নিউইয়র্ক

রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিন : মিয়ানমারকে যুক্তরাষ্ট্র

নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্ব দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহবান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জনসংখ্যা, অভিবাসন এবং উদ্বাস্তুবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান রিচার্ড বলেছেন, শুধু তৃতীয় কোনো দেশে স্থান দেয়াই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমুদ্রে ভাসমান নৌকারোহী মানুষের সমস্যার সমাধান হতে পারে না। তিনদিনের মালয়েশিয়া সফরের শেষ দিনে তিনি আরো বলেন, ‘সমুদ্রে ভাসমান সব রোহিঙ্গাদের যদি যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন করা হয় তাহলে মিয়ানমারে থাকা বাকি রোহিঙ্গারাও দেশ ছাড়তে প্রলুব্ধ হবে। এটা কোনো সমাধান হতে পারে না। সমাধান হলো রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে নাগরিকত্ব দিতে হবে। সেখানে শান্তি ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।’’রিচার্ড আরো বলেন, বর্তমানে রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের উপর ভয়াবহ অত্যাচার-নির্যাতন করা হচ্ছে। তাদের কোনো নাগরিকত্ব নেই। আমরা তাদের মানবাধিকার নিয়ে উদ্বিগ্ন।মে মাসের প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪ হাজার ৬শ’ মানুষ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপকূলে ভিড়েছে। এ অঞ্চলের সরকারগুলো ধরপাকড় শুরু করলে মানবপাচারকারীরা নৌকা ফেলে পালিয়ে যায়। ফলে আরো কয়েক হাজার মানুষ সমুদ্রে ভাসছে। এদের মধ্যে কিছু লোক বাংলাদেশি। তারা চাকরি খুঁজতে তাদের  গরিব দেশ থেকে অন্য দেশে যাচ্ছে। কিন্তু ভাসমান মানুষদের বেশিরভাগই বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান। তারা নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে দেশ থেকে পালাচ্ছে। মিয়ানমার তাদের নাগরিকত্ব এমনকি মৌলিক অধিকার দিতেও অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। মিয়ানমার সরকার প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে বিভিন্ন ক্যাম্পে আটকে রেখেছে। বার্মা নামে পরিচিত এ দেশে বর্তমানে দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাস করে। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া প্রথম দিকে অভিবাসী নৌকাগুলো ফেরত পাঠালেও বর্তমানে অস্থায়ীভাবে অভিবাসীদের জায়গা দিয়েছে। এক বছরের মধ্যে অন্য দেশে চলে যাওয়ার শর্তে তারা অভিবাসীদের স্থান দিয়েছে। তবে রিচার্ড জানিয়েছেন এক বছর সময়কে বাড়িয়ে ১৮-২৪ মাস করা হলে অভিবাসীদের অন্য কোথাও স্থানান্তর করা যুক্তরাষ্ট্্েরর জন্য সুবিধাজনক হতো।সেসময় তিনি সর্তক করে বলেন, বিশ্বের সব উদ্বাস্তুদের মধ্যে অল্পকিছু মানুষকে পুনর্বাসন করা হবে। বিশেষ করে যারা নির্যাতিত হয়েছে, বিধবা, ইয়াতিম অথবা যাদের চিকিৎসা সহায়তা দরকার তাদের পুনর্বাসন করা হবে। তিনি আরো বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। সবচেয়ে গুরুত্বর্পূন সমাধান হলো এমন ব্যবস্থা নেয়া যাতে মানুষকে তাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে না হয়।এর আগে গতমাসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে নৌকায় করে মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলে আসা প্রায় ১১শ’ অভিবাসীকে দেখতে যান রিচার্ড। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার কেদাহ প্রদেশে অনেক উন্নত ও পরিচ্ছন্ন ভবনে অভিবাসীদের রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, যদিও তারা এখন নিরাপদ কিন্তু আমার কাছে এটা স্পষ্ট যে এই মানুষগুলো অনেক ভয়াবহ পরিস্থিতি পার হয়ে এখানে এসেছে। তিনি বলেন, তারা জানে না পরবর্তীতে তাদের কি হবে। তাদের অবস্থা দ্রুত পুনঃবিবেচনা করতে তিনি মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান তিনি। অ্যান রিচার্ড বলেন, নৌকায় ভাসা অভিবাসীদের সমস্যা সমাধানে ১৭টি দেশের সমন্বয়ে শুক্রবার অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠকে মিয়ানমার অংশ নেয়ায় তিনি আশাবাদী হয়েছেন। যদিও সমস্যা সমাধানের কোনো বড় ধরনের সমাধান ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে। তবু দেশগুলো যে সমস্যা নিয়ে মুখোমুখি বৈঠকে বসে আলোচনা করেছে এটাকে তিনি সমস্যা সমাধানের প্রথম ধাপ বলে প্রশংসা করেন। রিচার্ড বলেন, একটি বিষয় সত্যিই খুব ভালো লেগেছে মিয়ানমার পুরো সময় বৈঠকে উপস্থিত ছিল এবং খুব সক্রিয় ছিল। আমরা আশা করি মায়ানমান ভবিষ্যতেও এরকম সক্রিয় থাকবে। সূত্র : এপি।