ধর্ম

আজ ঐতিহাসিক আশুরা : মুসলমানদের জীবনে এক তাৎপর্যপূর্ণ দিন

আজ ১০ মহররম। হিজরি সনের প্রথম মাস মহররমের এই দিনটি মুসলিম উম্মাহর নিকট ‘আশুরা’ হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। সৃষ্টির শুরু থেকেই  বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাসহ কারবালার শোকাবহ ঘটনার জন্য এ দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে ধর্মীয়ভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মুসলমানরা দিনটি যথাযথ মর্যাদায় ইবাদাত-বন্দেগি ও সিয়াম পালনের মাধ্যমে অতিবাহিত করেন।

আশুরার একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা হচ্ছে, ৬৮০ খ্রিস্টাব্দের ১০ মহররম ইমাম হোসাইন (রা.) সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, হক ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে আত্মত্যাগে এবং আত্মোৎসর্গের যে অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, তা পৃথিবীর মানুষকে যুগ যুগ ধরে ন্যায়ের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেরণা জুগিয়ে আসছে।
বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ বুখারি থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.) বলেনÑ “এই দিনে বনি ইসরাইলের জন্য সমুদ্রে রাস্তা বের করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে নিরাপদে পার করে দিয়েছেন। আর একই রাস্তা দিয়ে ফেরাউন ও তার অনুসারীদেরকে ডুবিয়ে মেরেছেন।”-(সহিহ বুখারি : ১/৪৮১)।

বিভিন্ন তথ্যমতে এই দিনে আসমান ও যমিন সৃষ্টি করা হয়, পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়, নুহ (আ.) এর কিশতী জুদী পাহাড়ে অবতরণ করে, হযরত ইউনুস (আ.) তাওবা কবুল করা হয়, আল্লাহ পাক স্বীয় আরশে আজীমে অধিষ্টিত হন, পৃথিবীতে সর্বপ্রথম বৃষ্টি বর্ষণ হয়, ইবরাহিম (আ.) অগ্নিকু- হতে মুক্তি পান, ৪০ দিন মাছের পেটে থাকার পর এদিনে হযরত ইউনুস (আ.) মুক্তি লাভ করেন,  দাউদ (আ.) এর দুয়া কবুল হয়Ñ তবে হাদিস বিশারদরা এসব ঘটনা সম্বলিত হাদিসগুলোকে দুর্বল বলেছেন।

তবে আশুরার দিনে সিয়াম পালনের ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদিসের নির্দেশনা পাওয়া যায়। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুলল্লাহ (সা.) বলেন, “রমজানের পর সব সিয়ামের (নফল) মধ্যে আশুরার সিয়াম সর্বশ্রেষ্ঠ”। (জামে তিরমিযি ১/১৫৬)। আশুরার দিন সিয়াম রাখার ফযিলত সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, “আমি আশা করি যে ব্যক্তি ‘আশুরা’ দিবসে সিয়াম রাখবে তার এক বছরের বছরের গুনাহের কাফ্ফারা (ক্ষমা) হয়ে যাবে”। (মুসলিম, ১/৩৬৭)। আশুরার দিন সিয়াম রাখলে ইহুদীদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যায় বিধায় রাসূলুল্লাহ (সা.) তার আগের দিন বা পরের দিন আরেকটি সিয়াম রাখার পরামর্শ দেন (মুসনাদ আহমদ)।

মুসলিম পণ্ডিতরা বলেন, “আশুরায় সিয়াম পালন করা যেমন ভালো কাজ, তেমনি দরিদ্রজনকে খাওয়ানোটাও সওয়াবের কাজ। এ দিন পরিবার-পরিজনকে খাওয়ানোর জন্য উত্তম খাবার ব্যবস্থা করায়ও কল্যাণ রয়েছে।”
মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় পবিত্র আশুরা পালিত হবে। আজ সরকারি ছুটির দিন। এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

এ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক আজ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।সংবাদপত্র অফিসগুলোতে ছুটি পালিত হবে। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও-টিভি চ্যানেলেও এই দিনের তাৎপর্য নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে।


এলএবাংলাটাইমস/আইএল/এলআরটি