লস এঞ্জেলেস

লস এঞ্জেলেসে 'ম্যাস ডিপোর্টেশন প্রোগ্রাম' আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) কর্তৃক দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন এলাকায় পরিচালিত ধারাবাহিক অভিযানকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ ও আতঙ্কে রয়েছে অভিবাসী জনগোষ্ঠী। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোতে, বিশেষ করে লস এঞ্জেলেসকে লক্ষ্য করে, 'ম্যাস ডিপোর্টেশন প্রোগ্রাম' আরও জোরদার করার ইঙ্গিত দিয়েছে। সম্প্রতি লস এঞ্জেলেস শহরে ICE-এর একাধিক অভিযানের প্রতিবাদে অঞ্চলজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকটি বিক্ষোভ সহিংস রূপ নিলে লস এঞ্জেলেস পুলিশ ৫০০-রও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে এবং শহরের কেন্দ্রস্থলে ১ বর্গমাইল এলাকায় (৫, ১০ ও ১১০ ফ্রিওয়ের মাঝে) কারফিউ জারি করে। শনিবার, এলএ কাউন্টির অন্যতম জনপ্রিয় সুইপ মিটে প্রায় ৬০ জন সশস্ত্র ফেডারেল এজেন্ট অভিযান চালায়। ঘটনাস্থলে হেলিকপ্টারসহ হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সদস্যদের উপস্থিতি আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়, এবং অনেক ক্রেতা ও বিক্রেতা দৌড়ে স্থান ত্যাগ করেন। তবে এই অভিযানে মাত্র দুইজনকে আটক করা হয়, যাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কোনো রেকর্ড না থাকলেও, তারা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন – যা একটি মাইনার অপরাধ (মিসডিমিনার)। অন্য এক ঘটনায়, হান্টিংটন পার্কে এক গর্ভবতী নারী (যিনি মার্কিন নাগরিক) ও তাঁর চার সন্তানকে অস্ত্রধারী এজেন্টরা জোরপূর্বক ঘর থেকে বের করে দেন। তারা ঐ নারীর স্বামীকে খুঁজছিলেন, যিনি অবৈধ অভিবাসী এবং যার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযানের সময় মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। CNN-এর এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত গোপন নথি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত ICE কর্তৃক আটক ১,৮৫,০০০ অভিবাসীর মধ্যে ১০%-এরও কম ব্যক্তি গুরুতর অপরাধের (যেমন ধর্ষণ, হত্যা, হামলা বা ডাকাতি) সঙ্গে যুক্ত। বিপরীতে, ৭৫%-এর বেশি আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কেবলমাত্র ইমিগ্রেশন বা যানবাহন সংশ্লিষ্ট মাইনর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। রবিবার নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম Truth Social-এ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ICE-কে “যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ডিপোর্টেশন প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে” আহ্বান জানান। তিনি লস এঞ্জেলেস, নিউ ইয়র্ক ও শিকাগোকে “ডেমোক্র্যাটিক পাওয়ার সেন্টার” বলে আখ্যা দেন, যেখানে “কোটি কোটি অবৈধ অভিবাসী” বসবাস করছে বলে দাবি করেন। G7 সম্মেলনের সময় কানাডায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেন, “হ্যাঁ, আমি চাই তারা এই শহরগুলোতে বেশি নজর দিক। কারণ এগুলো স্যাংচুয়ারি সিটি, এবং এখানেই মানুষ বেশি।” তিনি আরও দাবি করেন, “লস এঞ্জেলেসের মানুষজন অনেকেই ক্যালিফোর্নিয়ার নয়।” স্থানীয়ভাবে সান্তা ফে স্প্রিংসে বিক্ষোভকারীরা সম্প্রতি হওয়া সুইপ মিট অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নেন। Emilia Garcia নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, “সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে যেভাবে তারা মানুষদের সঙ্গে আচরণ করছে—অমানবিক, নিষ্ঠুর।” বর্তমানে লস এঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় শহরের কারফিউ সময়সীমা কমিয়ে দিয়েছেন। তবে, আগামী ৩০ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত এই ডিপোর্টেশন অভিযান চালু থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এলএবাংলাটাইমস/ওএম