সিলেট

চৌহাট্টা-আম্বরখানা সড়ক বন্ধে বিড়ম্বনায় পধচারী

সিলেট নগরীর চৌহাট্টা থেকে আম্বরখানা সড়ক বন্ধ রয়েছে অনেকদিন। শুরুতে কালভার্ট নির্মানের জন্য রাস্তার একদিক বন্ধ রেখে অন্যদিক খোলা রাখা হয়। এতে একদিকে কাজ চললে অপরদিকে যানবাহন চলাচল করতে পারতো। কিন্তু বর্তমানে একেবারে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তাটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ থাকা রাস্তার একদিকে চলছে বড়ো ড্রেনের কাজ, ফেলে রাখা হয়েছে মাটি, নির্মাণ সামগ্রী। বাকি অংশ ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাসের দখলে। ব্যারিকেডের সামনে সব সময় লেগে আছে রিকশা, সিএনজি আর মানুষের জটলা। অত্র এলাকাসহ আশপাশের রাস্তাঘাটে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট। ব্যবসা বাণিজ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা। রাস্তা বন্ধ থাকায় ভাড়ায় চালিত সিএনজি নয়াসড়ক দিয়ে লোহার পাড়া হয়ে আম্বরখানায় যায়। তাই বেড়েছে ভাড়াও। তাছাড়া আশপাশের বাসাবাড়িতে অবস্থানরতদের পোহাতে হচ্ছে বেশি দুর্ভোগ। কারণ এই রাস্তা ব্যবহারকারীরা বিকল্প রাস্তায় কষ্ট করে হলেও যাওয়া আসা করতে পারেন কিন্তু যাদের বাসা এই রাস্তায় তাদের কোনো বিকল্প নেই। রাস্তা বন্ধ থাকলেও উঁচু ফুটপাত খালি আছে। এই সুযোগে ব্যারিকেডের ফাঁক দিয়ে কিছু সিএনজি, রিকশা ও মোটরসাইকেল আরোহী ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। এ নিয়ে দোকানদারদের সাথে তাদের বাকবিতন্ডাও লক্ষ করা গেছে। পুরো রাস্তা বন্ধ করার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। ঈদের আগে তা সমাধানের কোনো লক্ষণ তারা দেখছেন না বলে জানান। ফলে ঈদের আগে রাস্তা খোলা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিন দেখা যায় নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্টে ব্যরিকেডের সামনে রিকশা, সিএনজি ও মোটরসাইকেলের জটলা। ব্যারিকেডের ভেতর রাস্তার পূর্বদিকে ফার্মেসির সামনে ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের কিছু মোটরসাইকেল পার্ক করা। পশ্চিম দিকে মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডের মাইক্রোবাস সারি বন্ধ ভাবে পুরো রাস্তাজুড়ে পার্ক করা। চালক হেলপাররা পার্ক করা গাড়ির দরজা খুলে আয়েশী ভঙ্গিতে বিশ্রাম করছেন। একটু পরে মাটির উঁচু ঢিবি এবং নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ট্রাক পার্ক করা। রাস্তায় বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী রাখা। এখানেই রাস্তার উপর নির্মাণের রড প্রস্তুত করা হচ্ছে। সিভিল সার্জন অফিসের পর থেকেই বিশাল গর্ত। এখানে রড সিমেন্ট দিয়ে করা হচ্ছে পাকার কাজ। বিপরীত দিকে ফুটপাত দিয়ে দু একটি সিএনজি, রিকশা এবং মোটরসাইকেল পার হয়ে যাচ্ছে। এতে মাঝেমধ্যেই পথচারী ও আশপাশের দোকানের গায়ে লাগছে ধাক্কা। এসময় দোকানদারদের এসব সিএনজি ও রিকশাওয়ার সাথে বাকবিতন্ডা করতে দেখা যায়। তারা ফুটপাত দিয়ে আসতে তাদের বাধা দেন। ভুক্তভোগীরা জানান এমনিতেই একসাথে অনেকগুলো প্রধান সড়কে কাজ শুরু করায় বিড়ম্বনা দেখা দিয়েছে। রাস্তার একপাশে কাজ করে অন্যপাশে যান চলাচল রাখায় কিছুটা কাজ চালিয়ে নেওয়া যেতো কিন্তু এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা কোনো সুন্দর পরিকল্পনা নয়। মনে হচ্ছে নগর কর্তৃপক্ষ কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই যেন হুটহাট করে এগুচ্ছে। ঈদের আগে রোজায় তাদের এই কাজ পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। একটি কুরিয়ার সার্ভিসে পণ্য পরিবহনের কাজ করেন ভ্যান চালক রমিজ মিয়া। তিনি বলেন, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পণ্য আসে। আম্বরখানা এলাকায় পণ্য ডেলিভারি দিতে আমাদের খুব কষ্ট হয়ে। অনেকটা পথ ঘুরে পণ্য এতে আমাদের শ্রম ও সময় দুইটাই বেশি ব্যয় হয়। তিনি বলেন যেহেতু আমি বেতনভুক্ত কাজ করি তাই বাড়তি এই পরিশ্রমের জন্য আলাদা কোনো ভাড়া দাবি করার সুযোগ নেই। আবার কুরিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ মাল থাকায় ভ্যান যেকোনো জায়গায় রেখেও মাল ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব নয়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক রফিক আহমেদ বলেন, চৌহাট্টা থেকে আম্বরখানা সড়কটি পুরোপুরি বন্ধ করে চলছে সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ। পুরো সড়ক বন্ধ রেখে কাজ করার ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। শুধু এই সড়ক নয়, নগরের প্রধান প্রধান সড়কে একযোগে কাজ শুরু করার ফলে বেড়েছে যানজট সমস্যা। যেহেতু নগরের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে সংস্কার কাজ চলছে, বিকল্প সড়কে যানবাহনের চাপ স্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। যানবাহনের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্টদের কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না। আবার যে কাজ চলছে তাও দেখা যাচ্ছে হেলেদুলে শ্রমিকরা কাজ করছেন। এভাবে কাজ করতে থাকলে কবে নাগাদ তা শেষ হবে কে জানে। এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জানান, ১৫ রোজার মধ্যে সড়কের একদিক খুলে দেওয়া হবে। এজন্য কাজে দায়িত্বরতদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস