মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগ বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। এটি তার নির্বাচনী প্রচারণার একটি প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল এবং দীর্ঘদিন ধরে কিছু রক্ষণশীলদের প্রত্যাশিত লক্ষ্যও বটে। শিক্ষা বিভাগকে "ব্যর্থতার প্রতীক" আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, এ সংস্থার নিয়ন্ত্রণে থাকা অর্থ প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেছেন, "আমরা যত দ্রুত সম্ভব এটি বন্ধ করে দেব," তবে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, পুরোপুরি বন্ধ করতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে।
এই সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই বিচারিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষা বিভাগের কর্মী ছাঁটাই এবং বন্ধের পরিকল্পনা নিয়ে বিরোধিতা শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ শিশু বিনামূল্যের সরকারি স্কুলে পড়ে, যা স্থানীয় প্রশাসনের অধীনে পরিচালিত হয়। শিক্ষা বিভাগের মূল ভূমিকা শিক্ষা ঋণ প্রদান এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা। তবে ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন যে, এ সংস্থা জাতিগত, যৌন এবং রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের "ব্রেনওয়াশ" করছে।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করলেও শিক্ষার্থীদের র্যাংকিং নিচের দিকে। ইউনেস্কো ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিস্টিকস অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র জিডিপির ৫.৪% শিক্ষা খাতে ব্যয় করে, যা অনেক দেশের চেয়ে বেশি হলেও শীর্ষে নয়। শিক্ষা বিভাগের বাজেট ২০২৩ সালে ছিল ২৩৮ বিলিয়ন ডলার, যা মোট সরকারি বাজেটের ২% এরও কম।
ট্রাম্পের আদেশে শিক্ষা বিভাগ ধাপে ধাপে বন্ধ করার নির্দেশনা রয়েছে। তবে এতে স্পষ্ট উল্লেখ নেই যে কোন কোন কর্মসূচি বাতিল করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রী লিন্ডা ম্যাকমোহন শিক্ষা বিভাগের কর্মীদের এক নোটিশে লিখেছেন, "এটি আমাদের শেষ মিশন"।
লুইজিয়ানা সিনেটর বিল ক্যাসিডি শিক্ষা বিভাগ বন্ধ করতে একটি আইন প্রস্তাব করেছেন। তবে কংগ্রেসে এটি পাস করানো কঠিন হবে, কারণ ফেডারেল সংস্থা বন্ধ করতে ৬০ ভোট প্রয়োজন। বর্তমানে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা মাত্র ৫৩-৪৭।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষক ইউনিয়নগুলো কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আমেরিকান ফেডারেশন অব টিচার্স এক বিবৃতিতে বলেছে, "কেউ আমলাতন্ত্র পছন্দ করে না, তবে ‘ওক সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ চালিয়ে দরিদ্র ও প্রতিবন্ধী শিশুদের আঘাত করা যাবে না।"
যদিও শিক্ষা বিভাগ পুরোপুরি বন্ধ নাও হতে পারে, তবে ট্রাম্প প্রশাসন এর বাজেট ও কর্মী সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। ইতিমধ্যে ২,১০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের নোটিশ পেয়েছেন। সরকারি খরচ কমানোর এই প্রচেষ্টা ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (Doge) তত্ত্বাবধান করছে, যার প্রধান ইলন মাস্ক।
ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা সফল হলে, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থা আরও বেশি রাজ্য ও স্থানীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে এবং ফেডারেল শিক্ষা বিভাগের ভূমিকা সীমিত হয়ে পড়বে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম