কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়াগ্রামে তৈরি হচ্ছে আগামী দিনের ফুটবলার। বিভিন্ন বয়সের প্রায় দেড় শতাধিক ফুটবলার তালিম নিচ্ছেন স্বপ্নভূমি ফুটবল একাডেমিতে। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফসল তুলেছে এই একাডেমি। তাদের ঘর থেকে একজন ফুটবলার এবার বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
সারা দেশ থেকে অনূর্ধ্ব-১৩ বয়সের বাছাই হয়েছিল। ১২০ জনের মধ্যে টিকে গেছেন স্বাধীনুর রহমান জিহাদ নামের কিশোর ফুটবলার। আর সেই খবর ছড়িয়ে গেছে কুষ্টিয়া জেলায়। সেখানকার ফুটবলে নতুন উন্মাদনা ছড়িয়েছে। এত দিনের পরিশ্রম স্বার্থক হতে চলেছে। একাডেমির কোচ তরিকুল ইসলাম, আলমগীর হোসেনরা যেন আরো বেশি কাজ করার প্রেরণা পেলেন।
একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান মিলন হাসান, যে লক্ষ্য নিয়ে একাডেমি গড়ে তুলেছিলেন তার স্বার্থকতা খুঁজে পাচ্ছেন এখন। মিলন বলছিলেন, ‘আমার একাডেমিতে আরো কিছু ফুটবলার আছে যারা প্রতিভা দেখানোর অপেক্ষায় রয়েছে। ১৫০ জনের বেশি খেলোয়াড় থাকলেও মেয়ে আছে একটা। প্রেমা নামের এই মেয়েটি বিকেএসপিতে সুযোগ পেয়ে যাবে।’ মিলন হাসান আবেগ আপ্লুত। নিজে খেলোয়াড় ছিলেন। কিন্তু সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে না পারার আক্ষেপ তাকে ফুটবল থেকে সরিয়ে নিতে পারেনি। নিজের স্বপ্নের গাছটা অন্যদের মধ্যে বুনে দিতে একাডেমি গড়েছেন। পকেটের টাকা খরচ করে ফুটবলার তৈরির কারখানা বানিয়েছেন। নতুন প্রজন্ম যেন বিপথে না যায় খেয়াল রাখার জন্য আলাদা লোকবলকে দায়িত্ব দিয়েছেন। অনুশীলনের পর খেলোয়াড়দের বাসায় গিয়ে দেখে আসবে তারা পরিবারের সঙ্গে আছে কি না, সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরেছে কি না, খোঁজ নিচ্ছেন বাবা-মায়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছে কি না, গলির মোড়ে আড্ডা দেওয়া যাবে না। খেলার পর বিশ্রাম, পড়ায় ব্যস্ত থাকতে হবে। এলাকায় বাজে লোকের পাল্লায় পড়ে এখনকার তরুণ বিপথগামী হচ্ছে। নিজের অজান্তে অনেক তরুণ এলাকার রাজনীতির সঙ্গে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান মিলন হাসান বলেন, ‘কিছু লোক থাকেন যারা জমিজমা দখলের কাজে কিশোরদেরকে ব্যবহার করে। হানাহানিতে ব্যবহার হচ্ছেন। ভুল পথে গিয়ে জীবন হারানোর ঘটনা এখনকার সমাজে অহরহ। আমরা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চাই না। সন্তান হারিয়ে বাবা-মা যেন আর না কাঁদেন। ওদেরকে খেলার মাঠে রাখতে চেষ্টা করছি। রিপন শেখ এবং গুরু নজরুল পরিবারে গিয়ে আমাদের তরুণদের খোঁজ নিচ্ছেন।’ মিলন হাসান একজন ব্যবসায়ী। ঢাকায় মহাখালী ডিওএইচএসে তার অফিস। অফিস কক্ষে টেবিলের নিচে ফুটবল, গাড়িতে ফুটবল, বাসায় ফুটবল। ফুটবলের আলোচনায় বসলে অন্যদিকের কাজ থেমে যায়। বিকালে অফিস শেষ করে ফুটবল মাঠে হাজির। নিজে খেলেন। অন্যদেরকে খেলতে ডাকেন। একজন রিকশা চালক, ফুটবলের প্রতি তার ভীষণ আগ্রহ। খেলা দেখতে আসত। তাকে মাঠে নামিয়ে দিলেন মিলন হাসান। পরে তার সম্পর্কে জেনে তাকে রিকশা চালানোর কাজ থামিয়ে দিয়ে নিজের