খেলাধুলা

বিচারকের পদত্যাগ, ম্যারাডোনার ‘হত্যা মামলার’ ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে

ডিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুতে তাঁর চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে আদালতে বিচারকাজ চলছে। তাঁর চিকিৎসায় নিয়োজিত আট চিকিৎসাকর্মীর মধ্যে সাতজন এ মামলায় অভিযুক্ত। বিতর্কের কারণে গতকাল এই বিচারকাজ থেকে একজন গুরুত্বপূর্ণ বিচারক সরে দাঁড়িয়েছেন। এতে আলোচিত এই বিচারপ্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ শঙ্কার মুখে পড়ল। ‘ঈশ্বরের বিচারক’ নামে পরিচিতি পাওয়া বিচারক হুলিয়েতা মাকিনটাচ এই বিচারপ্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। মিনি সিরিজ বানাতে কয়েক মাসব্যাপী এই বিচারকাজ তিনি ক্যামেরায় ধারণ করিয়েছেন, এটা প্রকাশিত হওয়ার পর বিতর্ক শুরু হয়। মাকিনটাচের বিরুদ্ধে নৈতিকতা–সম্পর্কিত আইন লঙ্ঘনের অভিযোগও ওঠে। এরপর তিনি সরে দাঁড়ালেন। মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার থেকে সেরে ওঠার প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকাকালে ২০২০ সালের নভেম্বরে ৬০ বছর বয়সে মারা যান ম্যারাডোনা। অস্ত্রোপচারের পর বুয়েনস এইরেসে একটি ভাড়া করা বাড়িতে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। কৌঁসুলিরা সেখানে তাঁর চিকিৎসায় চূড়ান্ত রকম অবহেলার অভিযোগ তোলেন সাত চিকিৎসাকর্মীর বিরুদ্ধে। কয়েক দফা পুলিশের অভিযান এবং বিচারকাজ এক সপ্তাহ স্থগিত থাকার পর গতকাল ৪৭ বছর বয়সী মাকিনটাচ নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে না পারার বিষয়ে অভিযুক্ত হন। এর পাশাপাশি ‘ডিভাইন জাস্টিস’ নামে এক মিনি সিরিজে নিজের ভূমিকার জন্য ঘুষ দেওয়ার অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। আদালতে সিরিজটির একটি ট্রেলার দেখানো হয়, যেখানে দেখা যায়, হাই হিল জুতা পরে বিচারালয়ের করিডরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মাকিনটাচ, আর ফুটবল কিংবদন্তির মৃত্যুর বিষাদময় বিবরণ একে একে উঠে আসছে পর্দায়। চিত্রনাট্য অনুযায়ী, মিনি সিরিজে মাকিনটাচ ‘ম্যারাডোনার মৃত্যু এবং তাঁর জীবনের বিষাদমাখা ঘটনাগুলো’ পুনর্নির্মাণ করেছেন। আদালতকক্ষের ভেতরে অননুমোদিতভাবে মিনি সিরিজের ফুটেজ রেকর্ড করার অভিযোগ উঠেছে, যেটা আদালতের নিয়ম লঙ্ঘন করে। গতকাল আদালতের শুনানিতে অপমানসূচক কথাবার্তা, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, চিৎকার ও কান্নাকাটির ঘটনা ঘটে। তিক্ত বাগ্‌বিতণ্ডার এক পর্যায়ে কৌঁসুলি প্যাট্রিসিও ফেরারি অভিযোগ করেন, মাকিনটাচ ‘বিচারক নন, অভিনেত্রীর মতো’ আচরণ করছেন। তথ্যচিত্রের ট্রেলার চালানোর সময় বিবাদীপক্ষের আইনজীবী রডলফো বাকু চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে চিৎকার করে বিচারককে ‘আবর্জনা’ বলেন। ম্যারাডোনার মেয়ে জিয়ান্নিনা ম্যারাডোনা এ সময় তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি এবং ম্যারাডোনার সাবেক প্রেমিকা ভেরোনিকা ওজেদা এ সময় ফুঁপিয়ে কান্নাও করেন।  মাকিনটাচ মাথা নিচু করে নিজের আসনে বসে পড়েন। এরপর তিনি বলেন, এই বিচারকাজে নিয়োজিত তিন বিচারকের মধ্য থেকে তাঁর সরে দাঁড়ানো ছাড়া ‘আর কোনো পথ নেই’। মাকিনটাচের সরে দাঁড়ানো আর্জেন্টিনার বিচারব্যবস্থার জন্য বিব্রতকর। এটি বিচারকাজকে সঠিক পথ থেকে চ্যুত করতে পারে, যে বিচারে এখন গোটা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের চোখ। অবহেলার কারণে ’৮৬ বিশ্বকাপ কিংবদন্তি ম্যারাডোনার মৃত্যুর এই বিচারে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দোষী প্রমাণিত হলে ৮ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ বছর কারাবাসের সাজা হতে পারে। জিয়ান্নিনার অভিযোগ, তাঁর বাবাকে ‘অন্ধকার, কুৎসিত ও একাকী’ স্থানে রাখা হয়েছিল এবং চিকিৎসার কাজে যাঁরা নিয়োজিত ছিলেন, তাঁরা কিংবদন্তির যত্ন নেওয়ার চেয়ে অর্থের প্রতিই বেশি আগ্রহী ছিলেন। এই বিচারপ্রক্রিয়া চলমান থাকবে, নাকি থামিয়ে পুনরায় শুরু করা হবে, সে বিষয়ে আগামীকাল সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত। বাদীপক্ষের কেউ কেউ নতুন বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর দাবি তোলেন। তাঁদের যুক্তি, এই বিচারপ্রক্রিয়া বিতর্কের কারণে কলঙ্কিত হয়েছে। ম্যারাডোনার সাবেক প্রেমিকা ওজেদার আইনজীবী মারিও বাউদ্রাই বলেছেন, ‘সবাই বুঝতে পারছে, এটায় আপস করা হয়েছে। নতুন করে শুরু করাই সবচেয়ে ভালো।’ সূত্রঃ প্রথম আলো এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস