খেলাধুলা

বাংলা চ্যানেল জয় করলেন ব্রিটিশ সাংবাদিক বেকি

‘এলেন, দেখলেন, জয় করলেন’—এমনটাই বলা যায় ব্রিটিশ সাংবাদিক বেকি হর্সব্রো সম্পর্কে। তিনিই প্রথম ব্রিটিশ, যিনি বাংলা চ্যানেল জয় করলেন। অবশ্য এপির সাংবাদিক বেকি শুধু নিজের নামের পাশে বাংলা চ্যানেল জয়ের রেকর্ড যোগ হবে এর জন্যই নয়, আরো কিছু মহৎ উদ্দেশ্যও ছিল তাঁর।

বাংলাদেশে  প্রতিদিন পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার দারুণভাবে ব্যথিত করে বেকিকে। ইন্টারনেট ঘেঁটে বাংলাদেশের পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা দেখে তিনি অবাক হন। বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে  ৫০ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়, যেখানে যুক্তরাজ্যে বছরে মারা যায় মাত্র ১৫ জন।

শিশুমৃত্যুর এ ভয়াবহতা নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে বেকি ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাংলা চ্যানেল সাঁতরে পার হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন। এ ছাড়া তিনি বাংলা চ্যানেলকে ব্রিটিশদের কাছে সুপরিচিত করে তুলতে চান। পাশাপাশি বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে ‘ক্রীড়াপ্রেমী’ দেশ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে চান। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বেকি বলেছিলেন, ‘১৯৫৮ সালে ব্রজেন দাশ একজন বাংলাদেশি হিসেবে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেছিলেন। আর আমি প্রথম ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে বাংলা চ্যানেল অতিক্রম করতে এসেছি। আমি খুব উজ্জীবিত।’

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী মুসা ইব্রাহীম, গবেষণা সংস্থা সিআইপিআরবির ড. জাহাঙ্গীর, আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এপির ঢাকা ব্যুরোপ্রধান জুলহাস আলম, বেলী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওয়াহিদুজ্জামান।

এ প্রসঙ্গে বেকির সহকর্মী জুলহাস আলম বলেন, ‘গত জুলাই মাসে সাঁতার প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত কিছু প্রকল্প দেখতে বাংলাদেশে এসেছিলেন। এসব প্রকল্প দেখে তিনি সত্যিই অভিভূত। তাই ফিরে যাওয়ার পর থেকেই বলছিলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে তিনি আবার আসতে চান এবং সেটি সত্যি হতে চলেছে।’

সরকারিভাবে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার কমানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মুসা ইব্রাহীম মনে করিয়ে দেন, কয়েক দিন আগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, স্কুল পর্যায়ে শিশুদের সাঁতার শেখানো হবে। সরকারি পর্যায়ে এটা করতে পারলে যথেষ্ট সুফল বয়ে আনবে।

আজ রোববার সকাল ৮টায়  টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের ১৬ কিলোমিটারের পথ পাড়ি দেন বেকি। এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে বেকির সময় লেগেছে চার ঘণ্টা ৪৫ মিনিট।

বেকি ফ্রিস্টাইলে সাঁতার কাটেন। তাঁকে সহায়তা দিতে থাকে দুটি নৌযান। দুটি নৌযান থাকা  প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে মুসা ইব্রাহীম বলেছিলেন, ‘অনেক সময় সাঁতারু পথ ভুলে গভীর সমুদ্রে কিংবা মিয়ানমারের দিকে চলে যান। গাইড বোট সাঁতারুকে সঠিক পথ দেখাবে। তা ছাড়া সমুদ্রে সাঁতারের প্রধান দুটো সমস্যা জেলিফিশের উপদ্রব ও লবণাক্ত পানি। আরেকটি নৌযানে ফিজিওথেরাপিস্টসহ অন্যরা থাকবেন।’

বেকি সফলভাবে সাঁতার সম্পন্ন করেছেন এবং আগামীতে তাঁর যুক্তরাজ্যের সাঁতারপ্রেমী বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে আবার বাংলাদেশে আসতে চান। বাংলাদেশ বেকির জন্য একটি চমকপ্রদ মুহূর্ত।

এর আগে বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী মুসা ইব্রাহীম (ছয় ঘণ্টা ১৫ মিনিট), ভারতের ইংলিশ চ্যানেলজয়ী সাঁতারু রিতু কেডিয়া (তিন ঘণ্টা ৪০ মিনিট), ১০ বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়া লিপটন সরকার (ছয় ঘণ্টা দুই মিনিট), গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের সাঁতারের প্রশিক্ষক ফজলুল কবির সিনা (পাঁচ ঘণ্টা ৩০ মিনিট), চারবার পাড়ি দেওয়া বাংলাদেশ টেলিভিশনের চিত্রগ্রাহক মনিরুজ্জামান (ছয় ঘণ্টা ১০ মিনিট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাদাত বাশার (পাঁচ ঘণ্টা) ও সাবেক শিক্ষার্থী শামসুজ্জামান আরাফাত (চার ঘণ্টা ৪০ মিনিট) এবং এআইইউবির ফ্যাকাল্টি পারভেজ রশিদ (পাঁচ ঘণ্টা ৪০ মিনিট) বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছিলেন।

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত বাংলা চ্যানেল সাঁতার প্রতিযোগিতা ২০০৬ সাল থেকে শুরু হয়েছিল।


এলএবাংলাটাইমস/এস/এলআরটি