মধ্যপ্রাচ্য

আবুধাবিতে হঠাৎ প্রবল বর্ষণ

সকাল থেকেই আকাশের মুখ ছিল ভার। বেলা ১১টা বাজতে না বাজতেই অন্ধকার ঘনিয়ে এল শহরের আকাশে। তার পরই আধ ঘণ্টা ধরে চলল বজ্রবিদ্যুৎ-সহ সেই বৃষ্টি!

গত কয়েক দশকে এমনটা দেখেছেন বলে মনে করতে পারছেন না আবু ধাবির বাসিন্দারা। স্বভাবতই হতবাক তারা।

আরব আমিরশাহীতে বৃষ্টির দেখা মেলে বছরে হাতে গোনা কয়েকটা দিন। তা-ও ছিটেফোঁটা। বড়জোর কয়েক মিনিট। সেটা আবার শীতকালে। গরম কালে এখানে বৃষ্টির প্রশ্নই ওঠে না।

মার্চ মাসে ঠান্ডা কমে যাওয়ার পর থেকেই শুর হয় তীব্র গরম। মে-জুন মাসেও তাপমাত্রা পঞ্চাশ ছোঁয়। এতেই অভ্যস্ত স্থানীয় বাসিন্দারা। সেখানে এমনতর বৃষ্টি অবাক করে দিয়েছে মরুশহরের প্রশাসন থেকে সাধারণ মানুষকে।

আগাম পূর্বাভাস ছিল না। কিন্তু গত সোমবার দুপুরেই হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে মেঘের গর্জন। মঙ্গলবার দুপুরে সেই বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়লেও বিকেলের দিকে থেমে যায়। বুধবার ভোরে সবাইকে অবাক করে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি।

আবু ধাবির বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শিলাবৃষ্টি আছড়ে প়ড়তে থাকে। স্থানীয় মুদ্রা এক দিরামের থেকেও বড় মাপের শিলা ঝরতে থাকে অনবরত। ভোর রাতেই এমন ঘটনার সাক্ষী হতে রাস্তায় নেমে পড়েন অনেকে। কেউ ছাদে উঠে পড়েন শিল কুড়োতে।

দশ বছর ধরে আবু ধাবিতে আছেন বাংলাদেশের বাসিন্দা রহমান কাজি। মনেই করতে পারছেন না এমনটাও এই মরুশহরে হয়।

বুধবারও সকাল থেকেই মেঘলা ছিল আকাশ। বেলা ১১টার পর যে বৃষ্টি নামল, ছাপিয়ে গেল গত দুই দিনের বৃষ্টিকে। নিমেষে পথঘাট শুনসান। ভরদুপুরে জ্বলে উঠল গাড়ির হেডলাইট। পাশেই দোকানে গিয়েছিলেন নেপালের বাসিন্দা সুনিতা রাই। তড়িঘড়ি তার পনেরো তলার ফ্ল্যাটে ফিরে দেখেন, জানলার পাশে রাখা গাছ ঝড়ের ঝাপটায় নীচে পড়তে চলেছে।

কারও ছাদে মেলা কাপড়জামা ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে। এ সবই বহু দিন আবু ধাবিতে রয়েছেন এমন মানুষের কাছে অবাক করার মতো ঘটনা বটে। পিচ্ছিল রাস্তায় বাইক চালাতে দ্বিধা করছেন মোটরবাইক আরোহীরা। এ দিন আবু ধাবি ও দুবাইতে বেশ কয়েকটি মোটরবাইক দুর্ঘটনার পর পুলিশও মোটরবাইক আরোহীদের সতর্ক করে দিয়েছে।

বুধবার অবশ্য বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিলই। স্কুলপড়ুয়াদের কথা ভেবে ঝুঁকি নেয়নি প্রশাসন। আবু ধাবির এডুকেশন কাউন্সিল আগেই মেল মারফত অভিভাবকদের জানিয়ে দিয়েছিল, আজ সমস্ত পাবলিক ও বেসরকারি স্কুল ছুটি থাকবে।


দুবাইয়ের স্কুলে প্রথমে ছুটি না দেওয়া হলেও পরে বেশ কিছু স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।

সামগ্রিকভাবে হঠাৎ এই আবহওয়ার পরিবর্তনে জনজীবন বিপর্যস্ত। পুলিশ সাধারণ মানুষের কাছে আর্জি জানিয়েছে, খুব প্রয়োজন না হলে বাড়ি থেকে না বেরোতে। অফিস থেকেও তড়িঘড়ি সবাই ফিরতে শুরু করেন। সন্ধে ৬টায় ঝড়ের পূর্বাভাস থাকায় এতিহাদ এয়ারওয়েজ অফিস ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।

বুধবার দুপুরে বেশ কিছু ফ্লাইট  বাতিল হয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন পার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পিচ্ছিল রাস্তায় চলাফেরার ব্যাপারে পথচারীদেরও সতর্ক করা হয়েছে। বৃষ্টিতে তাপমাত্রা অনেকখানি কমে গিয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তর জানাচ্ছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হবে ১৪ ডিগ্রি। তবে বন্যার আশঙ্কাও রয়েছে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া দপ্তর। অভ্যন্তরীণমন্ত্রী শেখ সইফ বিন জায়েদ এই বৃষ্টির একটি ভিডিও পোস্ট করে আশা প্রকাশ করেছেন, খোদা এই দেশে আরও বৃষ্টির আশীর্বাদ দিন।