অফিসে কাজ দিলেন। শর্ত একটাই, ফুটবল খেলতে হবে। পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী হয়েও মিলন সন্ধ্যায় কিংবা রাতে ব্যাবসায়িক আড্ডায় না গিয়ে খেলার মাঠে ব্যস্ত থাকেন। মিলনের পূর্বসূরিরাও খেলায় ছিলেন। তার দাদা আব্দুল গণি শেখ ছিলেন কুস্তিগীর। বাবা উকিল উদ্দিন শেখ ছিলেন কাবাডি খেলোয়াড়। মা পরীজান নেসার ঘরে ছিল ১০ সন্তান। সবার মধ্যে খেলাধুলার প্রতিভা ছিল। ভাইবোন প্রায় সবাই স্কুলের খেলায় পুরস্কার নিয়ে ঘরে ফিরতেন। মা পরীজান নেসা যখন মারা যান তখন মিলন হাসানের বয়স ১৮ মাস, অন্যরা সবাই শিক্ষা জীবনে চলে গেলেন। ফুটবল খেলে বেড়াতেন মিলন। বিভিন্ন এলাকায় খেলার ডাক আসত। টাকার চেয়ে মিলনের শর্ত ছিল, খেলার পর গোসল করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। যেন বাসায় ফিরলে কেউ কিছু বুঝতে না পারে। বড় ভাইয়ের চাপে পড়াশোনার জন্য মিলনকে ঢাকায় আনা হলেও ফুটবল প্রেমের টানে কৌশল করে কুষ্টিয়ায় গিয়ে ভর্তি হন। ‘ইন্টার শেষ করে চিন্তা করলাম ঢাকার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে আমি ফুটবল খেলতে পারব না, ভাইবোন চাপে রাখবে। আমিও ফুটবল ছাড়া বাঁচব না। মুক্তির উপায় বের করলাম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছি জানিয়ে ঢাকা ছাড়ার সুযোগ নিলাম। ওখানে গিয়ে আমি তখন মুক্ত বলাকা, ফুটবল খেলে বেড়াচ্ছি। একই সঙ্গে কেমিস্ট্রিতে অনার্স এবং মাস্টার্স করলাম—বললেন স্বপ্নভূমি ফুটবল একাডেমির চেয়ারম্যান। ঢাকায় রূপগঞ্জে স্বপ্নভূমি প্রকল্প গড়ে তুলেছেন মিলন হাসান। সেই প্রকল্পে খেলার মাঠ রাখা হয়েছে। ‘একাডেমিটা একটু বেড়ে উঠলে আমরা লিগের খেলায় নাম লেখাব।’ এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
সারা দেশ থেকে অনূর্ধ্ব-১৩ বয়সের বাছাই হয়েছিল। ১২০ জনের মধ্যে টিকে গেছেন স্বাধীনুর রহমান জিহাদ নামের কিশোর ফুটবলার। আর সেই খবর ছড়িয়ে গেছে কুষ্টিয়া জেলায়। সেখানকার ফুটবলে নতুন উন্মাদনা ছড়িয়েছে। এত দিনের পরিশ্রম স্বার্থক হতে চলেছে। একাডেমির কোচ তরিকুল ইসলাম, আলমগীর হোসেনরা যেন আরো বেশি কাজ করার প্রেরণা পেলেন।
একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান মিলন হাসান, যে লক্ষ্য নিয়ে একাডেমি গড়ে তুলেছিলেন তার স্বার্থকতা খুঁজে পাচ্ছেন এখন। মিলন বলছিলেন, ‘আমার একাডেমিতে আরো কিছু ফুটবলার আছে যারা প্রতিভা দেখানোর অপেক্ষায় রয়েছে। ১৫০ জনের বেশি খেলোয়াড় থাকলেও মেয়ে আছে একটা। প্রেমা নামের এই মেয়েটি বিকেএসপিতে সুযোগ পেয়ে যাবে।’ মিলন হাসান আবেগ আপ্লুত। নিজে খেলোয়াড় ছিলেন। কিন্তু সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে না পারার আক্ষেপ তাকে ফুটবল থেকে সরিয়ে নিতে পারেনি। নিজের স্বপ্নের গাছটা অন্যদের মধ্যে বুনে দিতে একাডেমি গড়েছেন। পকেটের টাকা খরচ করে ফুটবলার তৈরির কারখানা বানিয়েছেন। নতুন প্রজন্ম যেন বিপথে না যায় খেয়াল রাখার জন্য আলাদা লোকবলকে দায়িত্ব দিয়েছেন। অনুশীলনের পর খেলোয়াড়দের বাসায় গিয়ে দেখে আসবে তারা পরিবারের সঙ্গে আছে কি না, সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরেছে