ধর্ম

শবে মিরাজ বা লাইলাতুল মিরাজ,করণীয়-বর্জনীয়

‘শবে মিরাজ’ বা ‘লাইলাতুল মিরাজ’- ফারসি শব্দ। যার অর্থ হলো রাত, রাত্রি বা রজনী। আবার ‘লাইলাতুন’ আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে রাত বা রজনী। আর ‘মিরাজ’ আরবি শব্দ। এর অর্থ উর্ধ্বগমন বা উর্ধ্ব গমনের বড় মাধ্যম। ‘শবে মিরাজ’ শব্দ দুটির সম্মিলিত শাব্দিক অর্থ হলো- উর্ধ্বগমনের রাত বা রজনী। ইসলামী পরিভাষায় রাসূল (সা.) যে রাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইচ্ছায় তার ডাকে সাড়া দিয়ে উর্ধ্ব আকাশে গমন করেছিলেন সেই রাত ও সেই শুভ ও পবিত্র যাত্রাকে ‘শবে মিরাজ’ বা ‘লাইলাতুল মিরাজ’ বলা হয়। [আল-মুয়জামুল ওসিত]
কখন হয়েছিল শবে মিরাজ: মিরাজের এই ঐতিহাসিক ঘটনাটি কোন তারিখে সংঘটিত হয়েছে এ ব্যাপারে বিভিন্ন মতপার্থক্য লক্ষ করা যায়। কোনো কোনো ঐতিহাসিকদের মতে, রাসূলের (সা.) নবুয়তের ৫ম বছর এই ঘটনাটি সংঘঠিত হয়েছে। আবার কারো কারো মতে, নবুয়তের ৬ষ্ঠ বর্ষে। এভাবে দ্বাদশ বর্ষে সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে মতামত পাওয়া যায়। তবে হাদিসের নির্ভরযোগ্য বর্ণনা ও অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের প্রসিদ্ধ মতামত হলো- পবিত্র এই ঘটনা রাসূলের (সা.) নবুয়তের ৫ম বছর ২৭ রজব রাতে সংঘঠিত হয়েছে।
মিরাজ সংঘঠিত হয়েছিল কেন:  মিরাজের ঘটনা রাসূলের (সা.) জীবনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্যমন্ডিত বিষয়। রাসূলের (সা.) আগে অন্য কোনো নবী-রাসূলের জীবনে এমন ঘটনা ঘটেনি। আল্লাহ মহান এই রাতে তার সংস্পর্শ শুভ্রতার উপহার হিসেবে উম্মতে মুহাম্মাদীকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিধান দান করেছেন। তাই রাসূল (সা.) নামাজের ব্যাপারে বলেছেন, ‘নামাজ হলো মুমিনের মিরাজ।’
শবে মিরাজ ও নফল নামাজ:  আবার অনেক মুসলিম ভাই ও বোনরা শবে মিরাজ উপলক্ষে কেউ ১২ রাকাত, কেউ ২০ রাকাত নামাজ আদায় করে থাকেন। ইসলামী শরীয়তেও শবে মিরাজের নামাজ বলে কিছু নেই। নফল নামাজ পড়া সাওয়াবের কাজ কিন্তু শবে মিরাজ উপলক্ষে নফল নামাজ আদায় করার কোনো ভিত্তি ও প্রমাণ ইসলামে নেই। কাজেই শবে মিরাজের নামে নফল নামাজ আদায় করা এবং এর ব্যবস্থা প্রণয়ন করা মানে ইসলামী শরীয়তে নিজের পক্ষ থেকে কিছু সংযোজন করা। আর এ ব্যাপারে রাসূল (সা.) বলেছেন, যে আমাদের ধর্মে এমন কিছু সংযুক্ত বা উদ্ভাবন করবে, যা তার (শরীয়তের) অংশ নয়- তা প্রত্যাখ্যাত হবে। [বোখারী, ১/৩৭১]   
শবে মিরাজ ও নফল রোজা:  আমাদের অনেক মুসলিম ভাই ও বোনেরা- শবে বরাত ও শবে কদরের সাথে মিলিয়ে শবে মিরাজেও নফল রোজা রেখে থাকেন। একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য- নফল রোজা যখন ইচ্ছা তখন রাখা যায় কিন্তু কোনো উপলক্ষে নফল রোজা রাখতে হলে অবশ্যই আগে জেনে নিতে হবে যে আমি বা আমরা যে উপলক্ষে নফল রোজা রাখছি শরীয়ত সেটাকে অনুমতি দিয়েছে কিনা। শবে মিরাজ উপলক্ষে নফল রোজা রাখার কোনো বর্ণনা কোরআন-হাদিসের কোথাও বর্ণিত নেই। আল্লাহর রাসূল (সা.) ও তার অনুসারীরা এই দিনে বিশেষভাবে কোনো রোজা রেখেছেন এমনে কোনো বর্ণনা ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই এই দিনে শবে মিরাজ উপলক্ষে রোজা রাখা কোনো ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে না।
করণীয়-বর্জনীয়: রজব মাসের শেষ দিকে শবে মিরাজ রয়েছে। রজব মাসের ব্যাপারে বলা হয়ছে এই মাসে রমজানের প্রস্তুতি নেওয়া এবং বেশি বেশি এই দোআ করা- ‘হে আল্লাহ আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দাও এবং আমাদের হায়াত রমজান পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করো।’ এই মাসে শবে মিরাজকে উপলক্ষ না করে নফল রোজা রাখা। রজবের ২৯ ও ৩০ তারিখে শাবানের চাঁদ দেখার চেষ্টা করা। এছাড়া ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী যে কোনো ধরনের আমল-ইবাদত ও বিদআত থেকে বিরত থাকা। এই রাতকে কেন্দ্র করে প্রচলিত সব ধরনের প্রথা ও বিদআত বর্জন করা। শবে মিরাজের নামাজ বলে কোনো নফল নামাজ আদায় না করা এবং শবে মিরাজের রোজা নামে কোনো নফল রোজা না রাখা। মসজিদ আলোকসজ্জা, তবারক বিতরণ ও মিলাদ-কিয়াম না করা।  
পরিশিষ্ট:  কোনো কোনো এলাকায় খুব ধুমধামের সাথে শবে মিরাজ পালন করা হয়। শবে মিরাজকে শবে বরাত ও শবে কদরের মতো বরকতময় রাত মনে করা হয় এবং এই রাতে বিশেষভাবে  শবে মিরাজের নামাজ আদায় করা হয় আর পরেরদিন শবে মিরাজের রোজা রাখা হয়। ইসলামী শরীয়তে এসব আমলের কোনো ভিত্তি নেই। কোরআন-হাদিসে এর কোনো সমর্থন পাওয়া যায় না। সুতরাং শবে মিরাজকে শবে বরাত বা শবে কদরের মতো মনে করা এবং উদযাপন করা সম্পূর্ণ বিদআত।
[মুফতি তাকি উসমানী ও মুফতি মুহাম্মাদ আলী রচিত ‘ফজিলতের রাত: ফাজায়েল ও মাসায়েল’ অনুবাদ: মুফতি আব্দুল মালেক]