আমেরিকা

অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সবাইকে বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশনের নির্দেশ

এক ফেডারেল বিচারক বৃহস্পতিবার ট্রাম্প প্রশাসনকে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থানরত সকল ব্যক্তিকে বাধ্যতামূলকভাবে রেজিস্ট্রেশনের নির্দেশ কার্যকর করার অনুমতি দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত অভিবাসীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল বিচারক ট্রেভর নীল ম্যাকফ্যাডেন – যিনি ট্রাম্পের নিয়োগপ্রাপ্ত – এই রুলিংয়ে বলেন, এই নিয়ম আগে থেকেই অস্তিত্বশীল ছিল এবং এটি বাস্তবায়ন করতেই প্রশাসন কাজ করছে। মামলার মূল যুক্তির জায়গায় না গিয়ে তিনি শুধুমাত্র মামলা করার অধিকার (standing) না থাকার কারণে বাদী পক্ষের আবেদন খারিজ করেন। ফলে, রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম শুক্রবার থেকেই কার্যকর হচ্ছে। রায় ঘোষণার পর মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ জানায়, যারা ইতোমধ্যে ৩০ দিন বা তার বেশি সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন, তাদের রেজিস্ট্রেশনের শেষ সময় শুক্রবার। এরপর থেকে নিয়মটি সর্বোচ্চ কঠোরতায় প্রয়োগ করা হবে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সচিব ক্রিস্টি নোএম বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং আমি অবৈধ অভিবাসীদের স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছি—এখনই দেশ ছাড়ুন। এখনই চলে গেলে ভবিষ্যতে ফিরে এসে আমেরিকান স্বপ্ন উপভোগ করার সুযোগ পেতে পারেন।” তিনি আরও বলেন, “আমরা আমাদের সব অভিবাসন আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করব। দেশের নিরাপত্তা ও নাগরিকদের সুরক্ষার স্বার্থে কে এখানে আছেন, তা জানা আমাদের জন্য জরুরি।” কে এই নিয়মের আওতায় পড়বেন? ১৪ বছর বা তার বেশি বয়সী সব অবৈধ অভিবাসীকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তাদেরকে আঙুলের ছাপ ও ঠিকানা দিতে হবে। ১৪ বছরের নিচে কেউ থাকলে, তার বাবা-মাকে রেজিস্ট্রেশনের দায়িত্ব নিতে হবে। এই নিয়ম এমনকি দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা কানাডীয়দেরও প্রযোজ্য, বিশেষ করে যেসব ‘স্নোবার্ড’ (শীতকালে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী) নাগরিক প্রতি বছর কয়েক মাস যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। এই সিদ্ধান্তের পেছনে ঐতিহাসিক পটভূমি যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক ছাড়া বসবাসকারী সকলকে রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম ১৯৪০ সালের Alien Registration Act থেকে শুরু হয়। ১৯৫২ সালের Immigration and Nationality Act এর মাধ্যমে এই নিয়ম আরও বিস্তৃত হয়। তবে এই আইন খুব কম ক্ষেত্রেই কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। ৯/১১ এর পর ২৫টি দেশের মুসলিম পুরুষদের জন্য একটি বিশেষ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু হয়েছিল, যা অনেককে ডিপোর্টেশনের মুখে ফেলে দিয়েছিল। যদিও কোনো সন্ত্রাসবাদের প্রমাণ মেলেনি। বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন ল’ সেন্টারের উপপরিচালক নিকোলাস এসপিরিচু বলেন, “এই রায় হতাশাজনক। এটি মানুষকে এক ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্তের মুখোমুখি করছে—তারা রেজিস্টার করে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দেবে, নাকি অপরাধী হয়ে গোপনে থাকবে।” আইনজীবীরা বলছেন, প্রশাসন এই নিয়ম চাপিয়ে দিয়েছে জনমত যাচাই না করেই এবং এর মাধ্যমে ট্রাম্পের গণবহিষ্কারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকার ইতোমধ্যেই ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসের ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার নির্দেশ দিয়েছে। যাঁরা নিয়ম মানবেন না, তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা, মামলা ও জেল—সবই হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই নিয়ম বাস্তবায়ন অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় তৈরি করবে এবং অনেককেই বাধ্য করবে “ছায়ার জগতে” বসবাস করতে। এলএবাংলাটাইমস/ওএম