ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম বলেছেন, তিনি “গভীরভাবে আত্মবিশ্বাসী” যে রাজ্যের ভোটাররা এই সপ্তাহে প্রস্তাবিত প্রপ ৫০ (Proposition 50) ব্যালট উদ্যোগকে সমর্থন করবেন। এই প্রস্তাবটি পাস হলে ক্যালিফোর্নিয়া আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে দলীয় ভিত্তিতে কংগ্রেসনাল সীমানা পুনর্নির্ধারণ (redistricting) করতে পারবে।
বৃহস্পতিবার এক বিস্তৃত সাক্ষাৎকারে নিউজম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিভিন্ন রিপাবলিকান অঙ্গরাজ্যে মধ্য-দশক রিডিস্ট্রিক্টিং উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ট্রাম্প “নির্বাচনকে প্রভাবিত করছেন” এবং “খেলার নিয়ম বদলে দিচ্ছেন কারণ তিনি জানেন, সমান শর্তে তিনি হারবেন।”
নিউজম বলেন, “তিনি খেলার নিয়ম বদলাচ্ছেন, কারণ জানেন—সব কিছু সমান থাকলে তিনি হারবেন। কিন্তু তিনি ভাবেননি ক্যালিফোর্নিয়া আগুনের জবাব আগুন দিয়ে দেবে।”
তিনি আরও জানান, রাজনৈতিক যোগাযোগের কৌশলেও পরিবর্তন এসেছে। “আমরা ‘যখন তারা নিচে যায়, আমরা উপরে উঠি’—এই দর্শনে ফিরতে চাই, কিন্তু রাজনীতি বদলে গেছে। পৃথিবী বদলে গেছে, এবং খেলার নিয়ম বদলে গেছে।”
নিউজম বলেন, “আমরা স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরতে চাই, কিন্তু এখন সংকটকাল চলছে। মাত্র ১০–১১ মাস হয়েছে এই প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শুরু হয়েছে, সামনে আরও তিন বছর বাকি। এখন পরিবর্তনের সময় এসেছে, যদি আমরা সত্যিই কিছু পরিবর্তন চাই।”
প্রপ ৫০: ট্রাম্পের রিডিস্ট্রিক্টিং উদ্যোগের জবাব
নিউজমের প্রপ ৫০ প্রস্তাবটি এসেছে টেক্সাসের রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত আইনসভা মধ্য-মেয়াদি রিডিস্ট্রিক্টিং শুরু করার পর। ওই পদক্ষেপের ফলে ২০২৬ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকানরা অন্তত পাঁচটি অতিরিক্ত আসন পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর পর থেকেই ইন্ডিয়ানা, মেরিল্যান্ড, নর্থ ক্যারোলাইনা, ভার্জিনিয়া, ওহাইও ও লুইজিয়ানাসহ আরও কয়েকটি রাজ্যে একই ধরণের পদক্ষেপের কথা ভাবা হচ্ছে।
সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসও বৃহস্পতিবার প্রপ ৫০-এর পক্ষে ভোট দেওয়ার ঘোষণা দেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ তিনি লেখেন, “আমরা জনগণের কণ্ঠরোধ হতে দিতে পারি না, তাই আমি প্রপ ৫০-এ হ্যাঁ ভোট দিয়েছি।”
অন্যদিকে ট্রাম্পও রিপাবলিকান অঙ্গরাজ্যগুলোকে টেক্সাসের মতো পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি ইন্ডিয়ানার রিপাবলিকান নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন, এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এ বছর সেখানে দুইবার সফর করেছেন।
“ডেমোক্র্যাটরা আবার ঐক্যবদ্ধ” — নিউজম
নিউজম বলেন, ডেমোক্র্যাটরা এখন “আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ এবং আত্মবিশ্বাসী।”
তিনি বলেন, “চার মাস আগেও যদি আমাকে জিজ্ঞেস করতেন, আমি ইতিবাচক কিছু খুঁজে পেতে কষ্ট পেতাম। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গেছে। আমি মনে করি, আমরা এক অসাধারণ মুহূর্তের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।”
নিউজমের মতে, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ব্র্যান্ড পুনরুদ্ধারের জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো—“জয়”।
“মানুষ জেতা দেখতে চায়—শক্তি, দৃঢ়তা, নেতৃত্ব—এগুলোই এখন গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখার চাবিকাঠি,” তিনি বলেন।
বাইডেন ও ট্রাম্প প্রসঙ্গে নিউজম
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মানসিক সক্ষমতা নিয়ে যেসব প্রশ্ন উঠেছিল, সে বিষয়ে নিউজম বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে এমন কিছু অনুভব করিনি।”
তিনি জানান, বাইডেনের প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আগে পর্যন্ত তিনি তাঁর পুনর্নির্বাচন প্রচারণাকে সম্পূর্ণ সমর্থন করেছিলেন।
অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নিউজম বলেন, “আমি সবসময় সহযোগিতার জন্য উন্মুক্ত হাত রেখেছি, বন্ধ মুষ্টি নয়। প্রেসিডেন্টের পদকে আমি শ্রদ্ধা করি।”
তবে তিনি সতর্ক করেন, ট্রাম্প “গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আক্রমণ চালাচ্ছেন” এবং “খুবই বিপজ্জনকভাবে খেলার নিয়ম পাল্টাচ্ছেন।”
২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ইঙ্গিত
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিউজম বলেন, “আমি এখন প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই না, তবে ভবিষ্যৎ কী বয়ে আনবে, তা বলা যায় না।”
অন্যদিকে কামালা হ্যারিসও জানিয়েছেন, তিনি “এখনও শেষ করেননি” এবং ভবিষ্যতে আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।
হ্যারিসের নতুন বইতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাইডেন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর তিনি নিউজমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ব্যর্থ হন। এ বিষয়ে নিউজম হেসে বলেন, “কামালা আমার সারাজীবনের পরিচিত, ওর আমাকে ফোন করার দরকার ছিল না—আমরা সেদিনই ওকে সমর্থন জানিয়েছিলাম।”
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
এলএবাংলাটাইমস/ওএম