লস এঞ্জেলেস

ক্যালিফোর্নিয়ার ‘মুখোশ নিষিদ্ধ আইন’ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের মামলা

ট্রাম্প প্রশাসন সোমবার ক্যালিফোর্নিয়ার নতুন আইনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এই আইন অনুযায়ী ফেডারেল এজেন্টরা রাজ্যের ভেতরে অভিযানের সময় মুখ ঢেকে রাখতে পারবেন না এবং পরিচয়পত্র স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করতে হবে। প্রশাসনের দাবি—এই আইন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলবে। ক্যালিফোর্নিয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাজ্য যা বেশিরভাগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে ফেডারেল ইমিগ্রেশন এজেন্টদের অফিসিয়াল কাজে মুখ ঢাকা নিষিদ্ধ করেছে। গত সেপ্টেম্বরে গভর্নর গ্যাভিন নিউসম আইনটিতে স্বাক্ষর করেন। আইন অনুযায়ী স্থানীয় ও ফেডারেল অফিসাররা নেক গেইটার, স্কি মাস্ক বা অন্যান্য মুখ–ঢাকার উপকরণ ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে আন্ডারকভার এজেন্ট, N95 রেসপিরেটর বা ট্যাকটিক্যাল সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহারকারীদের জন্য ছাড় রাখা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের ক্ষেত্রে আইনটি প্রযোজ্য নয়। এছাড়া আরেক আইনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবশ্যই পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান পরিচয়—যেমন ব্যাজ নম্বর ও সংস্থার নাম—পোশাকে প্রদর্শন করতে হবে। ফেডারেল সংস্থাগুলোকে ১ জানুয়ারি ২০২৬–এর মধ্যে দৃশ্যমান পরিচয় নীতিমালা এবং ১ জুলাই ২০২৬–এর মধ্যে মাস্ক-নীতি প্রণয়ন করতে হবে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল প্যাম বন্ডি বলেন, “ক্যালিফোর্নিয়ার এই আইনগুলো ফেডারেল সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক এবং আমাদের এজেন্টদের ঝুঁকিতে ফেলতে তৈরি করা হয়েছে। এই আইন চলতে পারে না।” মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) কর্মকর্তাদের বহুবার অনুসরণ করা হয়েছে এবং তাদের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। লস এঞ্জেলেসে তিন নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে—তারা একজন ICE এজেন্টকে অনুসরণ করে লাইভস্ট্রিম করেছে এবং তার বাড়ির ঠিকানা ইনস্টাগ্রামে প্রকাশ করেছে। ফেডারেল সরকারের দাবি, এজেন্টরা ব্যক্তিগত হুমকি ও সহিংসতার মুখে পড়েন। তাই তাদের নিরাপত্তার জন্য পরিচয় গোপন রাখতে মুখোশ পরার অনুমতি দেওয়া হয়। অন্যদিকে, গভর্নর গ্যাভিন নিউসম মুখোশ–ঢাকা ফেডারেল এজেন্টদের দ্বারা রাজ্যজুড়ে মানুষ গ্রেপ্তারের ঘটনাকে “বিকৃত ও ডিস্টোপিয়ান” বলে আখ্যা দিয়েছেন। সমালোচকরা বলছেন, পরিচয়হীন ফেডারেল এজেন্টরা স্থানীয় পুলিশের কার্যক্রমে যেভাবে যুক্ত হচ্ছেন, তা উদ্বেগজনক। নিউসমের দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যদি ট্রাম্প প্রশাসন জননিরাপত্তা নিয়ে এতটাই চিন্তিত হতো, তবে অধিকার লঙ্ঘন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের আটক এবং সহিংসতার দিকে কম ঝুঁকত।” এফবিআই গত অক্টোবরে একটি নির্দেশনা জারি করে মাঠপর্যায়ে কাজ করা সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্পষ্ট পরিচয় প্রদর্শনের আহ্বান জানায়। কারণ, একাধিক ঘটনায় দেখা গেছে—মুখ ঢাকা অপরাধীরা নিজেকে ইমিগ্রেশন অফিসার পরিচয় দিয়ে ডাকাতি ও অপহরণ করেছে। মামলায় ফেডারেল সরকার দাবি করেছে, ক্যালিফোর্নিয়ার আইন সংবিধানের Supremacy Clause লঙ্ঘন করে, কারণ কোনো রাজ্য ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এছাড়া ফেডারেল অফিসারদের জন্য মাস্ক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও রাজ্য পুলিশের জন্য ছাড় রাখা হয়েছে—যা বৈষম্যমূলক। ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বোনটার দপ্তর জানিয়েছে, তারা অভিযোগটি পর্যালোচনা করছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যখন ক্যালিফোর্নিয়ার মানুষ বুঝতে পারে না কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী আর কে অপরাধী, তখনই সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি হয়। ICE এজেন্টদের পরিচয় গোপন করার প্রবণতা অপরাধীদের নকল করতে উৎসাহ দিয়েছে, জননিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলেছে এবং মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ন করেছে।”   এলএবাংলাটাইমস/ওএম