লস এঞ্জেলেস

গৃহহীনদের ক্যাম্প থেকে নিখোঁজ নারীর মরদেহ উদ্ধার, শোকে ভেঙে পড়েছে পরিবার

লস এঞ্জেলেসের ওয়েস্টলেক জেলায় একটি গৃহহীনদের ক্যাম্প থেকে দুইজনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় শোকস্তব্ধ একটি পরিবার। ৪৬ বছর বয়সী লুক্রেশিয়া ম্যাসিয়াস বারাজাস, যিনি কয়েকদিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন, ১২ মে একটি তাবুর ভিতর থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার হন। তাবুটি ভেতর থেকে বন্ধ ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। তার সঙ্গেই উদ্ধার করা হয় এক পুরুষের মরদেহ, যার পরিচয় এখনও প্রকাশ করেনি লস এঞ্জেলেস কাউন্টি মেডিকেল এক্সামিনারের অফিস। প্রতিবেশীরা জানান, মরদেহগুলোর মধ্যে অন্তত একটি আংশিকভাবে কুকুরের কামড়ে খেয়ে ফেলা হয়েছিল। ঘটনাটি ঘটে হান্টলি সার্কেলের পাশে একটি ক্যাম্পে, যা শহরের ডাউনটাউন এলাকার কাছাকাছি। কয়েকদিন ধরে বারাজাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে তার পরিবার মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে ওই তাবু পর্যন্ত পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তাদের প্রিয়জন আর বেঁচে নেই। মায়ের মৃত্যুতে শোকে কাতর হয়ে পড়েন তার সন্তানরা। এক মেয়ে ভিডিওতে দেখা যায়, তাবুর বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। আমেলি বেসেরা, বারাজাসের মেয়ে, বলেন, “আমার বোন আমাদের ফোন করে জানায় যে মা মারা গেছেন। আমরা যেন বোঝতেই পারছিলাম না এটা কীভাবে ঘটল।  বারাজাস ছিলেন একজন সাবেক আর্মি সদস্য এবং ছয় সন্তানের মা। মেয়েরা জানান, মৃত্যুর কয়েকদিন আগেই তারা মায়ের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। “আমি চাই মানুষ জানুক, মা গৃহহীন বা মাদকাসক্ত ছিলেন না। সেটা একেবারেই সত্য নয়,” বলেন বেসেরা। “অনেকে এমন ধারণা করছেন, কিন্তু এটা একদমই ঠিক নয়। মা শুধু ভুল জায়গায়, ভুল সময়ে ছিলেন।” এলাকার এক বাসিন্দা জানান, “যখন মেয়েটির আর্তনাদ শুনলাম, আমাদের সবার শরীর কেঁপে উঠেছিল। আমরা তখনই বুঝে গিয়েছিলাম, বাইরে কেউ মারা গেছে।” ওই গৃহহীন ক্যাম্পটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলছেন, এই এলাকাটি অপরাধ, মাদক, নিরাপত্তাহীনতা ও অবাধ পশুর আক্রমণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এক প্রতিবেশী জানান, তার কুকুরগুলোও ওই ক্যাম্পে থাকা প্রাণীদের আক্রমণের শিকার হয়। পুলিশকে জানিয়েও কোনও ব্যবস্থা পাননি তিনি। “এই জায়গাটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। মানুষ নিরাপদ বোধ করে না, অথচ কিছুই করা হচ্ছে না,” বলেন তিনি। ক্যালিফোর্নিয়া রাইজিং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা রাউল ক্লারোস বলেন, “পাশের লোকেরা বারবার অভিযোগ করেছে এই ক্যাম্প ও কুকুরদের নিয়ে। সিটি কর্তৃপক্ষ যদি ব্যবস্থা নিত, তাহলে হয়তো আজ এই দুইজন মানুষ বেঁচে থাকতেন।” আরেক বাসিন্দা জানান, ওই ক্যাম্পে বেআইনিভাবে বিদ্যুৎ সংযোগও ছিল, এবং জানুয়ারিতে একটি আরভি গাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একজন মারা গেলেও ক্যাম্পটি এখনও চালু রয়েছে। এ ঘটনায় লস এঞ্জেলেসের মেয়র কারেন ব্যাস এক বিবৃতিতে বলেন, “এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে দেয় যে আমাদের গৃহহীনতা নিয়ে চলমান মানবিক সংকট দ্রুত সমাধানের প্রয়োজন আছে। আমরা কাউন্সিল অফিসের সঙ্গে কাজ করে এই সমস্যার সমাধান ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা অব্যাহত রাখব।” বারাজাস এবং অজ্ঞাতপরিচয় পুরুষের মৃত্যুর কারণ এখনও তদন্তাধীন। বারাজাসের পরিবারের জন্য অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খরচ বহনের উদ্দেশ্যে একটি গোফান্ডমি পেজ খোলা হয়েছে।   এলএবাংলাটাইমস/ওএম