ক্যালিফোর্নিয়ায় গ্রিন কার্ডের আবেদন প্রক্রিয়া চলমান থাকা সত্ত্বেও এক পেরুভিয়ান আশ্রয়প্রার্থী নারীকে আটক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE)। লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (USCIS) কার্যালয়ে নির্ধারিত এক সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে গেলে তাকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে তার স্ত্রী।
নিউজউইককে দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, ২৯ বছর বয়সী জিওমারা সুয়ারেজ-মারিন গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ওই অফিসে গেলে ফেডারেল ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তাকে হেফাজতে নেন। তার স্ত্রী গ্রাজিয়েলি চিওস্কি দে সুসা জানান, তারা বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করেছিলেন এবং বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন ছিল। কিন্তু আশ্রয় আবেদন সংক্রান্ত একটি নিয়মিত সাক্ষাৎকারে গিয়ে তাকে আটক করা হয়।
চিওস্কি দে সুসা বলেন, “সে প্রায় তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিল। পরে দুইজন কর্মকর্তাসহ একজন এসে জানায়, তাকে আটক করা হবে। সে বলেছিল, ‘আমি বুঝতে পারছি না—আমার তো স্ট্যাটাস অ্যাডজাস্টমেন্ট চলছে।’ কর্মকর্তা বলেছিলেন, এটা নাকি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু আমি কখনও শুনিনি যে স্ট্যাটাস অ্যাডজাস্টমেন্ট থাকা অবস্থায় কাউকে আইসিই আটক করে।”
জানা গেছে, জিওমারা সুয়ারেজ-মারিন তার যৌন পরিচয়ের কারণে পেরু থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মুখপাত্র ট্রিশিয়া ম্যাকলাফলিন নিউজউইককে বলেন, “২৬ সেপ্টেম্বর আইসিই জিওমারা সুয়ারেজ-মারিনকে গ্রেপ্তার করে। তিনি পেরুর নাগরিক, যিনি ২০২২ সালের নভেম্বরে দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন এবং বাইডেন প্রশাসনের সময় মুক্তি পান। স্পষ্ট করে বলতে চাই, ইউএসসিআইএসে আবেদন জমা থাকা মানেই অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি পাওয়া নয়।”
সাম্প্রতিক সময়ে এমন অভিযোগ বাড়ছে যে, গ্রিন কার্ডের আবেদন প্রক্রিয়াধীন থাকলেও নিয়মিত ইমিগ্রেশন সাক্ষাৎকার বা চেক-ইনের সময় অনেক অভিবাসীকে আটক করা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন কঠোর গণ-নির্বাসন নীতির অংশ হিসেবে অভিবাসন আইন প্রয়োগ জোরদার করেছে এবং অপসারণ প্রক্রিয়া দ্রুততর করছে। এর ফলে আগে যাদের বাইরে থেকে মামলা চালানোর সুযোগ দেওয়া হতো, তাদের অনেককেই এখন সাক্ষাৎকার বা চেক-ইনের সময় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
ইউএসসিআইএস সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, ১৯টি দেশ থেকে আগত অভিবাসীদের গ্রিন কার্ড আবেদন নতুন করে পর্যালোচনা করা হবে। এছাড়া ওয়াশিংটন ডিসিতে দুই ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে গুলির ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছু দেশের ক্ষেত্রে “স্থায়ীভাবে অভিবাসন স্থগিত” করার অঙ্গীকার করেন।
চিওস্কি দে সুসা জানান, তার স্ত্রী ২০২২ সালে মানবিক প্যারোলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন এবং সব আইসিই চেক-ইন নিয়মিতভাবে মেনে চলেছেন। ২০২৫ সালের আগস্টের এক বৈঠকে একজন কর্মকর্তা তার স্ট্যাটাস অ্যাডজাস্টমেন্ট চলমান আছে বলেও স্বীকার করেছিলেন।
তিনি বলেন, “আমাদের শুধু সরকারের অনুমোদন দরকার। আমাদের কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড নেই। আমরা কোনো অবৈধ কাজ করিনি।”
তবে জিওমারা সুয়ারেজ-মারিনকে দেওয়া ‘নোটিস টু অ্যাপিয়ার’-এ বলা হয়েছে, তিনি প্যারোল ছাড়াই অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন—যা তার স্ত্রী অস্বীকার করেছেন। চিওস্কি দে সুসার দাবি, সাক্ষাৎকারের সময় তার কাছে সব বৈধ কাগজপত্র ছিল।
বর্তমানে জিওমারা সুয়ারেজ-মারিন ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাডেলান্টো শহরের অ্যাডেলান্টো ডিটেনশন সেন্টারে আটক রয়েছেন। অনলাইন আইসিই রেকর্ড অনুযায়ী, তার পরবর্তী ইমিগ্রেশন আদালতের শুনানি ২৮ জানুয়ারি নির্ধারিত রয়েছে। এছাড়া তার পুনর্নির্ধারিত ইউএসসিআইএস সাক্ষাৎকার হবে ১৩ জানুয়ারি।
চিওস্কি দে সুসা বলেন, “আমি চাই সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে যাক। কিন্তু এখন ‘স্বাভাবিক’ বলতে কী বোঝায়, সেটাই আমি বলতে পারছি না।”