কি না, খোঁজ নিচ্ছেন বাবা-মায়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছে কি না, গলির মোড়ে আড্ডা দেওয়া যাবে না। খেলার পর বিশ্রাম, পড়ায় ব্যস্ত থাকতে হবে। এলাকায় বাজে লোকের পাল্লায় পড়ে এখনকার তরুণ বিপথগামী হচ্ছে। নিজের অজান্তে অনেক তরুণ এলাকার রাজনীতির সঙ্গে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান মিলন হাসান বলেন, ‘কিছু লোক থাকেন যারা জমিজমা দখলের কাজে কিশোরদেরকে ব্যবহার করে। হানাহানিতে ব্যবহার হচ্ছেন। ভুল পথে গিয়ে জীবন হারানোর ঘটনা এখনকার সমাজে অহরহ। আমরা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চাই না। সন্তান হারিয়ে বাবা-মা যেন আর না কাঁদেন। ওদেরকে খেলার মাঠে রাখতে চেষ্টা করছি। রিপন শেখ এবং গুরু নজরুল পরিবারে গিয়ে আমাদের তরুণদের খোঁজ নিচ্ছেন।’ মিলন হাসান একজন ব্যবসায়ী। ঢাকায় মহাখালী ডিওএইচএসে তার অফিস। অফিস কক্ষে টেবিলের নিচে ফুটবল, গাড়িতে ফুটবল, বাসায় ফুটবল। ফুটবলের আলোচনায় বসলে অন্যদিকের কাজ থেমে যায়। বিকালে অফিস শেষ করে ফুটবল মাঠে হাজির। নিজে খেলেন। অন্যদেরকে খেলতে ডাকেন। একজন রিকশা চালক, ফুটবলের প্রতি তার ভীষণ আগ্রহ। খেলা দেখতে আসত। তাকে মাঠে নামিয়ে দিলেন মিলন হাসান। পরে তার সম্পর্কে জেনে তাকে রিকশা চালানোর কাজ থামিয়ে দিয়ে নিজের অফিসে কাজ দিলেন। শর্ত একটাই, ফুটবল খেলতে হবে। পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী হয়েও মিলন সন্ধ্যায় কিংবা রাতে ব্যাবসায়িক আড্ডায় না গিয়ে খেলার মাঠে ব্যস্ত থাকেন। মিলনের পূর্বসূরিরাও খেলায় ছিলেন। তার দাদা আব্দুল গণি শেখ ছিলেন কুস্তিগীর। বাবা উকিল উদ্দিন শেখ ছিলেন কাবাডি খেলোয়াড়। মা পরীজান নেসার ঘরে ছিল ১০ সন্তান। সবার মধ্যে খেলাধুলার প্রতিভা ছিল। ভাইবোন প্রায় সবাই স্কুলের খেলায় পুরস্কার নিয়ে ঘরে ফিরতেন। মা পরীজান নেসা যখন মারা যান তখন মিলন হাসানের বয়স ১৮ মাস, অন্যরা সবাই শিক্ষা জীবনে চলে গেলেন। ফুটবল খেলে বেড়াতেন মিলন। বিভিন্ন এলাকায় খেলার ডাক আসত। টাকার চেয়ে মিলনের শর্ত ছিল, খেলার পর গোসল করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। যেন বাসায় ফিরলে কেউ কিছু বুঝতে না পারে। বড় ভাইয়ের চাপে পড়াশোনার জন্য মিলনকে ঢাকায় আনা হলেও ফুটবল প্রেমের টানে কৌশল করে কুষ্টিয়ায় গিয়ে ভর্তি হন। ‘ইন্টার শেষ করে চিন্তা করলাম ঢাকার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে আমি ফুটবল খেলতে পারব না, ভাইবোন চাপে রাখবে। আমিও ফুটবল ছাড়া বাঁচব না। মুক্তির উপায় বের করলাম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছি জানিয়ে ঢাকা ছাড়ার সুযোগ নিলাম। ওখানে গিয়ে আমি তখন মুক্ত বলাকা, ফুটবল খেলে বেড়াচ্ছি। একই সঙ্গে কেমিস্ট্রিতে অনার্স এবং মাস্টার্স করলাম—বললেন স্বপ্নভূমি ফুটবল একাডেমির চেয়ারম্যান। ঢাকায় রূপগঞ্জে স্বপ্নভূমি প্রকল্প গড়ে তুলেছেন মিলন হাসান। সেই প্রকল্পে খেলার মাঠ রাখা হয়েছে। ‘একাডেমিটা একটু বেড়ে উঠলে আমরা লিগের খেলায় নাম লেখাব।’ এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস