ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে জয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে বাংলাদেশ দল। আজ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিতলেই নিশ্চিত হবে সিরিজ জয়। তবে মেহেদী হাসান মিরাজ-নাজমুল হোসেন শান্তদের চোখ সেখানেই থেমে নেই। লক্ষ্য আরও বড় তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ।
বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেটে সম্প্রতি কঠিন সময় পার করেছে। গত চারটি ওয়ানডে সিরিজেই হারের মুখ দেখেছে টাইগাররা। সেই হারগুলো দলের আত্মবিশ্বাসে বড় ধাক্কা দিয়েছে। ধাক্কা সামলে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় পাওয়া ছিল সময়ের দাবি। প্রথম ম্যাচে ৭৪ রানের জয় তাই শুধু একটি ম্যাচের জয় নয়, আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার প্রতীকও বটে। আর সেই আত্মবিশ্বাসের জোরেই আজ মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দল নামবে সিরিজ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে।
কিন্তু শুধু সিরিজ জয়ই নয়, বড় কিছু ভাবছে বাংলাদেশ দল। আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ রয়েছে দশ নম্বরে, ৭৪ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে। এক ধাপ ওপরে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের রেটিং ৮০। এই দুই দলই এখন সরাসরি বিশ্বকাপে জায়গা পাওয়ার দৌড়ে রয়েছে। ২০২৭ সালের মার্চ মাসে আইসিসি র্যাংকিংয়ের শীর্ষ ৯ দলই পাবে সরাসরি বিশ্বকাপের টিকিট। বাকি দলগুলোকে যেতে হবে কঠিন বাছাইপর্বে। বাংলাদেশের চেয়ে নিচে থাকা জিম্বাবুয়ে যদিও ইতিমধ্যে বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে সরাসরি জায়গা পেয়েছে। ফলে র্যাংকিংয়ের হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান কার্যত আরও নাজুক।
তাই টাইগারদের লক্ষ্য এখন নয় নম্বরে উঠে আসা। আর সেই পথে প্রথম ধাপ হতে পারে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ। যদি বাংলাদেশ এই সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জয় পায়, তবে তারা এক ধাপ ওপরে উঠে নবম স্থানে জায়গা করে নেবে। বিপরীতে একটি ম্যাচ হারলেই থাকতে হবে আগের অবস্থানেই-দশ নম্বরে।
এই বাস্তবতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করা শুধুই মর্যাদার নয়, প্রয়োজনের বিষয়ও। এদিকে ২০২৭ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের হাতে অন্তত ২৩টি ওয়ানডে ম্যাচ বাকি আছে। যদি ভারতের বিপক্ষে স্থগিত হওয়া সিরিজটি অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২৬। এর বেশির ভাগই হবে ঘরের মাঠে-যেখানে বাংলাদেশ সব সময়ই তুলনামূলকভাবে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
সামনে বাংলাদেশের ঘরের মাঠে তিনটি বড় সিরিজ অপেক্ষা করছে-পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। প্রতিটি সিরিজেই থাকবে তিনটি করে ওয়ানডে ম্যাচ। এছাড়া জিম্বাবুয়ের সফরে ৫টি ওয়ানডে এবং আয়ারল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আরও ৬টি ম্যাচ রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বকাপের আগে অতিরিক্ত কয়েকটি প্রস্তুতি ম্যাচ আয়োজনের সুযোগও রয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের হাতে।
সব মিলিয়ে ঘরের মাঠে ভালো পারফরম্যান্স করলে র্যাংকিংয়ে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সম্ভব বাংলাদেশের জন্য। তাই দল এখন শুধু একটি সিরিজ নয়, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নামছে। প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং বিপর্যয়ের পরও বোলাররা যে দারুণভাবে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছে, সেটিই প্রমাণ করেছে-দলটি এখন জেতার মানসিকতা ফিরে পাচ্ছে।
কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। এই দলটি সব সময়ই হঠাৎ করে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। তাদের দলে আছে পাওয়ার হিটার, দ্রুত উইকেট নেওয়ার মতো বোলারও। এই সিরিজের গুরুত্ব শুধু র্যাংকিং বা বিশ্বকাপের সমীকরণে নয়, আত্মবিশ্বাসের জায়গাটাতেও। চার সিরিজ পর জয় পেলে মনস্তাত্ত্বিক বাধা কাটিয়ে উঠতে পারবে বাংলাদেশ। তাই আজকের ম্যাচে জয় মানে কেবল সিরিজ নিশ্চিত নয়-বরং বিশ্বকাপের পথে বড় এক পদক্ষেপ এবং নতুন করে শুরু করার অঙ্গীকার। তখন টাইগারদের সামনে সুযোগ তৈরি হবে নিজেদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস