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ‌ চিকিৎসক ডা. নাসিমা বেগম। ভিডিও বার্তায় এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।  তিনি বলেন, প্রথমত নিজের সংগ্রহে একটি পালস অক্সিমিটার রাখতে হবে। যার মাধ্যমে খুব দ্রুত পালস এবং অক্সিজেন লেভেল দেখা যায়। এতে কারো মধ্যে করোনার সংক্রমণ দেখা দিলে যাতে নিজের পালস এবং অক্সিজেন লেভেল দ্রুত দেখে নিতে পারেন। এর ফলে ডাক্তার দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারবে। এছাড়া উপসর্গ দেখা দিলে বিশ্রাম নিতে হবে। প্রচুর তরল খাবার যেমন দুধ, স্যুপ, গ্লুকোজ বা পানি পান করতে হবে। জ্বর, সর্দি, কাঁশি এরকম উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে। ডাক্তারের ইমার্জেন্সি কন্টাক্ট নম্বর সাথে রাখতে হবে। আক্রান্ত হলে সুস্থ হওয়ার পর পরিবারের অন্য সদস্যদের এবং যে দেখাশোনার দায়িত্বে যে ছিলো তার খেয়াল রাখতে হবে। কোনো উপসর্গ দেখা দিলে বরাবরের মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর অবস্থা গুরুতর হলে 911 এ কল করতে হবে। যারা করোনা আক্রান্তদের সেবা করবেন তাদের সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক, গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে এবং রোগী সুস্থ হওয়ার পর সেবাকারীকে ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে। এক বাসায় একসাথে কয়েকজন থাকলে এর মধ্যে কারো উপসর্গ দেখা দিলে সেটি গোপন রাখা যাবে না। বরং অন্য কাউকে দূরত্ব বজায় রাখতে পরামর্শ দিতে হবে। কারো করোনা পজিটিভ হলে সপ্তাহখানেক আগে থেকে যাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাদেরও সতর্ক থাকতে হবে। [কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এলএ বাংলা টাইমসের এই প্রতিবেদন তৈরী করা হয়েছে। তাদের তথ্যে আক্রান্তের এই পরিসংখ্যান করা হয়েছে। এই পরিসংখ্যান কোনো একাডেমিক তথ্য নয়।  এই পরিসংখ্যান ও প্রতিবেদন তৈরীতে সহযোগিতা করেছেন লস এঞ্জেলেস প্রবাসী কমিউনিটি এক্টিভিস্ট সোহেল রহমান বাদল, আব্দুল মান্নান, প্রবাসী কমিউনিটির সিনিয়র এক্টিভিস্ট মুমিনুল হক বাচ্চু, বাফলা প্রেসিডেন্ট শিপার চৌধুরী, জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব ক্যালিফোর্নিয়ার সেক্রেটারি বদরুল আলম মাসুদ, ফেন্ডস ক্লাবের সভাপতি ফেরদৌস খান, ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ বাছিত, অরেঞ্জ কাউন্টি এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রফিকুল হক রাজু, সেক্রেটারি রেজাউল হক রেজা, লিটল বাংলাদেশ থেকে কমিশনার মুজিব সিদ্দিকী, আনন্দমেলার ফাউন্ডার মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশি আমেরিকান সোসাইটির সেক্রেটারি হুমায়ুন কবির, সান দিয়েগোর বাসিন্দা আবু কাজী রুবেল, বাংলাদেশি কমিউনিটি অব ইংল্যান্ড এম্পায়ারের প্রেসিডেন্ট মেহেদী সাবিন সেলিম, লেখক সাহিত্যিক বানি দিয়াজ প্রমুখ। এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো অনেকেই তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন]