সিলেট

সিলেটের বড়লেখায় পাহাড়-টিলা কাটার মহোৎসব চলছে

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় অবাধে চলছে পাহাড়-টিলা কাটার মহোৎসব। ৫ জুন রোববার বিশ্ব পরিবেশ দিবসেও পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়-টিলা কাটা অবাধে চললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছে নিরব। পাহাড়-টিলা কাটা বন্ধে প্রশাসনের উদ্যোগ না থাকায় ‘পাহাড়-টিলা খেকোদের’ আগ্রাসন দিন দিন বাড়ছে। এতে করে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে বন্যপ্রাণীরা হারাচ্ছে আবাসস্থল। যার কারণে অনেক সময় বাঘ, বানরসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী লোকালয়ে চলে আসে এবং প্রাণ হারায়। তবে মাঝে মধ্যে পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে প্রশাসনের টনক নড়ে কিছু দিন বন্ধ থাকে। এর পরেই আবার শুরু হয়ে যায় পাহাড় কাটার মহোৎসব।
প্রতিবছর পরিবেশ দিবস আসলেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক ঘণ্টার শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা ছাড়া পরিবেশ রক্ষাসংক্রান্ত আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। যার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনো পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতার সৃষ্টি হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার পাহাড়ি এলাকা সদর ইউনিয়নের ডিমাই, কেছরিগুল, গঙ্গারজল, দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের কাশেমনগর, হাকায়িতি, পূর্ব হাতলিয়া, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপির বোবারথল, মোহাম্মদনগর, ছোটলেখা, ঘোলসা, চন্ডিনগর, মুড়াউল, অফিস বাজার, উত্তর শাহবাজপুর ইউপির বড়-আইল, নান্দুয়া, পূর্ব বানীকোনা, শ্রীদরপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রকাশ্যে পাহাড় টিলা কেটে এসব মাটি ইটভাটা ও ধানী জমি ভরাট করে বাড়ি-ঘর তৈরি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এসব পাহাড়-টিলার মাটি কাটতে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় শতাধিক ট্রাক্টর। এদের অধিকাংশেরই কাগজপত্র বিহীন। ট্রাক্টরের সাহায্যে মাটি বহন করায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক ও উপজেলা সদরের শহরের প্রধান সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসেও পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়-টিলা কাটা অবাধে চললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছে নিরব।
সরেজমিন উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের নান্দুয়া এলাকায় গেলে সদ্য কেটে নেওয়া পাহাড়ের দৃশ্য দেখা যায়। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এলাকার বাসিন্দা বশির আলীর ছেলে কমর উদ্দিন পাহাড় কাটাচ্ছেন। একই ইউনিয়নের বাণীকোনা গ্রামের বাসিন্দা আং নূরের বাড়ি থেকে পাহাড় কেটে মাটি নেওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে।
দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের বড়লেখা-শাহবাজপুর সিএন্ডবি সড়কের পূর্ব পাশের চন্ডিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় লাগোয়া ফসলি জমি ভরাট করা হচ্ছে পাহাড়ি টিলার মাটি দিয়ে। মাটি ভরাট করাচ্ছেন জমির মালিক সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রবাসী লালা মিয়া।
মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত স্থানীয় ইউপি সদস্যের ছেলে ও ঠিকাদার আব্দুস শুক্কুর বলেন, ‘আমরা তো মজুর মানুষ। মাটিতো অনেক জায়গায় মাটি কাটা চলের। পাহাড়ি-টিলার মাটি কেটে ফসলি জমি ভরাটের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অনুমতি নিয়েছেন কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘কারো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমার জানা নেই।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন, ‘পাহাড় টিলা কাটার বিষয়ে ইতিমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর বরাবরে ১০টি মামলা প্রেরণ করা হয়েছে। যথারীতি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাহাড়-টিলা কাটা প্রতিরোধে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। তবে পাহাড়-টিলা কাটা বন্ধে প্রশাসনকে সহযোগীতাসহ জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে।’