খেলাধুলা

ব্যর্থতায় বাংলাদেশের টপ অর্ডার

ভারতে চলমান বিশ্বকাপে বড় স্বপ্ন নিয়ে গেছে বাংলাদেশ। তবে আসরটি দলের টপঅর্ডারের ব্যাটারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতায় সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়ে ধরা দিয়েছে টাইগারদের শিবিরে। টুর্নামেন্টটিতে এখন পযন্ত ছয়টি ম্যাচ খেলেছে সাকিব আল হাসানরা। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় পেলেও এরপর আর কোনো ম্যাচে জয়ের দেখা পায়নি তারা। যেন অচেনা এক বাংলাদেশ। ছয় ম্যাচে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশের টপঅর্ডাররা।   শেষ পাঁচ ম্যাচ হেরে শেষ হয়ে গেল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন। লক্ষ্য এখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার। তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। চলতি বিশ্বকাপে লিটন দাস, তানজিদ হাসান তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান কেউই তাদের নামের সুবিচার করতে পারেনি। লিটন কুমার দাস বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৩, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৬, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ০, ভারতের বিপক্ষে ৬৬, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২২ এবং সর্বশেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ রান করেন। এই ছয় ম্যাচে তার মোট রান ১৮০। এছাড়া তামিম ইকবালের পরিবর্তে দলে ডাক পাওয়া তানজিদ হাসান তামিমও ব্যর্থ হচ্ছেন প্রতি ম্যাচে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬, ভারতের বিপক্ষে ৫১, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১২ এবং শেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫ রান করেন। বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচ খেলে সংগ্রহ মাত্র ১০০ রান। এবারের বিশ্বকাপে নাজমুল হোসেন শান্তর কাছে প্রত্যাশা ছিল ভালো কিছু তবে তিনি যেন বিশ্বকাপে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছে। বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫৯, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ০, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭, ভারতের বিপক্ষে ৮, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ০ এবং শেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ৯ রান করেন এই টপঅর্ডার। বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচে এই ব্যাটারের মোট সংগ্রহ মাত্র ৮৩ রান। এদিকে এই বিশ্বকাপে গোটা দেশের ক্রিকেট সমর্থকদের ভিন্ন নজর ছিল দেশ সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের দিকে। সবশেষ বিশ্বকাপে তিনি যেভাবে অতিমানবীয় পারফরমেন্স দেখিয়েছিলেন। সকলে ভাবছিল এবারও হয়তো ভারতে সেই ঝলকই দেখাবেন। কারণ আসর শুরু আগে তিনি জানিয়েছিলেন এটি তার শেষ বিশ্বকাপ। তবে আগের ফর্ম তো দূরে থাক মাঠে নিজেকে খুঁজেই পাচ্ছেন না টাইগারদের এই অধিনায়ক। এখন পর্যন্ত দলের হয়ে বিশ্বকাপে ৫ ম্যাচ খেলতে নেমেছেন তিনি। বল হাতে কিছুটা নিজেকে মেলে ধরতে পারলেও ব্যাট হাতে উইকেটে থিতুই হতে পারছেন না তিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৪, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪০, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১। এরপর হুট করে দেশে এসে ছোট বেলার কোচের কাছে নিজেকে ফিরে পাবার চেষ্টা চালায় তিনি। দুই দিন অনুশীলন করে মিরপুরে। তবে তা কাজে আসেনি ভারতের মাঠে। সবশেষ কলকাতার ইডেনগার্ডেনের ম্যাচে নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৫ রান করেন তিনি। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এমন অসহায় আত্মসমর্পণে হতাশ ক্রিকেটাররাও। নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ হারার পর শেখ মাহিদী বলেন ‘আমাদের আর কিছু করার নাই, এই মুহূর্তে দোয়া ছাড়া আর অন্য কিছু কাজে আসবে না।’ পরে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও জানিয়েছিলেন এটাই বাংলাদেশের স্মরণকালের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ। তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ্বকাপে যেভাবে খেলছি, খুবই হতাশাজনক। ম্যাচ জিতলে তো অবশ্যই দলের ভেতর আত্মবিশ্বাস আসে। সেটা যেখানেই হোক, যে দেশেই হোক। শেষ কিছু দিন ধরে ওয়ানডেতে ভালো করছি না। হোমে ইংল্যান্ড, আফগানিস্তানের কাছে হেরে গেছি। আমরা হয়তো ওরকম কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আসেনি যেখানে অনেক চ্যালেঞ্জের সুযোগ হতো। এশিয়া কাপে খুব ভালো করিনি, ভারত ম্যাচ বাদ দিয়ে হতাশাজনক এশিয়া কাপ। এখানে আফগান ম্যাচ বাদ দিলে। এত খারাপ দল আমরা না।’ আসরে আজকের ম্যাচসহ বাকি আর মাত্র তিন ম্যাচ। আর তিন ম্যাচেই বাংলাদেশের জন্য অন্য এক চ্যালেঞ্জ। কারণ এই তিন ম্যাচে জয়ের দেখা না পেলে ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে পারবে না বাংলাদেশ। ডাচদের বিপক্ষে হারের মধ্য দিয়ে তো চলমান বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন মাটিতেই মিশে গেছে। অধিনায়ক সাকিবেরও নজর এখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করার। তবে যদি বাকি ম্যাচগুলোতেও বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে এমন ব্যর্থ হতে থাকলে হয়তো আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের আর খেলার সুযোগ হবে না।

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস