খেলাধুলা

শাহাদাতের স্বপ্ন শেষ - ৬ মাসের জন্য মাঠের বাইরে থাকবেন

দিনের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলটি করেই পড়ে যান শাহাদাত হোসেন। পরে মাঠ ছেড়েছেন স্ট্রেচারে

l প্রথম আলোপ্রথম বলেই পিছলে গিয়েছিল বাঁ পা। টান পড়ে ডান পায়ে। উইকেটের ওপর পড়েও

যান। তবে তখনো বুঝতে পারেননি চোটের ব্যাপকতা। শুশ্রূষা নিয়ে ফিরে গেলেন বোলিং মার্কে। পরের

বলটা লেগের দিকে ফুলটসের মতো করলেন। মোহাম্মদ হাফিজ বাউন্ডারি মেরে দিলেও সেদিকে দৃষ্টি

নেই শাহাদাতের। হাঁটুতে যে প্রচণ্ড ব্যথা! ড্রেসিংরুম থেকে দৌড়ে এলেন ফিজিও। কিন্তু এবার আর

তাঁকে বোলিংয়ে ফেরানো গেল না। শাহাদাত চলে গেলেন ড্রেসিংরুমে।
দুটি বল করেই হাঁটুতে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। পরে ফিরেছেন দু-দুটি ব্যথানাশক ইনজেকশন

নিয়ে আর হাঁটুতে টেপ লাগিয়ে। ধরেছেন একটা ক্যাচও। কিন্তু বল আর করা হয়নি। তবে শাহাদাত

মনে মনে আশায় ছিলেন, বল করবেন। ম্যানেজার খালেদ মাহমুদের বারণ সত্ত্বেও তাই পেস বোলিং

কোচ হিথ স্ট্রিককে নিয়ে মধ্যাহ্নবিরতিতে বোলিং করে দেখতে চেয়েছিলেন হাঁটুর কী অবস্থা। প্রথম

চারটা বল ভালোই করলেন। পঞ্চম বলটা করেই আবার পড়ে গেলেন মাটিতে। এবার আর উঠতে

পারলেন না। শাহাদাতের ভাষায়, ‘পা অবশ লাগছিল...দাঁড়াতে পারছিলাম না। কট করে একটা শব্দও

হলো। বুঝতে পারছিলাম, লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে...আমার সব শেষ। আমি শুধু কাঁদছিলাম।’

শাহাদাতের ঝাপসা দৃষ্টিতে নাকি কেবলই ভেসে উঠছিল—২০০৯ সাল...সেন্ট ভিনসেন্ট...মাশরাফি

বিন মুর্তজা!
স্ট্রেচারে চড়ে মাঠ ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই এমআরআই করাতে শাহাদাতকে নিয়ে যাওয়া হয়

অ্যাপোলো হাসপাতালে। এমআরআই রিপোর্টে দেখা যায়, ডান পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে। চোট

পেয়েছেন মিনিসকাসেও। পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের বাকিটাতে আর বোলিং-ফিল্ডিং করার

প্রশ্নই ওঠে না। খুব জরুরি পরিস্থিতির সৃষ্টি না হলে ব্যাটিং করতে নামারও কথা নয়। আপাতত

কয়েকটা দিন স্থানীয় চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকলেও চোটটা যে ধরনের, অস্ত্রোপচার টেবিলে

তাঁকে উঠতেই হবে। ‘ডাক্তাররা বলেছেন অপারেশন লাগবে। সে জন্য দেশের বাইরেও যেতে হতে

পারে’—কাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলছিলেন শাহাদাত। একটি সূত্রে জানা গেছে, অস্ত্রোপচার-পুনর্বাসন

মিলিয়ে কমপক্ষে ছয় মাস মাঠে বাইরে থাকতে হবে শাহাদাতকে।
যে টেস্ট এমন দুঃস্বপ্ন হয়ে গেল, সেটি কতভাবেই না বিশেষ কিছু হয়ে উঠতে পারত তাঁর জন্য!

বাবা-মা নিয়মিত মাঠে এসে খেলা দেখলেও চার মাসের কন্যাসন্তান মানহাকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী কালই

প্রথম মাঠে এসেছিলেন স্বামীর খেলা দেখতে। অথচ মাঠের শাহাদাতকে দেখাই হলো না তাদের!

শাহাদাত যখন দ্বিতীয়বার চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন, স্ত্রী-কন্যা তখনো স্টেডিয়ামের পথে এবং পথেই

তাঁরা শোনেন দুঃসংবাদটা। দর্শক গ্যালারিতে নয়, পরিবারকে হাসপাতালের পথের সঙ্গী হিসেবেই

পেয়েছেন শাহাদাত।
দ্বিতীয়বার চোট পাওয়ার পরের অনুভূতির কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বাষ্পরুদ্ধ হয়ে আসছিল তাঁর

কণ্ঠ, ‘বিশ্বাস করেন...আমার খালি মাশরাফি ভাইয়ের কথা মনে পড়ছিল। ওই যে ওয়েস্ট ইন্ডিজে

ব্যথা পেয়েছিলেন, আমার সামনেই তো! তাঁর চেহারাটাই বারবার ভেসে উঠছিল চোখের সামনে।

মাশরাফি ভাইও ঠিক এভাবেই পড়ে গিয়েছিলেন।’ ২০০৯ সালে ওই চোটের পর আজ পর্যন্ত টেস্টে

ফেরেননি মাশরাফি। শাহাদাত অবশ্য অতটা দুঃস্বপ্ন দেখছেন না। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে এই

টেস্টে যে আর বল করা হচ্ছে না, সেই আফসোসই তো যাচ্ছে না তাঁর, ‘উইকেটটা দেখে আমি যা

খুশি হয়েছিলাম! এমন উইকেট তো আমরা কেবল ইংল্যান্ডে গেলেই পাই, দেশে পাই না। এই প্রথম

ঘাস দেখলাম দেশের উইকেটে। ভেবেছিলাম ভালো বল করব। এখন তো আর কিছুই হবে না!’
শাহাদাত এরপর আর কথা বাড়ালেন না। হাঁটুর ব্যথায় স্তব্ধ হয়ে আসছিল কণ্ঠ। হয়তো বা স্বপ্নভঙ্গের

বেদনায়ও।
সুত্রঃ প্রঃআঃ