সিলেট

ব্যাপক শিলা বৃষ্টি ও মৌসুমী ঝড়ের তান্ডব

 সিলেটের ওপর দিয়ে গত রোববার রাতে বয়ে যাওয়া মৌসুমী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের প্রাচীনতম চা বাগান মালনীছড়া ও হিলুয়াছড়া। বিশাল আকারের শিলাবৃষ্টি ও ঝড় চায়ের কুঁড়িতে অঘাত করায় চা উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। ১ এপ্রিল মালনীছড়া চা বাগান ঘুরে দেখা গেছে, ব্যাপক শিলা বৃষ্টি ও মৌসুমী ঝড়ের তান্ডব সর্বত্র বিরাজমান। বড় বড় শিলার আঘাতে অনেক স্থানে মাটিতে নুয়ে পড়েছে চা গাছ। বাগানে বসবাসরত চা শ্রমিকদের বাসা বাড়িসহ অধিকাংশ স্থাপনায় টিনের চালা ফুটো ও ঝাঝরা হয়ে গেছে। জানালার কাঁচের গ্লাস ও গাড়ির গ্লাসও ভেঙ্গে যায় শিলাবৃষ্টিতে। বড় বড় শিলার আঘাতে প্রায় দশজন চা শ্রমিক আহত হয়েছেন। গুরুতর আহতদের মধ্যে কয়েকজন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। শিলাবৃষ্টিতে প্রাচীনতম চা বাগান মালনীছড়ার শাটিং রুম, স্টোর রুম, সিটিসি রুম, পাওয়ার হাউজ, ট্রাপ হাউজ (কাঁচা পাতা রাখার স্থান) এর ওপরের সমস্ত টিন ফুটো হয়ে গেছে। একটুখানি বৃষ্টি হলেই মেজেতে গড়িয়ে পড়ছে পানি। এতে ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে বাগানের এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। টিন ফুটো হয়ে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়ছে ৬২৫ কেভি জেনারেটারের ওপর। এ অবস্থায় মালনীছড়া চা বাগানের সকল কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। শিলা বৃষ্টির আঘাতে  প্রাইভেট কারের সামনের গ্লাস ভেঙ্গে যায়। মালনীছড়া বাগানের ব্যবস্থাপক মো. আজম আলী জানান, গত রোববার রাতে বয়ে যাওয়া এ প্রাকৃতিক তান্ডবে প্রায় ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাজারজাত করণের ১১ হাজার কেজির চায়ের একটি চালান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে শিলা বৃষ্টিতে। এতেই প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া, চা গাছে শিলা বৃষ্টি পড়ায় বিভিন্ন ছত্রাক রোগে আক্রান্ত হয়ে চা উৎপাদনকে ব্যাহত করবে বলেও জানান তিনি। ওই বাগান কর্মকর্তা বলেন, শিলা বৃষ্টি ও ঝড়ের তান্ডবে শ্রমিকদের অধিকাংশ বসত বাড়ি ক্ষতির সম্মুখীন। বসবাস উপযোগী করতে এসব বাড়িতে নতুন করে টিন লাগাতে হবে। বাগান এলাকার বিভিন্ন বস্তির চা শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে তারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন। বিশেষ করে বাংলা পাড়া লাইনের রেশমী সবর, বিথন বড়াইক, অফিস পাড়ার শিউলি, সুনীল বাউড়ি, শাহীন, মাঝলাইনের সারি বাউড়ি, মালা বাউড়ি, লাল বাবু, অভয় উড়াং, চিতল মাটির সন্ধ্যা রানী, সাজ্জাদ, শহীদ, নতুন পাড়ার জুয়েল, সাইফুল রফিক, সানি বাউড়িসহ অসংখ্য শ্রমিকের ঘরের চাল শিলা বৃষ্টিতে ফুটো হয়ে গেছে। ভুক্তভোগী শ্রমিকরা জানান, এমন শিলাবৃষ্টি আমরা এর আগে কখনো দেখিনি। বৃষ্টির পর তুলে আনা একেকটি শিলা অনেক বড় ছিল। প্রায় ৫শ গ্রাম হতে পারে। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে তারা আতংকিত হয়ে পড়েন বলেও জানান। মালনীছড়া চা বাগান সংশ্লিষ্টরা জানান, গত রোববারের ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কবলে পড়ে কয়েকজন শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন নিরঞ্জন, লাল বাবু, মিঠুন ও বাদশাহ। তারা গতকাল সোমবার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। বাকীরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানানো হয়। গত রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শুরু হয় বজ্রপাতও। এর কিছু সময় পর শুরু হয় বৃষ্টি। সঙ্গে পড়তে থাকে ব্যাপক শিলা। প্রায় ১০-১৫ মিনিট স্থায়ী ছিল শিলাবৃষ্টি।