ম্যাচের ভাগ্য আসলে তো লেখা হয়ে গিয়েছিল প্রথম দুই ওভারেই।
তবুও যে গ্যালারির দর্শকেরা স্টেডিয়াম ছাড়লেন না—কারণ মূলত দুটি। জাকের আলী ও শামীম হোসেনের জুটি। যে জুটি বাংলাদেশকে শেষ পর্যন্ত এমন একটা স্কোর এনে দিল, মনে হচ্ছিল কিছু হলেও হতে পারে। ৬ উইকেটে ১৩৯—এর চেয়ে কম রান নিয়েও তো কত দল টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতেছে!
দ্বিতীয় কারণ, বাংলাদেশি দর্শকদের বড় অংশই প্রবাসী শ্রমিক। কেউ কেউ অনেক দূর থেকে এসেছেন, কষ্ট করে জমানো টাকা খরচ করে আবুধাবির আবু জায়েদ স্টেডিয়ামে ঢুকেছেন। এত কষ্ট করে এসে অল্প সময়ের খেলা দেখে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে হয়নি হয়তো কারও!
কিন্তু আজ স্টেডিয়ামে ঢুকে শুরুতে সেই দর্শকেরা যা দেখেছেন, সেটা বিভীষিকার চেয়ে কম কিছু না সম্ভবত। বরং শেষ পর্যন্ত ৩২ বল বাকি থাকতে শ্রীলঙ্কার কাছে ৬ উইকেটে হার—এই যন্ত্রণা হয়তো সেই তুলনায় কিছুটা হালকা। প্রথম ২ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে রান ০, অথচ নেই ২টি উইকেট! বাংলাদেশের জন্য এই অভিজ্ঞতা প্রথম। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথম দুই ওভারই উইকেট-মেডেন এ নিয়ে মাত্র তৃতীয়বার। সেই হতাশা তখন গ্যালারি থেকে ছড়িয়ে পড়েছে ড্রেসিংরুমেও।
নুয়ান তুষারা আর দুষ্মন্ত চামিরার ওই দুই ওভারই যেন ব্যাটসম্যানদের বেঁধে ফেলেছিল। প্রথম রান তুলতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৪ বল। এমন শুরুর পর বাংলাদেশকে দুঃস্বপ্ন থেকে টেনে তুলতে শুরু করেছিলেন অধিনায়ক লিটন দাসই।
তাঁর সঙ্গী তাওহিদ হৃদয় অবশ্য বেশি দূর যেতে পারেননি। এক বল আগেই জীবন পেলেও পরের বলেই কামিল মিশারার সরাসরি থ্রোয়ে রানআউট। হতাশায় ব্যাটে মুখ গুঁজে ছিলেন অন্য প্রান্তে থাকা লিটন। ষষ্ঠ ওভারে দাসুন শানাকার তিন বাউন্ডারিতে ১৪ রান তুলে লিটন খানিকটা স্বস্তি ফেরালেও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি সেই ঝলক। অষ্টম ওভারে হাসারাঙ্গার বলে এলবিডব্লু হয়ে ফেরেন লিটনের সঙ্গী মেহেদী হাসান। এক ওভার পর ২৬ বলে ২৮ রান করে লিটনও উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। ৫৩ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ কত দ্রুত গুটিয়ে যায় সেটাই দেখার অপেক্ষা।
তবে পুরো ২০ ওভারই খেলেছে দল। আর শেষটা হয়েছে আর কোনো উইকেট না হারিয়েই। কৃতিত্ব জাকের আলী–শামীম হোসেনের রেকর্ড জুটির। ৬১ বলে ৮৬ রান। ছয় বা এর নিচে নেমে এত বড় জুটি বাংলাদেশের আর কখনো হয়নি। তবে রানটা যে আসলে কম, সেটা বোঝা যাচ্ছিল। শুরুর মতো শেষ দিকেও শ্রীলঙ্কার বোলিং ছিল দুর্দান্ত।
শ্রীলঙ্কাকে হারাতে হলে এরপর বোলারদের অবিশ্বাস্য কিছুই করে দেখাতে হতো। সেই কিছু বলতে বাংলাদেশের বোলাররা প্রথম ৮ বলে লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের কোনো বাউন্ডারি মারতে দেননি। দ্বিতীয় ওভারেই কুশল মেন্ডিসকে ফিরিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান সেই আশাটুকু জাগিয়েছিলেন।
চাপটা আরও বাড়তে পারত, কিন্তু শরিফুলের বলে জীবন পাওয়া মিশারার ক্যাচ ফেলে দেন মেহেদী। এই ভুলের পর হতাশা শুধু বেড়েছেই। কারণ পাতুম নিশাঙ্কার সঙ্গে মিশারার ৯৫ রানের জুটিই ম্যাচের ভাগ্য ঠিক করে দেয়। ১১তম ওভারে গিয়ে মেহেদী যখন নিশাঙ্কাকে (৩৪ বলে ৫০) আউট করলেন, ততক্ষণে ম্যাচের গতিপথ পাল্টে গেছে।
অপরাজিত থেকেই ম্যাচ শেষ করেন জীবন পাওয়া মিশারা। তাঁর ৩২ বলে ৪৬ রানের ইনিংসে ৪টি ছক্কা ও ২টি চার। অন্য প্রান্তে বাংলাদেশ আরও দুটি উইকেট ফেললেও তাতে হারের ব্যবধান কমা ছাড়া আর কিছুই হয়নি।
প্রথম দুই ওভারে কোনো রানই করতে না পারার পর ম্যাচটাকে এত দূর যাওয়া, সেটাও হয়তো কম কিছু নয়। তবে এই হারে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এখন ঘোর সংশয়ে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা শুধু জিতলেই চলবে না, তাকিয়ে থাকতে হবে নানা যদি-কিন্তুর দিকেও! সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৯/৫ (শামীম ৪২*, জাকের ৪১*, লিটন ২৮; হাসারাঙ্গা ২/২৫, তুষারা ১/১৭, চামিরা ১/১৭)।
শ্রীলঙ্কা: ১৪.৪ ওভারে ১৪০/৪ (নিশাঙ্কা ৫০, মিশারা ৪৬*; মেহেদী ২/২৯, তানজিম ১/২৩, মোস্তাফিজ ১/৩৫)।
ফল: শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কামিল মিশারা। এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
তবুও যে গ্যালারির দর্শকেরা স্টেডিয়াম ছাড়লেন না—কারণ মূলত দুটি। জাকের আলী ও শামীম হোসেনের জুটি। যে জুটি বাংলাদেশকে শেষ পর্যন্ত এমন একটা স্কোর এনে দিল, মনে হচ্ছিল কিছু হলেও হতে পারে। ৬ উইকেটে ১৩৯—এর চেয়ে কম রান নিয়েও তো কত দল টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতেছে!
দ্বিতীয় কারণ, বাংলাদেশি দর্শকদের বড় অংশই প্রবাসী শ্রমিক। কেউ কেউ অনেক দূর থেকে এসেছেন, কষ্ট করে জমানো টাকা খরচ করে আবুধাবির আবু জায়েদ স্টেডিয়ামে ঢুকেছেন। এত কষ্ট করে এসে অল্প সময়ের খেলা দেখে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে হয়নি হয়তো কারও!
কিন্তু আজ স্টেডিয়ামে ঢুকে শুরুতে সেই দর্শকেরা যা দেখেছেন, সেটা বিভীষিকার চেয়ে কম কিছু না সম্ভবত। বরং শেষ পর্যন্ত ৩২ বল বাকি থাকতে শ্রীলঙ্কার কাছে ৬ উইকেটে হার—এই যন্ত্রণা হয়তো সেই তুলনায় কিছুটা হালকা। প্রথম ২ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে রান ০, অথচ নেই ২টি উইকেট! বাংলাদেশের জন্য এই অভিজ্ঞতা প্রথম। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথম দুই ওভারই উইকেট-মেডেন এ নিয়ে মাত্র তৃতীয়বার। সেই হতাশা তখন গ্যালারি থেকে ছড়িয়ে পড়েছে ড্রেসিংরুমেও।
নুয়ান তুষারা আর দুষ্মন্ত চামিরার ওই দুই ওভারই যেন ব্যাটসম্যানদের বেঁধে ফেলেছিল। প্রথম রান তুলতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৪ বল। এমন শুরুর পর বাংলাদেশকে দুঃস্বপ্ন থেকে টেনে তুলতে শুরু করেছিলেন অধিনায়ক লিটন দাসই।
তাঁর সঙ্গী তাওহিদ হৃদয় অবশ্য বেশি দূর যেতে পারেননি। এক বল আগেই জীবন পেলেও পরের বলেই কামিল মিশারার সরাসরি থ্রোয়ে রানআউট। হতাশায় ব্যাটে মুখ গুঁজে ছিলেন অন্য প্রান্তে থাকা লিটন। ষষ্ঠ ওভারে দাসুন শানাকার তিন বাউন্ডারিতে ১৪ রান তুলে লিটন খানিকটা স্বস্তি ফেরালেও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি সেই ঝলক। অষ্টম ওভারে হাসারাঙ্গার বলে এলবিডব্লু হয়ে ফেরেন লিটনের সঙ্গী মেহেদী হাসান। এক ওভার পর ২৬ বলে ২৮ রান করে লিটনও উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। ৫৩ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ কত দ্রুত গুটিয়ে যায় সেটাই দেখার অপেক্ষা।
তবে পুরো ২০ ওভারই খেলেছে দল। আর শেষটা হয়েছে আর কোনো উইকেট না হারিয়েই। কৃতিত্ব জাকের আলী–শামীম হোসেনের রেকর্ড জুটির। ৬১ বলে ৮৬ রান। ছয় বা এর নিচে নেমে এত বড় জুটি বাংলাদেশের আর কখনো হয়নি। তবে রানটা যে আসলে কম, সেটা বোঝা যাচ্ছিল। শুরুর মতো শেষ দিকেও শ্রীলঙ্কার বোলিং ছিল দুর্দান্ত।
শ্রীলঙ্কাকে হারাতে হলে এরপর বোলারদের অবিশ্বাস্য কিছুই করে দেখাতে হতো। সেই কিছু বলতে বাংলাদেশের বোলাররা প্রথম ৮ বলে লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের কোনো বাউন্ডারি মারতে দেননি। দ্বিতীয় ওভারেই কুশল মেন্ডিসকে ফিরিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান সেই আশাটুকু জাগিয়েছিলেন।
চাপটা আরও বাড়তে পারত, কিন্তু শরিফুলের বলে জীবন পাওয়া মিশারার ক্যাচ ফেলে দেন মেহেদী। এই ভুলের পর হতাশা শুধু বেড়েছেই। কারণ পাতুম নিশাঙ্কার সঙ্গে মিশারার ৯৫ রানের জুটিই ম্যাচের ভাগ্য ঠিক করে দেয়। ১১তম ওভারে গিয়ে মেহেদী যখন নিশাঙ্কাকে (৩৪ বলে ৫০) আউট করলেন, ততক্ষণে ম্যাচের গতিপথ পাল্টে গেছে।
অপরাজিত থেকেই ম্যাচ শেষ করেন জীবন পাওয়া মিশারা। তাঁর ৩২ বলে ৪৬ রানের ইনিংসে ৪টি ছক্কা ও ২টি চার। অন্য প্রান্তে বাংলাদেশ আরও দুটি উইকেট ফেললেও তাতে হারের ব্যবধান কমা ছাড়া আর কিছুই হয়নি।
প্রথম দুই ওভারে কোনো রানই করতে না পারার পর ম্যাচটাকে এত দূর যাওয়া, সেটাও হয়তো কম কিছু নয়। তবে এই হারে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এখন ঘোর সংশয়ে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা শুধু জিতলেই চলবে না, তাকিয়ে থাকতে হবে নানা যদি-কিন্তুর দিকেও! সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৯/৫ (শামীম ৪২*, জাকের ৪১*, লিটন ২৮; হাসারাঙ্গা ২/২৫, তুষারা ১/১৭, চামিরা ১/১৭)।
শ্রীলঙ্কা: ১৪.৪ ওভারে ১৪০/৪ (নিশাঙ্কা ৫০, মিশারা ৪৬*; মেহেদী ২/২৯, তানজিম ১/২৩, মোস্তাফিজ ১/৩৫)।
ফল: শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কামিল মিশারা। এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস